টিকটকার প্রিন্স মামুন ওরফে আবদুল্লাহ আল মামুনকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বছরের জুন মাসে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এক নারীর করা ধর্ষণ মামলায় প্রিন্স মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিন পান। ওই নারী সাইবার নিরাপত্তা আইনে অনলাইনে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগও করেছিলেন।

আরও পড়ুনটিকটকার প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রিন্স মামুন মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘টিকটক’ ও ‘লাইকি’তে নিজের তৈরি মিউজিক ভিডিও পোস্ট করে পরিচিতি পান।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

রাকিবুল হাসান জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রিন্স মামুনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন ওই নারী। পরে গত বছরের ১ জুলাই ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান মামুন। মামুনের পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করা হয়, তিনি নিরপরাধ। হয়রানি করতে তাঁকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

তবে ধর্ষণ মামলায় ওই নারীর অভিযোগ, ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে মামুন তাঁর মাকে নিয়ে ওই নারীর বাসায় বসবাস করতে থাকেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। একাধিকবার বিয়ের বিষয়ে বললেও মামুন বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ মার্চ মামুন তাঁকে বিয়ে করবেন, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তিনি বিয়ের কথা বললে মামুন খেপে যান ও গালাগাল করেন। মামুনের মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

আরও পড়ুননারীকে মারধর ও নির্যাতনের মামলায় টিকটকার প্রিন্স মামুনের বিচার শুরু০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনধর্ষণ মামলায় টিকটকার প্রিন্স মামুন কারাগারে১১ জুন ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট কটক র প র ন স ম ম ন ওই ন র

এছাড়াও পড়ুন:

লানকাউই থেকে কুয়ালালামপুর সাইকেলে ৫১৫ কিমি 

আজকেও আকাশ অন্ধকার থাকতে বৃষ্টি মাথায় করে রওনা দিলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর বৃষ্টি থেমেও গেল। পথে দাঁড়ালে ফজরের আজান শুরু হলো। মালয়েশিয়াতে বেশ সুন্দর মসজিদ আছে! আরবের স্থাপত্যশৈলী এখানেও দেখা যায়। 

আজ বড় রাস্তায় চালানো শুরু হলো। তবে বেশ কিছু জায়গায় নুড়ি পাথর পেলাম। আমার রোড বাইকের চিকন চাকা নিয়ে প্রথম থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। মনে মনে যে ভয় ছিল তাই হলো, ভরদুপুরে চাকা লিক হয়ে গেল। টায়ার থেকে পুরোনো টিউব বের করে নতুন টিউবটা ভরলাম। আমার কাছে দেশ থেকে আনা একটা হ্যান্ড পাম্পার ছিল কিন্তু হাওয়া ভরা যাচ্ছে না। কিছুটা দূরে চঞ্চল আর মুনতাসীর বসে ছিল। সে পর্যন্ত সাইকেল ঠেলে নিয়ে এসে মুনতাসীর ভাইয়ের পাম্পার দিয়ে হাওয়া দিলাম। গরমে তখন ত্রাহি অবস্থা। বরফ দিয়ে লেবু পানি খেয়ে চলা শুরু করলাম। 

এখানে জুসগুলো বেশ সুপেয়। বারবার খেতে ইচ্ছে করে, দামেও সাশ্রয়ী। লম্বা হাইওয়ে দিয়ে আমাদের চলা শুরু। এই হাইওয়ে দিয়েই কুয়ালালামপুরের পথে যাব আমরা। বড় একটা ব্রিজ পেলাম ‘পেরাক নদীর’ উপর। সব দেশে নদী মনে হয় একই রকম, শুধু জলের রঙ সামান্য ভিন্ন। পরের ব্রিজে দেখলাম ‘সাঙ্গাই মানগুং’ নদী। তৃতীয় ব্রিজে উঠে দেখলাম ‘সানগান সিতিয়াওয়ান’ নদী। ম্যাপে নদীগুলোর নাম লেখা আছে। বেশ প্রশস্ত নদীগুলো। নানা আকারের নানা বর্ণের জাহাজ যাওয়া আসা করছে। আজকে ১১০কিলোমিটার চালিয়ে টপ গার্ডেন হোটেলে এসে উঠলাম। 

দেখতে দেখতে কতগুলো দিন পার করে ফেললাম। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল প্যাডেল দিয়ে যাচ্ছি। দারুণ সব জায়গা দেখছি, সঙ্গে কত বিচিত্র মানুষ! আজকের আবহাওয়া বেশ উত্তপ্ত। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বের হয়েছি। একটু চালিয়েই শরীর ভিজে গেছে। একটা গ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। রাস্তার পাশে ধান খেত, সেখান থেকে বাংলা কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। আমাদের দেশের ভাইয়েরা কাজ করছে। সাইকেলে পতাকা দেখে তাদের টনক নড়েছে। ‘বাংলাদেশ’ বলে কেউ একজন জোর গলায় চিৎকার দিলো। স্বদেশীয় না হলে আর কেই-বা পতাকা দেখে ডাক দেবে। 

গতকালের ভয়টা এখনো রয়েই গেলো। রাস্তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়েই পথ চলতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই পেছনের চাকা লিক হলো। গতকাল সামনের চাকার টিউব গেলো আজ পেছনের চাকা। কি হচ্ছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। সামনে আর কোনো লিক হলে উপায় নেই। কারণ সঙ্গে করে লিক সারানোর প্যাচকিট আনা হয়নি। সাইড হয়ে চাকা খুলে বসলাম। টায়ার-টিউব খুলে সাবধানে অবশিষ্ট টিউবটা ভরছিলাম হঠাৎ কী মনে হলো মুনতাসীর ভাই পাম্পার নিয়ে সাইকেল চালানো শুরু করে দিলো। আমি আর চঞ্চল থ বনে গেলাম। এই মাঝপথে পাম্পার এখন সবচেয়ে জরুরি জিনিস। চঞ্চলের কাছে একটা চলনসই পাম্পার ছিল, তাই দিয়েই কাজ কোনোমতে চালিয়ে নিলাম। কিছু দূর যেতেই একটা বাসা খুঁজে পেলাম যেখানে অনেকগুলো সাইকেল ও মটরসাইকেল রয়েছে। পাম্পারের আশায় সেখানে থামলাম এবং পেয়েও গেলাম। 

পথে একবার আইসক্রিম ব্রেক নিলাম। এ সময় ডাবের পানি খেলাম। তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এইচ-৫ রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি, ডাবল লেন। একটা গাছ নেই যে একটু ছায়াতলে দাঁড়াব। কয়েক মাইল পরপর একটা ব্রিজ আর বাসস্টপ আছে। নতুন জিনিস লক্ষ্য করলাম এই ফুটওভার ব্রিজগুলোতে মানুষের সাথে মটরবাইকও রাস্তা পার হতে পারে। অর্থাৎ সিঁড়ি এবং রাস্তা দুরকম ব্যবস্থাই  আছে। 

দুপুরের খাবার খেতে থেমেছিলাম ‘তাঙ্গুং কারাং’ নামে এক জায়গায়। সেখানেও দেশী ভাইদের পেয়ে গেলাম। নাম সাব্বির হোসেন। বয়স ২২ বছর। সাত মাস এই রেস্টুরেন্টে কাজ করছে। সাত লাখ টাকা লোন করে মালয়েশিয়া এসেছে। একদিন দেরি করলেই বেতন কেটে রাখে। প্রবাসে এরা কত কষ্ট করে তা আমি আরবে থাকতেও দেখেছি। বাড়ির লোক হয়তো বুঝতেও পারে না বিদেশ বিভূঁইয়ে তাদের সন্তানেরা কি নিদারুণ কষ্ট করে চলেছে! এ কারণেই এদের বলা হয় রেমিটেন্স যোদ্ধা। 

৮০ কিলোমিটার চালিয়ে আজকের মতো পৌঁছে গেলাম ‘জালান শ্রি পেনাম্বাং’। ভিআই বুটিক হোটেল আমাদের এক রাতের জন্য রাজকীয় বলা চলে। চঞ্চল আর আমি কথা বলে একটা ভালো ডিলে তিন বেডের ডিলাক্স রুম নিয়েছি। বেশ বড় আর খোলামেলা। রুম দেখেই মনে হয়েছিল এখানে কয়েকদিন থেকে গেলে মন্দ হতো না। 

আমাদের যে চলার গতি, তাতে জলদি কুয়ালালামপুরে পৌঁছে যাবো ধারণা করেছিলাম। প্রথম দিকে কষ্টের তীব্রতা কয়েক দিন যেতে যেতে শরীরে সয়ে যায়। কিন্তু আমাদের শরীর যখন গতি পেয়েছে তখনই কুয়ালালামপুরের রাস্তাও ফুরিয়েছে। শহর যত কাছে আসা শুরু করেছে গেঞ্জাম ততো বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। শহরজুড়ে সাপের মতো এত দিকে রাস্তা চলে গেছে যে দিশেহারা হবার দশা! বারবার সাইকেল থামিয়ে ম্যাপ দেখতে হচ্ছে। এর মধ্যে টুইনটাওয়ারের মাথা নানা ফাকফোকর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। যদিও আমরা ওদিকে যাব না। আমরা পিন পয়েন্ট করেছি জালান সুলতান রোড। এখানে মূলত ট্যুরিস্টদের আনাগোনা। তাই হোটেলও বেশি। দুপুর ১টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু হোটেল খুঁজতে বেশ বেগ পেতে হলো। কারণ আমাদের সাইকেলসমেত কেউ জায়গা দিচ্ছে না। সাইকেল আমাদের রুমে রাখতে দেবে না, আবার গ্যারেজেও রাখার ব্যবস্থা নেই। সাইকেল নিয়ে বেশ কিছু হোটেলে কথা বললাম। এদিকে আমরা বেশ ক্লান্ত। ভোরে বের হয়ে ৪৬ কিলোমিটার চালিয়ে এসেছি। তার উপর উত্তাপময় আবহাওয়া। অনেক খুঁজে একটা হোটেল পেলাম। প্রতিরাত ভাড়া পড়বে ৩১০ রিঙ্গিত। আমাদের জন্য একটু বেশিই বলা চলে। টাকায় এক রাত প্রায় ৯ হাজার। তিন জনের আলাদা বিছানা। রুমের শেষ প্রান্তে কাচের দেয়াল, সেখান থেকে মানুষজনের ভিড়ভাট্টা দেখা যায়।  স্ট্রিট ফুডের স্বর্গরাজ্য বলা যায় এই অংশটুকু। 

হোটেলে ব্যাগপত্তর রেখে সাইকেলের বাক্স খুঁজতে বের হলাম। এখন এটাই সবচেয়ে জরুরি কাজ। সাইকেলের একটা দোকান পেলাম ঠিকই কিন্তু তারা সাইকেলের বাক্স রাখে না। অন্য আরেকটা দোকানে খবর নিলাম, তাদের কাছেও নেই, তবে তারা চেষ্টা করে দেখবে জানালো। ৫০ রিঙ্গিত পড়বে প্রতি বক্স। 

সাইকেল নিয়ে লম্বা সফরে বের হওয়া মোটেও সহজ কাজ না। এ জন্য খুব কম লোকে সাইকেল নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করে। শেষে অনেকগুলো রিঙ্গিত খরচা করে মুনতাসীর ভাইয়ের বান্ধবীর মারফতে দুইটা দকানের খোঁজ পেয়েছিলাম। সেখানেই বাক্স পেলাম। বাক্স হোটেলে এনে আধাবেলা সময় সেগুলো তিনজনে মিলে প্যাক করলাম। ঘেমেনেয়ে একাকার। 

কাজ শেষ করে হোটেল ট্রেভেলগের সামনে দিয়ে অনেক দূর হেঁটে গেলাম। বিকাল হতে হতে জায়গাটা বাহারী খাবার আর মানুষে জমজমাট হয়ে যায়। রাস্তার শেষ মাথায় গিয়ে পেলাম মুসলিম চাইনিজদের তৈরি ‘ক্রিসপি রোটি বিফ’। রুটির ভেতরে বিফ বা চিকেনের কিমা দিয়ে তাতে পেঁয়াজ এবং সামান্য কারী মসলা মিশিয়ে গোল করে চাপ দিয়ে একটা চাকতির মত তৈরি করে তেলে ফ্রাই করে সার্ভ করে। পুরা প্রসেসটা কাচের অপর প্রান্ত থেকে সবাই দেখতে পাচ্ছে। কেনার জন্য রাস্তায় লম্বা লাইন ধরেছে নানা দেশের মানুষ। আমিও কৌতূহলী হয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। কাউন্টারে দাম লেখা আছে, চিকেন রুটি সাড়ে ৫ রিঙ্গিত আর বিফ রুটি সাড়ে ৬ রিঙ্গিত। আমি বিফ রুটি নিলাম, তৃপ্তি নিয়ে খেলাম। 

এই আট দিনে আমরা চালিয়েছি লানকাউই থেকে কুয়ালালামপুর ৫১৫ কিলোমিটার পথ। আর দুইদিন পরেই আমার যাত্রার শেষ। গত কয়েক বছর থেকে এখানে আসার স্বপ্ন বুনেছিলাম। আয়রনম্যানের আসরে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ফিনিশলাইন পার করবো। এ পর্যন্ত আসতে কত সাধনা আর পরিশ্রম করতে হয়েছে তা আমি ছাড়া কেউ ঠাওর করতে পারবে না। ভাগ্য সহায় হলো। এরও শেষ হলো। আসলে কি এসবের কোন শেষ আছে? আবার নতুন কোন অভিজ্ঞতার জন্য বেড়িয়ে পড়তে হবে। জীবনটা অনেক ছোট, সময়কে যতই কষ্টের মনে হোক, গত হয়ে গেলে এর মায়া আটকে থাকে মনে। সেই মায়া কাটিয়ে আবার নতুন সময়ে আমাদের প্রবেশ করতেই হয়। সেই সময়টা আরো ভালো কাটুক, তাই প্রত্যাশা। (শেষ)  

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ