চার হত্যা মামলায় জামিন পেলেন আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী তামান্না
Published: 13th, December 2025 GMT
চারটি হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন চট্টগ্রামের আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী শারমিন তামান্না। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হাইকোর্ট থেকে তাঁরা জামিন পান। তবে ওই আদেশ চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে চট্টগ্রামের আদালতে পৌঁছালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
বর্তমানে সাজ্জাদ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং তাঁর স্ত্রী তামান্না ফেনী জেলা কারাগারে রয়েছেন। গত মাসে তাঁদের চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ওই দুই কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চারটি মামলায় সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আদেশগুলো চট্টগ্রাম আদালতে আসার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা থাকায় আপাতত কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।
রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী আরও বলেন, এ জামিন আদেশ স্থগিতের বিষয়ে হাইকোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি বাকি মামলাগুলোয় যাতে জামিন না পান, সে বিষয়েও রাষ্ট্রপক্ষ সতর্ক থাকবে।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, সাজ্জাদ ১০টি হত্যাসহ মোট ১৯টি মামলার আসামি। তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধেও একাধিক হত্যাসহ আটটি মামলা রয়েছে।
গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছুড়ে’ সাজ্জাদকে জামিনে মুক্ত করার কথা উল্লেখ করে তামান্নার একটি বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাঁকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আরও পড়ুনখুন-অস্ত্রবাজিতে রয়েছে তিন স্তরের সন্ত্রাসী, নির্দেশ আসে বিদেশ থেকে১২ ডিসেম্বর ২০২৫আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানার দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাজ্জাদ ও তামান্নাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একই দিন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ পাঁচলাইশ থানার ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায় এ দম্পতিসহ তিনজনকে জামিন দেন। এক সপ্তাহ পর, ২২ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চ পাঁচলাইশ থানার দোকান কর্মচারী মো.
আফতাব হত্যা মামলাটি ছাড়া বাকি তিনটি মামলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা। সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় আদালত তাঁদের গ্রেপ্তার দেখান। চারটি মামলাতেই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সাজ্জাদ কারাগারে থাকলেও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর তৎপরতা থেমে নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাহিনীর অন্তত অর্ধশত সদস্য খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাজ্জাদের অনুপস্থিতিতে মোহাম্মদ রায়হান, মোবারক হোসেন ইমন, বোরহান উদ্দিন কাদের ও নাজিম বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ নভেম্বর বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগ চলাকালে একটি গলিতে গুলির ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে নিহত হন সরোয়ার হোসেন বাবলা নামের এক সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরোয়ারকে গুলি করা হয়। তবে ভিড়ের মধ্যে গুলি চালানো শুটারকে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আরও পড়ুনএকসময় ছিলেন এক গুরুর শিষ্য, দ্বন্দ্বে জড়িয়ে খুন দুজনই০৬ নভেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সন ত র স
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে এবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলা ও হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত থেকে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ ও কর্মসূচি চলছে।
যবিপ্রবিতে শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের আবাসিক হল ও প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে শেষ হয়। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে দোয়া ও সম্মিলিত মুনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘হাদির ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল আলিম সামি বলেন, “হাদির ওপর হামলা পরিকল্পিত এবং তার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার চেষ্টা।” দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাহফুজ রাসেল বলেন, “এই হামলা শুধু হাদির ওপর নয়, বরং পুরো জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের ওপর আঘাত।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দিন রাতে মূল ফটকে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ইনকিলাব মঞ্চ কুবি শাখার আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, “জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের টার্গেট করেই এই হামলা চালানো হয়েছে।” আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বহিষ্কার দাবি করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতের বেলা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্বজিৎ চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘তুমি কে? আমি কে? ওসমান হাদি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা বলেন, “মতাদর্শ ভিন্ন হলেও এই হামলার বিরুদ্ধে সবাই এক।” প্রাণীবিদ্যা বিভাগের জান্নাতুল উর্মি তারিন বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের দাবি জানান। অন্য শিক্ষার্থীরা দেশের স্থিতিশীলতা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
এছাড়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব এক বিবৃতিতে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য জুলাই আন্দোলনের চেতনা নস্যাৎ করা, নির্বাচনী পরিবেশ অস্থির করা এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয় নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান বিন হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঢাকা/ইমদাদুল/এমদাদুল/লিমন/জান্নাত