সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পাহারা দেয় এলাকাটি, পুলিশ-প্রশাসন ঢুকলেই হামলা
Published: 21st, October 2025 GMT
চার দশক ধরে সরকারি পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার অবৈধ বসতি। এখনো পাহাড় কেটে চলছে প্লট বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্য ও দখল টিকিয়ে রাখতে এলাকাটিতে গড়ে তোলা হয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকাটি সার্বক্ষণিক সশস্ত্র পাহারায় থাকে এসব সন্ত্রাসীরা। এলাকায় বাসিন্দাদের প্রবেশের জন্য রয়েছে পরিচয়পত্র। বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কেউ এলাকায় ঢুকতে পারেন না। এমনকি পুলিশ, জেলা প্রশাসনের লোকজনও এলাকাটিতে প্রবেশ করতে গিয়ে অনেকবার হামলার শিকার হয়েছেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই এলাকাটির নাম জঙ্গল সলিমপুর। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এটি হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা। সরকারি খাসজমি হওয়ায় এলাকাটিতে কারাগার, আইটি পার্ক নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে বেহাত হওয়া সরকারি জায়গাগুলো পুনরুদ্ধার করতে না পারায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর এই এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ, খুনোখুনির ঘটনা ঘটে চলছে। সম্প্রতি এলাকায় দখল-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্ত্রাসীদের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি হয়। এতে একজন নিহত হন। পরদিন সেখানে প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক।
সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পরিকল্পনা করে যৌথ অভিযান করে অবৈধ বসতিদের সরাতে হবে। না হলে জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়গুলো রক্ষা হবে না।মুক্তাদির হাসান, সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর—চট্টগ্রামচট্টগ্রাম নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটি। এর বিপরীতে লিংক রোডের উত্তর পাশে ৩ হাজার ১০০ একর জায়গায় জঙ্গল সলিমপুরের অবস্থান। সীতাকুণ্ডে এটির অবস্থান হলেও এটি অনেকটা নগরের ভেতরেই। এর পূর্ব দিকে রয়েছে হাটহাজারী উপজেলা এবং দক্ষিণে বায়েজীদ থানা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, লিংক রোড এলাকার আশপাশে প্রতি শতক জায়গা ৯ থেকে ১০ লাখ টাকায় বেচাকেনা চলছে। সেই হিসাবে ৩ হাজার ১০০ একর খাসজমির মূল্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া জঙ্গল সলিমপুরে গাছসহ বিভিন্ন সরকারি সম্পদ রয়েছে। এসব সরকারি সম্পদ পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা দখল করে রেখেছেন।
যেভাবে দখল শুরু, নিয়ন্ত্রণে যারা
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নব্বই দশকে সন্ত্রাসী আলী আক্কাস জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে বসতি শুরু করেন। দখল ধরে রাখতে গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ে হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে যেতে পারতেন না। এই সুযোগে নিম্ন আয়ের লোকজনের কাছে পাহাড়ি খাস জায়গা বিক্রি শুরু করে আক্কাসের বাহিনী।
শুরুতে দুই শতক জায়গা বিক্রি হতো ২০ হাজার টাকায়। নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এসব জায়গা কেনাবেচা চলে আসছে। প্লট গ্রহীতাদের ছিন্নমূল সমবায় সমিতি নামক সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যুৎ, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা সেবা দেওয়ার কথা বলে নিয়মিত চাঁদা আদায় শুরু হয়। জঙ্গল সলিমপুরের প্রবেশ মুখে নির্মাণ করা হয় একাধিক লোহার গেট। পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ গেট অতিক্রম করতে পারতেন না। প্লট বিক্রির টাকা ও পাহাড় দখল নিয়ে এক সময় বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান আক্কাস। এর কিছুদিন পর আক্কাসের সহযোগী কাজী মশিউর রহমান, ইয়াসিন মিয়া, গফুর মেম্বার ও গাজী সাদেক আলাদা আলাদা দল তৈরি করেন।
প্লট বিক্রির টাকা ও পাহাড় দখল নিয়ে একসময় বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান আক্কাস। এর কিছুদিন পর আক্কাসের সহযোগী কাজী মশিউর রহমান, ইয়াসিন মিয়া, গফুর মেম্বার ও গাজী সাদেক আলাদা আলাদা দল তৈরি করেন।বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইয়াসিন সীতাকুণ্ডের এস এম আল মামুনের আশ্রয়ে ছিলেন। আল মামুন সীতাকুণ্ডের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা। ইয়াসিন এলাকার আলীনগর বহুমুখী সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন কাজী মশিউর, গাজী সাদেক। যারা প্লট কিনেছেন তারাই এ দুই সমিতির সদস্য। বর্তমানে এ দুটি সমিতিতে প্রায় ৩০ হাজার সদস্য রয়েছেন।
গত ২ জানুয়ারি সলিমপুরে খুন হন ইউনিয়ন শ্রমিক দলের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি মীর আরমান। তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়। গত ১৪ মাসে এলাকাটিতে চারজন খুন হয়েছেন। পুলিশ বলছে, সব কটি খুনের পেছনে রয়েছে পাহাড়ি এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বজায় রাখা।
এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ইয়াসিনকে সরিয়ে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরের দখল নিতে গত বছরের ৫ আগস্টের পর হামলা চালান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) রোকন উদ্দিনের বাহিনী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন কাজী মশিউর, গাজী সাদেক ও গোলাম গফুর। কিন্তু ইয়াসিন বাহিনীর সঙ্গে তাঁরা পেরে উঠছেন না। কাজী মশিউররা রয়েছেন জঙ্গল সলিমপুরের সলিমপুর অংশে আর ইয়াসিন রয়েছেন আলীনগরে। এখন কাজী মশিউররা রোকনকে সঙ্গে নিয়ে আলীনগর দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
৪ অক্টোবর ভোরে নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নিয়ে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর দখলের চেষ্টা করেন রোকনের লোকজন। এ সময় তাঁর অনুসারী খলিলুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আহত হন অন্তত আরও ২৫ জন। এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
সম্প্রতি আলীনগরের পাহাড় দখলে নিতে ৬০ লাখ টাকার অস্ত্র কেনার একটি কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ে। অস্ত্রের কথা বলা ওই ব্যক্তি বহিষ্কৃত যুবদল নেতা রোকন উদ্দিন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। কথোপকথনে বলতে শোনা যায়, ‘ছিন্নমূলে আমি যুদ্ধ করতে রাজি আছি। ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার অস্ত্র কিনেছি, যা করার সব করব। বহিরাগত কেউ জঙ্গল সলিমপুরে নেতৃত্ব দিতে পারবে না।’
ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ডটির বিষয়ে জানতে চাইলে সেটি তাঁর নয় বলে দাবি করেন রোকন উদ্দিন। আলীনগরের দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সলিমপুরে আমার প্লট নেই। রাজনীতি যেহেতু করি, আমার দলীয় লোকজনের খোঁজখবর রাখি। সলিমপুরের দখল নিয়ে ইয়াসিনের সঙ্গে প্রতিপক্ষের দীর্ঘদিন থেকে সংঘর্ষ, নানা ঘটনা ঘটছে। তাঁর (ইয়াসিনের) কোনো প্রতিপক্ষ করতে পারে।’ ইয়াসিনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হয় তাঁর মুঠোফোনে। তবে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড়ের অবৈধ বসতিতে উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে খননযন্ত্রের (এক্সকাভেটর) সামনে বসে ও শুয়ে পড়েন কয়েকজন বাসিন্দা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক ট ত সন ত র স দখল ন য় আল নগর নগর র র দখল ল কজন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশেই সম্ভব গ্লুকোমার আধুনিক চিকিৎসা, বিস্তারিত জানুন
ডায়োড লেজার সাইক্লোফোটোকোঅ্যাগুলেশন কী
এটি একটি আধুনিক, নিরাপদ ও স্বল্প সময়ের লেজার চিকিৎসা। এ পদ্ধতিতে চোখের সিলিয়ারি বডির ওপর লেজারের মাইক্রোপালস প্রয়োগ করে অতিরিক্ত তরল উৎপাদন বন্ধ করা হয়। ফলে চোখের ভেতরের চাপ কমে, ব্যথা উপশম হয় ও চোখের কার্যকারিতা বজায় থাকে।
এর সুবিধাকাটাছেঁড়ার দরকার পড়ে না।
১০-১৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে না।
রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ব্যথাহীন ও নিরাপদ একটি পদ্ধতি।
দরকার পড়লে আবার করা যায়।
আরও পড়ুনকেন আমরা চোখ ঘষি, এতে চোখের কি কোনো ক্ষতি হয়?১৫ নভেম্বর ২০২৫কারা এই চিকিৎসা নিতে পারবেনমাঝারি থেকে গুরুতর গ্লুকোমা রোগী।
দীর্ঘদিন ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার করেও যাঁদের চোখের চাপ কমছে না।
যাঁদের আগে একাধিক অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হয়েছে।
যাঁরা তীব্র চোখের ব্যথায় ভুগছেন।
যাঁদের দৃষ্টিশক্তি অনেকটাই কমে গেছে, কিন্তু ব্যথা দূর করা জরুরি।
আরও পড়ুনবয়স ৩০ পেরোতেই চোখ বসে যাচ্ছে? দেখুন তো এসব কারণে কি না১৯ জুলাই ২০২৫সতর্কতাগ্লুকোমা নীরবে দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়। গ্লুকোমা হলে সাধারণ চোখের সমস্যা ভেবে বসে থাকবেন না। যদি চোখে চাপ, ব্যথা, ঝাপসা দেখা, আলোতে কষ্ট হয় বা পরিবারের কারও গ্লুকোমার ইতিহাস থাকে, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির, গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ, ঢাকা
আরও পড়ুনরাত জাগি না, তবুও দুই চোখের চারদিকের ত্বক শুষ্ক হয়ে আসছে কেন১৬ অক্টোবর ২০২৫