রিফাত ছাত্তার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় মাস্টার্স শেষ করেছেন ২০২৩ সালে। পড়াশোনায় ছিলেন ভালো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কাজেও সক্রিয় ছিলেন। পড়াশোনা শেষে টানা দুই বছর ধরে তিনি চাকরি খুঁজছেন। ছোট–বড় মিলিয়ে আবেদন করেছেন প্রায় ২০০টির মতো। হাতে গোনা কয়েকবার সাক্ষাৎকারের ডাক পেলেও শেষ পর্যন্ত কোনো নিয়োগ হয়নি।

রিফাত ছাত্তার বলেন, ‘প্রথম দিকে আত্মবিশ্বাস ছিল অনেক। ভাবতাম, আমি হয়তো দ্রুতই চাকরি পেয়ে যাব। কিন্তু একের পর এক অস্বীকৃতি পেতে পেতে এখন মনে হয়, হয়তো আমার কিছুই হবে না। অনেক সময় নতুন করে আবেদন করারও আগ্রহ পাই না।’

রিফাতের গল্প একা নয়। রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অসংখ্য তরুণ–তরুণীর কণ্ঠে শোনা যায় একই হতাশা।

নেটওয়ার্কিং এড়িয়ে গেলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় বহুগুণ। ১৫ হাজার চাকরির আবেদনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬ শতাংশ আবেদন এসেছে পরিচিতদের রেফারেলের মাধ্যমে, সেখান থেকেই নিয়োগ হয়েছে ৩৭ শতাংশ।কঠিন হচ্ছে চাকরির বাজার

২০২৪ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি খাতে যেখানে মাসে প্রায় দুই লাখ লোকের চাকরি হতো, ২০২৫ সালের জুনে এসে সেই সংখ্যা নেমেছে মাত্র ১৯ হাজারে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব বাংলাদেশের চাকরির বাজারকেও প্রভাবিত করেছে। সরকারি চাকরির পদের সংখ্যা সীমিত, আর বেসরকারি খাতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে আবেদন পড়ে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাক্ষাৎকারে ডাক পান গড়ে মাত্র ৩ শতাংশ প্রার্থী।

অন্যদিকে নিয়োগের নিশ্চয়তা নিয়েও তৈরি হয়েছে বড় শঙ্কা। বৈশ্বিক অনলাইন নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ইন্ডিডের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, কর্মরত মানুষের অর্ধেকই এবার ছাঁটাইয়ের আতঙ্কে ভুগছেন, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল যোগ্যতা দিয়েই আর চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে প্রতিযোগিতা এতটাই বেশি যে প্রার্থীদের ভয় জয় করে কৌশলগতভাবে এগোতে হচ্ছে। বিশেষ করে তিনটি ভয় প্রার্থীদের পথ আটকে দিচ্ছে—অস্বীকৃতির ভয়, যোগাযোগের ভয় ও প্রযুক্তিগত ভয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, পদ ৪৭০মেধাবী প্রার্থীর ঘাটতি

সরকারি কর্ম কমিশন একটি বিসিএসে সাধারণত শূন্য দশমিক ৪৫ থেকে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রার্থীকে সুপারিশ করে। যেমন: ৩৭তম বিসিএসে সুপারিশের হার ছিল শূন্য দশমিক ৫৪, ৩৮তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৬৪, ৪০তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৪৮, ৪১তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৬২, ৪৩তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ ও ৪৪তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ।

পিএসসির এই পরিসংখ্যান বলছে, দেশে যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীর ঘাটতি রয়েছে।

আরও পড়ুনসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, পদ ৪১০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, ২০২২ সাল থেকে জুনিয়র ডেভেলপার পদের নিয়োগ কমেছে ২০ শতাংশ। পাশাপাশি ফরচুন ৫০০ কোম্পানির ৮০ শতাংশই এখন প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাইয়ে এআই ব্যবহার করছে।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ন য দশম ক চ কর র ব স এস র চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাছ ও সবজির দাম বেড়েছে, কমেছে মুরগির

ভরা মৌসুমেও বাড়ছে ইলিশ মাছের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে মাছ কম পাওয়া ও রপ্তানির কারণে গত সপ্তাহের তুলনায় ইলিশের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নিউ মার্কেট হাজারীবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। 

বাজারে এখন ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। একই ওজনের ইলিশ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে।

বেড়েছে অন্যান্য মাছের দাম
সরবরাহ কম থাকায় এ সপ্তাহে অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। প্রতি কেজি চাষের পাঙ্গাস ২১০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, মাঝারি আকারের কৈ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি শিং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় আকারের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দামও বাড়তি
সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম গড়ে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বাজারে দেশি শশা ৭০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, সিম ১৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৮০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা এবং জালি কুমড়া ও লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে চালের দাম, মুদি পণ্য উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল
বিক্রেতারা জানিয়েছেন গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি চালের দাম কমেছে ১ থেকে ২ টাকা। এখন বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৭৮ টাকায়, মাঝারি মানের ব্রি-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। পাইজামের দাম এখন ৫৮ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি। স্বর্ণা ও গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে।

দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি দরে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা এবং দেশি আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে মুরগির দাম
এ সপ্তাহে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালি জাতের মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।

যা বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা
রাজধানীর হাজারীবাগ কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খায়রুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, ইলিশ এখন বিলাসী পণ্য। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে ভরা মৌসুমেও ইলিশ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। দাম শুনে চলে যাচ্ছি। এখন আবার বলছে, রপ্তানির জন্য নাকি দাম বেড়েছে। 

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এবছর মনে হয় আর ইলিশ খাওয়া আর হবে না। কারণ, আগামী মাসে আবার ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে সরকার। এখন ইলিশ শুধু নামেই জাতীয় মাছ। এটা এখন ধনীদের মাছ বলতে পারেন।

রাজধানীর সালেক গার্ডেন কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আশা করছি, আগামী মাসে বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করলে দাম কমবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ