কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে লোভনীয় তথ্য আদান-প্রদান করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে এমনই প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পুঁজিবাজার সংক্রান্ত প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারকে (এনটিএমসি) চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

আরো পড়ুন:

চাকরিজীবী নারীর সম্পদ লুট, দম্পতি কারাগারে

খালেদা জিয়ার নাম ভাঙিয়ে ১৫ কোটি টাকা প্রতারণা, সিআইডির মামলা

সম্প্রতি সংস্থাটি থেকে একটি চিঠি এনটিএমসির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পায়। প্রতারক চক্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক টেলিগ্রাম) লোভনীয় বার্তা পাঠায়। বিনিয়োগের পর প্রথমে সামান্য মুনাফা দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করে।

এভাবে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে একসময় বিনিয়োগকারীকে জানানো হয়, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছে সেটিতে সমস্যা হয়েছে, তার জন্য বিনিয়োগকারীকে আরো অর্থ দিতে হবে। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার পর প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ব্লক করে দেয়।

কমিশনের মার্কেট ইন্টেলিজেন্স এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে। যার লিংক- https://chat.

whatsapp.com/KQwwxYzstK58wl4tNgA2Yx

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এমতাবস্থায় উল্লিখিত প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড থেকে প্রতারক চক্রটিকে নিবৃত্ত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটি বন্ধ করা এবং ওই গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়া ও কমার প্রলোভেন দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। তাদের প্রতারণা থেকে সচেতন থাকতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে ১১টি ফেসবুক পেজ, আইডি ও গ্রুপের লিংক প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

এসব ফেসবুক পেজ বা আইডি বা গ্রুপের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সিকিউরিটিজের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা বেআইনি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রিসার্চ অ্যানালিস্ট) রুলস, ২০১৩ অনুযায়ী- শুধু মার্চেন্ট ব্যাংকার্স, স্টক-ডিলার বা স্টক-ব্রোকার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ, ইনভেস্টমেন্ট ডভিশেরস এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিসার্চ ফার্মস প্রতিষ্ঠানগুলো রিসার্চ এনালিস্ট হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে রিসার্চ রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারে এবং উক্ত রিসার্চ রিপোর্টের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সিকিউরিটিজের মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি সম্পর্কে মতামত-পরামর্শ প্রদান করতে পারে।

এক্ষেত্রে উল্লিখিত গ্রুপ-আইডিগুলো এ আইনের আওতায় নিবন্ধিত নয়। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের বিনিয়োগ পরামর্শ গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ফেসবুক পেজ বা আইডি বা গ্রুপের নাম ও লিংকগুলো হলো

১. শখের শেয়ার বাজার: https://www.facebook.com/profile.php?id=61579790072044

২. BD STOCK EXCHANGE (DSE & CSE): https://www.facebook.com/groups/391580888653809/

৩. Momin Dse: https://www.facebook.com/groups/391580888653809/user/ 100016058347627/

৪. Ashakaa Rasul Noomani: https://www.facebook.com/groups/391580888653809/user/100008105401350/

৫. শেয়ার মার্কেট সাকসেস স্ট্রাটেজিস: https://www.facebook.com/groups/391580888653809/ user/61574056896483/

৬. বাজার বিশ্লেষণ: https://www.facebook.com/profile.php?id=61579257136367

৭. আশিকুর রহমান আশিক: https://www.facebook.com/asikura.rahamana.asika.371807

৮. Anika Sarah (Consultancy Assetmanagement): https://www.facebook.com/anika.sarah.142

৯. PUBLIC BUSINESS CLUB: https://www.facebook.com/groups/1421914744614689/

১০. Planned Investment: https://www.facebook.com/groups/1768873286596084/

১১. Caleb Wright: https://www.facebook.com/profile.php?id=61579983105760

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারক চক্রের বিষয়ে বা পুঁজিবাজার সংক্রান্ত যেকোনো অনিয়মের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলে তা কমিশনের মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের ই-মেইলে ([email protected]) প্রেরণের জন্য অনুরোধ করেছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। তারা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়া ও কমার প্রলোভেন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাই প্রতারণা রোধ করতে বিএসইসির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া এ ধরনের প্রতারণা রোধ করতে আইডি ট্রাক করা প্রয়োজন, যা বিএসইসির পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পুঁজিবাজারে এ ধরনের প্রতারণা রোধ করতে বিএসইসি সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।”

২০২৪ সালের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী বা বিও হিসাবধারীর ব্যক্তিগত তৎপরতার খোঁজখবর গোপনে আড়িপাতার জন্য জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেন তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের ২৯ আগস্ট এনটিএমসির সঙ্গে বিএসইসির সেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব বাতিল করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এনটিএমসির দায়িত্বশীলরা বিনিয়োগকারীর অনলাইন কার্যক্রম এবং ভয়েস কল রেকর্ডের ক্ষমতা পেতেন। মূলত কারসাজির মাধ্যমে বাজারকে অস্থিতিশীল করার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত ও ইনসাইডার ট্রেডিং এবং গুজব রটানো ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে এ পথ বেছে নেয় তৎকালীন কমিশন।

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র টসঅ য প র ধ কর ফ সব ক র জন য ন ত কর উল ল খ

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • ‘ন্যানো বানানা এআই শাড়ি’ ট্রেন্ড, কীভাবে বানাবেন পছন্দের ছবি
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব