ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে একমত জামায়াত, অভিযোগ ষড়যন্ত্রের
Published: 31st, August 2025 GMT
নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একমত প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার শর্তের ক্ষেত্রে একটি দল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আব্দুল্লাহ মো.
আরো পড়ুন:
যমুনায় বিএনপির প্রতিনিধি দল
যমুনায় এনসিপির প্রতিনিধি দল
“দলটি প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে, নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও দ্বিমত নাই তাদের। কিন্তু একটি দল নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যখন আমরা কতিপয় শর্তের কথা বলেছি, তখনই বলে যে- এই তারিখে আমরা নির্বাচন চাই না এই কথাটা বলাটাই একটা ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করছি”, বলেন আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
প্রধান উপদেষ্টা তিনটি বিষয়ে জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, কিছু বিষয়ে সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার এবং বিশ্বমানের আনন্দঘন একটি নির্বাচন হবে।
কিন্তু আজকে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে এই সমস্ত অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা আছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা।
এছাড়া অনেকগুলো বিষয়ে সব দল ঐকমত্য পোষণ করলেও দু’য়েকটি দল কোনো কোনো ইস্যুতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বলে জানান তিনি।
“আনফরচুনেটলি অল্প সংখ্যক দল আমাদের ঐকমত্য পোষণের ইস্যুর বাস্তবায়নে কিছুটা বাধার সৃষ্টি করছে। তারা বলছেন, আগামী নির্বাচিত সরকার এসে এগুলো বাস্তবায়ন করবে। আগামী নির্বাচিত সরকার যদি বাস্তবায়ন করে তবে এখানে আমরা ঐকমত্য করলাম কেন?” প্রশ্ন তোলেন তিনি।
জুলাই চার্টারের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং চার্টারের ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে দলটি।
এছাড়া জুলাই চার্টার না করেই নির্বাচনের ট্রেন ছেড়ে দেওয়াটা এক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,“একটা দল যেভাবে চেয়েছে সেভাবে হয়েছে। তারা নির্বাচন পেয়ে গেছে। বাকি সব দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে এক আছে। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ইস্যুটি বিঘ্নিত হয়েছে।”
ঢাকা/রুহানী/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়ে ১৫ অক্টোবর করেছে অন্তর্বর্তী সরকার ।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো গভীর বাণিজ্য সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ
সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: আলী রীয়াজ
ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল ১২ ফেব্রুয়ারি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শুরুতে ছয় মাস মেয়াদে গঠিত সাত সদস্যের এই কমিশনের মেয়াদ ১৫ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। তখন প্রথম ধাপে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার দ্বিতীয় ধাপে বাড়ানো হলো ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
কমিশনের কাজ হলো ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা।
নির্বাচন পদ্ধতি, সংবিধান, সরকার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জুলাই সনদ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করেছে ঐকমত্য কমিশন। বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলেও তা চূড়ান্ত করে সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
তবে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জরুরি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
পূর্বাপর
রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।
এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়।
এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি।
সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে পাঠায়, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও দেয়।
মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৪টি বৈঠক হয়। কিছু দলের সঙ্গে হয় একাধিক বৈঠক।
প্রথম পর্বের আলোচনায় ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়।
কোরবানির ঈদের আগে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা সংসদ ভবনের এলডি হলে শেষ হয়। এরপর ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা উদ্বোধন করে কমিশন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয়।
আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিন চলে এ আলোচনা।
সবশেষ জুলাই সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া মতামতের জন্য ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।
পরে দল গুলোর সাথে আরেক দফা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সনদের কপি রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়।
কিছুক্ষেত্রে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্টসহ) মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলা হয়েছে এই চূড়ান্ত খসড়ায়। কিন্তু সেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনো রূপরেখা সেখানে দেওয়া হয়নি।
এখন বাস্তবায়নের পথ খুঁজতেই দলগুলোর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করছে ঐকমত্য কমিশন।
ঢাকা/এএএম/রাসেল