৫৪ বছর ধরে রেল স্টেশনেই সংসার মা-মেয়ের!
Published: 28th, August 2025 GMT
একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের বারান্দায় ৫৪ বছর ধরে বসবাস করছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ খোদেজা বেগম। যুদ্ধের আগে খেজুরের রস খেয়ে মারা যান খোদেজার স্বামী। এরপর মেয়েকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েন খোদেজা।
মেয়েকে নিয়ে ১৯৭১ সালের শেষের দিকে রাজবাড়ীর পাংশা থানার বাগদুলি গ্রাম ছেড়ে জীবিকার উদ্দেশে চলে যান কুষ্টিয়ায়। সেখানে কোর্ট স্টেশনে আশ্রয় নেন। খেয়ে না খেয়ে এই স্টেশনের বারান্দায় পার করেছেন দিন-রাত।
খোদেজা বেগম মেয়ে বাতাসির বয়স সঠিকভাবে বলতে না পারেননি। তিনি জানান- কুষ্টিয়ায় যখন আসেন, তখন মেয়ে কোলের বাচ্চা। বছরখানেক হবে। এরপর থেকেই এই স্টেশনের আলো-বাতাসেই বেড়ে উঠেছেন বাতাসি। স্থানীয়রা এখন তাঁকে বাতাসি পাগলি নামেই চেনে। কখনো স্টেশনের পূর্ব দিকে, আবার কখনো পশ্চিম দিকের চায়ের দোকানে নানান গল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি।
দিনে সাত কাপ চা পান করা বাতাসি বেগমের অভ্যাস। কোর্ট স্টেশনে ঝাড়ু দিয়ে আর মা খোদেজা বেগমের ভিক্ষার টাকা দিয়ে চলে তাদের দুজনের সংসার।
বয়সের ভারে ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না খোদেজা বেগম। তবু অস্পষ্টভাবে বলেন, ‘‘যুদ্ধের সময় ফ্যান-পানি খাইয়ে দিন কাটায়ছি। যুদ্ধ শেষ হলিই মিয়াডা (মেয়েকে) নিয়ে চলি আসি কুষ্টিয়া কোট স্টেশনে। মিয়া নিয়েই কাজকাম করতাম আর এই স্টেশনে রাত কাটাতাম। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে রাতে থাকতে হতো এ স্টেশনে।’’
কথা বলতে বলতে গলা ধরে এলে অনেকক্ষণ চুপ থাকেন বৃদ্ধ খোদেজা বেগম। এরপর প্রতিবেদককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘বাবা, মরার আগে ভাতা কার্ড পামুনি? ভাতা কার্ড কারে কয় বাবা? আর আমি তো ভোট দিইনে, ভোটার হতি হয় কেম্বা বাবা?’
এসময় খোদেজা বেগম আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘‘মিয়াডারে নিয়া চিন্তা। আমি নাই মিয়াডারে পাহারা দিয়ে গেলাম। আমার তো মরনের টাইম হয়ছে। বাতাসির আল্লাহ ছাড়া উপায় নাই। এই স্টেশন আমার এখন মাথা গুঁজার ঠাঁই। ধুলা-ময়লা নিয়া পড়ে থাকি। এইডা যেন না হারায় বাবা।’’
বাতাসির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা ঘরের ব্যবস্থা করলি আমি ঘরে থাকতি পারতাম। সেই ছোটকালে আইছি। আজও ঘর হলো না। আর আমারে ঘর দিবি কিডা! আমি তো ভোটার না। কেম্বা করে ভোটার হব সমবাদিক?’’
কোর্ট স্টেশনের সর্দার মুকুল বলেন, ‘‘আমার বাবা ছিলেন সর্দার। আমিও সর্দারগিরি করছি। আমি সেই ছোটবেলা থেকে মা-মেয়েকে দেখছি।’’
স্টেশনে বই-পত্রিকা বিক্রেতা কামাল বলেন, ‘‘আমিও প্রায় ৩২ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এখানেই দেখে গেলাম তাদের। তবে তাদের মা-মেয়ের মাঝে কোনো খারাপ কিছু দেখলাম না। এখানেই কাটিয়ে দিচ্ছে এতগুলো বছর। তাদের দেখার কেউ নেই। সমাজের উচ্চবিত্তরা একটু সহায়তা করলে এরা একটু ভালো থাকতে পারত।’’
কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন মাস্টার ইতি আরা বলেন, ‘‘বাতাসি খুব ভালো মেয়ে। তার মাও খুব ভালো মানুষ। জোরে কথা বলে না। তাদের আচরণ ভালো। আমরা চাই সমাজের বিত্তবানেরা এগিয়ে আসুক, তাদের মতো মানুষকে সহযোগিতা করা উচিত।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার দেখা পেতে বোমা ছুঁড়ে গ্রেপ্তার প্রেমিক
রাগ করে কথা বন্ধ করেছিল প্রেমিকা। রাগ ভাঙিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে, একটু কথা বলতে ইউটিউব থেকে বোমা তৈরিত কৌশল শিখেছিল প্রেমিক। বোম ফাটার শব্দে যদি প্রেমিকা বেরিয়ে আসে... এই আশায়। এক্সপার্টের মতো বানিয়েও ফেলে বোমা। কিন্তু বোমা ফাটার তীব্র সেই শব্দে আতঙ্কিত হয়ে প্রেমিক ও তার বন্ধুরা পালিয়ে যায় নিজেরাই।
গত ২৮ অক্টোবর, ছট পূজার রাতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি এক আবাসিক এলাকা গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরণের তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠে। বোমা মারার সেই ঘটনা দুষ্কৃতী আক্রমণ ভেবে লেগেছিল রাজনৈতিক রং, তৈরি হয়েছিল আতঙ্ক। হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম। স্বাভাবিকভাবেই দুষ্কৃতীদের ধরতে চাপে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তদন্তে প্রেমিক প্রেমিকার রাগ ভাঙানোর তথ্যে তদন্ত যেন মোড় নিয়েছে আশ্চর্যের এক প্রেমের গল্পে।
আরো পড়ুন:
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?
জঙ্গি সন্দেহে ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি ‘মুফতি মাসুদ’
পুলিশ জানায়, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড মালিরবাগান খামারডাঙা এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা ছোঁড়া হয়। বাড়িটির দেয়ালে লাগে বোমা, জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বাড়িটির বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু কোনো সূত্র পাওয়া যায় না। এরপর এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি সিসিটিভির ফুটেজে একটি বাইকের ছবি দেখে তার সন্ধান শুরু করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালিরবাগান এলাকায় যেখানে বোমাবাজি হয়েছিল সেখানে এক তরুণীর সঙ্গে চাঁপদানীর স্থানীয় যুবক সাগর মালিকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে প্রেমিক প্রেমিকার দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছিল না। এর মধ্যেই প্রেমিক বন্ধুদের মারফত জানতে পারে প্রেমিকা অন্য এক যুবকের সঙ্গে মেলামেশা করছে। এদিকে সাগরের ফোন ধরা বন্ধ করে দেয় তরুণী।
কী করে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করা যায় সেটাই ভাবতে থাকে প্রেমিক। এরপরেই বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা করার বুদ্ধি বের করে সাগর। ইউটিউব দেখে বেশ কয়েক ধরনের পটকার উপদান দিয়ে বোমা বানায়। সেটি ফাটানোর পরিকল্পনা করা হয় প্রেমিকার বাড়ির পাশে।
বোমা ফাটার আওয়াজে তরুণী প্রেমিকা যদি বেরিয়ে আসে তাহলে তার সঙ্গে কথা বলবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে ছট পূজার রাতে চার বন্ধু পৌঁছে যায় মালিরবাগান এলাকায়। বোমা ছোঁড়ে একটি বাড়ির দেওয়ালে। এতটাই জোরে শব্দ হয় যে তারা নিজেরাই ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে পুলিশ ওই তরুণীর সঙ্গে সাগরের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তার খোঁজ শুরু করে। পাশাপাশি বাইকের নম্বর দেখে খোঁজ শুরু করে। সাগর এবং তার বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, তারা ঘটনার পর থেকে আর বাড়িতে থাকছিল না। ঘটনার পর চার বন্ধুই কল্যাণীতে পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গতকাল শুক্রবার পুলিশ তাদেরকে ব্যারাকপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আটক সাগর মালিক, প্রিন্স যাদব, প্রণীত পাল, আয়ুস যাদব, চারজনেরই বয়স ১৮-২০ বছর।ইতিমধ্যেই তাদের শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয়েছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদ জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়েছে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ