প্রত্যাশা কি মেটাতে পারছেন রাজনীতিবিদেরা
Published: 5th, August 2025 GMT
২০২৪ সালের জুলাইয়ের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামের ধারা ছিল একাধিক। কিছু দল চাইছিল সুষ্ঠু নির্বাচন। অন্য অনেকে লড়ছিল পেশাজীবীদের দাবি নিয়ে এবং সরকারের নানান সামাজিক জুলুমের বিরুদ্ধে। কেউই খুব একটা সফল ছিল না; বরং সরকার ক্রমাগত দুঃশাসকে পরিণত হয়েছিল। পাহাড়সম সেই প্রতিপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পেরেছিল অদলীয় তরুণ-তরুণী ও শ্রমজীবী মানুষেরা।
এ অসাধ্যসাধনে রাজনৈতিক কর্মীরাও যুক্ত ছিলেন, তাঁদেরও অংশগ্রহণ ছিল। শহীদদের মধ্যেও দলীয় কর্মীরা আছেন; কিন্তু গত ১২ মাসে রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যুত্থানের দার্শনিক চেতনা ও রাজনৈতিক চাওয়ার সঙ্গে কতটা একাত্ম হতে পারল? অভ্যুত্থানের চাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে কতটা দলীয় কাঠামোর সংস্কার করলেন রাজনীতিবিদেরা? অভ্যুত্থানের কর্মীদের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন সারাতে কতটা সময় দিলেন?
অভ্যুত্থান-উৎসবের বর্ষপূর্তিকালে এসব প্রশ্নই কেবল মনে আসছে।
অভ্যুত্থানকর্মীদের জন্য দলগুলো কী করেছেগত বছর ৩৬ দিন ধরে যে মানুষগুলো রক্তের সাগর পাড়ি দিয়েছেন, তাঁরা ৩৭ জুলাই থেকে প্রতিদিন ট্রমার মধ্যেও আছেন। তাঁরা অনেকে এখন প্যানিক ডিজঅর্ডারে ভোগেন। মারমুখী পুলিশ দল দেখলে আঁতকে ওঠেন। রক্ষী দল আর পেটোয়া বাহিনীকে শিশু-কিশোর-নারীদের নির্যাতন করতে দেখেছেন তাঁরা। পরিচিতজনকে চোখের সামনে মরতে দেখেছেন। ইচ্ছা সত্ত্বেও অনেককে হাত বাড়িয়ে রক্ষা করতে পারেননি। গণ–অভ্যুত্থানের এই কর্মিদলকে দিনে-রাতে-ঘুমে-জাগরণে দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে। এ রকম শত শত মানুষের শরীরে এখনো ‘পেলেট’(ছররা গুলি)।
সমস্যা তাঁদের অন্যদিকেও। আন্দোলনের কোনো কোনো কর্মী যখন ক্ষমতাধরদের কাছাকাছি থাকতে পারার সুযোগে চাঁদাবাজিতে ধরা পড়েন, বহু ধরনের অপকর্ম ও প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকায় তাঁদের পাওয়া যায়, তখনো অভ্যুত্থানে যুক্ত থাকা সাধারণ কর্মীরা ট্রমায় মুষড়ে পড়েন।
দূরদূরান্তের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো বিহ্বল হয়ে আছেন তাঁদের প্রতি ক্ষমতাকেন্দ্রের অবজ্ঞা ও উদাসীনতা দেখে।
গত ১২ মাসে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল এ রকম মানুষদের জন্য মোটাদাগে কিছু করেছে কি? দলীয় গণ্ডির বড় বড় সমাবেশের বাইরে এসে গুটিয়ে যাওয়া সাধারণ ‘জুলাই যোদ্ধা’দের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলাকে দায়িত্ব মনে করেছে কি?
জেলা শহরগুলোর সেই মেয়েদের কথা তো কেউই শোনেনি—যাঁরা সামাজিক সব বাধা অগ্রাহ্য করে সতীর্থ ছেলেদের পাশে ব্যারিকেড গড়তে নেমেছিলেন এবং ‘৩৭ জুলাই’ থেকে বোবা চোখে কেবল সবার নির্বাচনী প্রস্তুতি (!) দেখছেন। আজকের অভ্যুত্থানপূর্তি-উৎসবে কতজন আছেন তাঁরা?আলতাফ পারভেজ: গবেষক; রাজনীতি বিশ্লেষক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
নাচ গান আনন্দে ৪০ বছর পর গোমস্তাপুরে ফিরল ওঁরাওদের কারাম উৎসব
প্রায় ৪০ বছর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডাঙ্গা গ্রামে শুরু হয়েছে ওঁরাও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব বা ডালপূজা। গ্রামের নারীদের উদ্যোগে আবার চালু হওয়া এ উৎসব ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রীতি, আনন্দ আর নাচ–গানের আবহ।
গত বুধবার সন্ধ্যায় আখড়ায় কারামগাছের ডাল পুঁতে পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। রাতভর চলে নাচ-গান। বৃহস্পতিবার বিকেলে আখড়া থেকে কারাম ডাল তোলা হয়। এরপর মাদল-বাঁশির তালে নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়ে পুকুরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই দিনব্যাপী উৎসব। তবে সেদিনও গভীর রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ ও শিশুরা গান ও নাচে অংশ নেন।
আরও পড়ুনশ্রীমঙ্গলে নাচে-গানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর করম উৎসব উদ্যাপন০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫বুধবার গোধূলিবেলায় দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির তিন কিশোরী স্নান শেষে ভেজা কাপড়ে ধানগাছ, দূর্বাঘাস, কাদো ফুল ও সুতা দিয়ে কারাম ডাল সাজাচ্ছে। আগের রাত থেকে তারা নির্জলা উপোসে ছিল। অন্যদিকে তিন কিশোর দূরের গ্রাম থেকে খিলকদমের ডাল কেটে নিয়ে আসে। তারাও উপোস করেছিল। নতুন ধুতি পরে তারা ডাল নিয়ে এলে কিশোরীরা ফুল ছিটিয়ে বরণ করে। এরপর নারীদের সঙ্গে নেচে গেয়ে আখড়ায় তিনটি ডাল পাশাপাশি পুঁতে দেওয়া হয়। পূজা শেষে কিশোর-কিশোরীরা বাড়ি গিয়ে উপোস ভেঙে সেজেগুজে আখড়ায় ফিরে আসে।
বরণ করার পরে নেচে-গেয়ে গ্রামে আখড়ায় নিয়ে আসছে কারাম ডাল। বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডঙ্গা গ্রামে