Prothomalo:
2025-10-02@23:50:57 GMT

ক্লিভেজ

Published: 25th, September 2025 GMT

সারিনা মুখের ওপর দড়াম করে বেডরুমের দরজা লাগিয়ে দিল।

আমাদের পাঁচ-ছয় বছরের দাম্পত্যজীবনে তার এ রকম রুদ্রমূর্তি কখনো দেখিনি। যে চোখ দেখে এসেছি এক প্রশান্ত জলাশয় হিসেবে। যে চোখ দুটো কাকচক্ষু জলের মতো পরিষ্কার। কখনো কাজল না পরলেও সারিনার চোখ যেন সদা কাজল পরা। পাপড়িগুলো ভাসা ভাসা। পূর্ণ চোখে যখন তাকায় তখন সারা পৃথিবীর সব সৌন্দর্য এসে ভর করে সেখানে। মান-অভিমান-রাগ যে এখানে কখনো ভর করেনি, তা–ও নয়। কিন্তু আজ যা দেখলাম, তা অবর্ণনীয়। তার চোখের জায়গায় কে যে জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস সেট করে দিল!

সবকিছু তো ঠিকই ছিল। কিন্তু এই অতি অল্প সময়ের ভেতরে কী এমন ঘটল, যার জন্য সারিনা এ রকম আচরণ করল? আমি ভেবে কূল পাচ্ছি না।

সাবিলাকে সি অফ করে দরজা লাগিয়ে ভেতরে ঢুকেছি মাত্র। তখনই সারিনা কাণ্ডটি করল। সাবিলা আমার ক্লাসমেট ছিল। আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল তার দেড়-দুই বছরের বাচ্চাকে নিয়ে। আমরা তিনজন ধুমসে আড্ডা দিলাম। চা–কফি খেলাম। নাশতা করলাম। সারিনা সাবিলার বেবিকে খুব আদর করল।

জানি কাজ হবে না। তবু কয়েকবার নাম ধরে ডাকাডাকি করলাম। দরজায় ঠিক ধাক্কা না দিলেও জোরে জোরে টোকা দিলাম। কিন্তু কিছুতেই লাভ হলো না। হওয়ার কথাও নয়। কারণ, সারিনা এ রকমই।

দুই.

বিধ্বংসী ঝড়ের পর প্রকৃতি অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে। ধ্বংসগ্রস্তের বিয়োগ ও বেদনা সে কতটা টের পায় কে জানে! কিন্তু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, প্রকৃতি তখন হাসে। সারিনাও এখন ওই প্রকৃতির মতো সুন্দর হয়ে উঠেছে। শুধু হাসিটুকু ছাড়া। সে এখন শান্ত, স্নিগ্ধ, মায়াময়। তবে ভেতরে তার গভীরতম অভিমান। সে জানে কি না, তা জানি না যে আমার ভেতর কতটা ধ্বংসযজ্ঞ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আরও বিদারক বিষয় যে আমি এখনো জানিই না কী হয়েছে। জোর করে লাভও নেই। যখন বলার তখন ঠিকই বলবে। আকার–ইঙ্গিতে শুরু হবে। চিৎকারের পর কান্নায় থামবে। এখন আমার অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

‘সাবিলার বেবিটা খুব সুন্দর, না?’ এ রকম শান্তভাবেই শুরু হলো এ পর্ব।

আমি তার দিকে নিঃশব্দে তাকালাম। কিছু বললাম না। সারিনা বিছানা থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকাল। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম তার মনোভঙ্গি। অন্য সময়ের চেয়ে আজ আরও ব্যর্থ হলাম।

‘এই, তুমি শুনতে পারছ না আমি কী বলছি।’ ঠিক চিৎকার নয়, কিন্তু বেশ উঁচু স্বরে সারিনা জিজ্ঞেস করে।

সারিনা কাছে এল। চোখ লাল লাল। ফোলা ফোলা। সব সময় পরিপাটি থাকা সারিনার চুল খুব এলোমেলো আজ। কাছে এসে বুকের ভেতর মুখ লুকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, ‘সাবিলার বেবিটা খুব সুন্দর। তাই না? কী সুন্দর চুল! এমন ঘন! যেন মেঘ। আর কেমন খাড়া খাড়া। কী সুন্দর ঠোঁট! কী সুন্দর গাল! কী সুন্দর হাসি! কী সুন্দর গায়ের সুবাস!’

সারিনা থামল একটু। তারপর আবার বলা শুরু করল, ‘সত্যি না বলো? সাবিলার বেবিটা খুব সুন্দর। ঠিক তোমার মতো। কেন তোমার মতো জানো?’ সারিনা বুক থেকে মুখ তুলে আমার মুখের দিকে তাকাল। একটু থেমে আবার বলল, ‘সাবিলার বেবিটা খুব সুন্দর। ঠিক তোমার মতো। কারণ—বেবিটা তোমার।’ বলেই বুকে মুখ লুকিয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করল। কান্নার দমকে সে কেঁপে কেঁপে উঠল। চোখের পানি দিয়ে আমার বুক ভেসে যেতে থাকল।

‘বেবিটা তোমার’ বলার আগ পর্যন্ত ঠিক ছিল। মাঝেমধ্যে এ রকম হয় আরকি। কারণে অকারণে। কিন্তু শেষ বাক্যটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এ রকম একটা ভাবনা সারিনা ভাববে, তা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি।

কাঁদতে কাঁদতেই সারিনা বলল, ‘আমি স্পষ্ট শুনেছি সে বাবা বলে ডাকতে ডাকতে তোমার কাছে গেল। তুমিও কোলে তুলে নিলে। আমি তখন বেডরুমে ছিলাম। তোমরা ড্রইংরুমে।’

আমি কী বলব, কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। কান্না একটু থামলে সারিনা আবার বলা শুরু করল, ‘আমি জানি বাবা হওয়ার তীব্র ক্ষুধা তোমার। তাই বলে সাবিলাকে তুমি তোমার স্পার্ম ডোনেট করবে? সাবিলার সঙ্গে তুমি শুয়েছ! ওই মাই গড!’

এবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। বললাম, ‘একদম চুপ। আর একটাও বাজে কথা বলবে না। অনেক বলেছ।’

তিন.

বেবির জন্য যে আমিও ক্ষুধার্ত, তা তো মিথ্যা নয়। কিন্তু সারিনার মতো না। সারিনা রীতিমতো পাগল হয়ে উঠেছে। অথচ সে-ই আমাকে অনেক সান্ত্বনা দেয়।

বিয়ের ছয়–সাত বছর হয়ে গেছে। প্রথম দুই বছর ভেবেছি শুধু এনজয় করব। শরীর নিয়ে, প্রকৃতি নিয়ে। তা করেছি। দুজনেই এনজয় করেছি অনেক কিছু। দুজনের শরীর নিয়ে দুজন কত রকম নিরীক্ষা করে নতুন নতুন আনন্দ রচনা করেছি। কোনো সময় মনে হয়নি এটা শেষ হওয়ার। একসময় চেষ্টা করেছি বেবির জন্য। হচ্ছে না। এরপর সারিনার চিকিৎসা শুরু করেছি। তার ডিম্বাণুর অবস্থা তেমন ভালো নয়। এটা নিয়ে তার অপরাধবোধের শেষ নেই। এদিকে ডক্টর আমারও টেস্ট দিয়েছে। সারিনা সেটা করাতে মোটেও রাজি নয়। ডাক্তারের মুখের ওপর বলে দিল, ‘ও সুস্থ আছে। ওর কোনো টেস্ট লাগবে না।’ ডাক্তার মুচকি হেসে বলল, ‘তবু, প্লিজ।’

চেম্বার থেকে বের হয়ে সারিনা আমার হাত থেকে প্রেসক্রিপশনটা রীতিমতো ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়তে উদ্যত হলো। আমি ‘করো কী করো কী’ বলতে বলতে তার হাত থেকে উদ্ধার করি। সে অনুচ্চ অথচ দৃঢ়কণ্ঠে বলে, ‘খবরদার, এই পরীক্ষা তুমি করতে পারবে না।’

এটা নিয়ে একটা বিপদে পড়লাম। এই পরীক্ষা করার জন্য তিন দিন নারীসঙ্গ থেকে বিরত থাকতে হয়। সারিনা কৌশলে তিন দিনের গ্যাপ হতেই দেয় না। শেষে অনেক বুঝিয়ে তাকে রাজি করাই। তার একই কথা, ‘তোমার ওগুলো আমি ছাড়া অন্য কোথাও যাবে না। সবগুলো আমার।’

ক্লিনিকে গিয়ে স্যাম্পল দেওয়ার আগে স্বাস্থ্যকর্মী আমাকে জানিয়ে দেয়, আমি চাইলে সঙ্গিনীর সহযোগিতা নিতে পারব। কিন্তু পুরো স্যাম্পল আমাদের বক্সে দিতে হবে।

সারিনা এটা শুনে মহাখুশি। আমাকে ইঙ্গিত করে ভেতরে ঢোকার। আমি অনুনয় করে তাকে বাইরে রেখে পট নিয়ে ভেতরে ঢুকি।

স্যাম্পল নিয়ে আমি যখন বের হয়ে আসি তখন বিধ্বস্ত আমি। খুব কষ্ট হয়েছে। তার চেয়ে বেশি হচ্ছে টেনশন। কারণ, স্যাম্পল দেওয়ার পর এক ঘণ্টা ওয়েট করতে হবে প্রাথমিক ফলাফলের জন্য। এই ফলাফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সারিনা আমার মনের কথা পড়ে ফেলে। পাশে বসে হাতে হাত রেখে সান্ত্বনা দিতে থাকল।

‘দেখো, তোমার সবকিছু ঠিক আছে। যদি খারাপ রিপোর্ট আসে, তবু সবাইকে বলব সব ঠিক আছে। আমারই সমস্যা।’

আমি চুপ করে থাকি।

‘দেখো, আমাদের যদি বেবি না–ও হয়, তাতেও কোনো সমস্যা হবে না। তুমি তো ইউনিক। ধরে নিতে হবে সৃষ্টিকর্তা তোমার কোনো সিমিলারিটি রাখতে চান না। তুমি আমার দিকে তাকাও। এভাবে বসে থেকো না।’ রিসিপশনে আর আশপাশে শত লোকের মাঝেও সে দুই হাত দিয়ে আমার মুখটা তার মুখের কাছে এনে বলতে থাকে। যেন ঠোঁট দিয়ে কথাগুলো হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করিয়ে দিতে চায়। আর চোখে তার টলমল করতে থাকে পানি। সে পানি অতি সঙ্গোপনে চোখের ভেতরেই আটকে রাখতে চায়। পারেও। শুধু আমাকে বুঝতে দিতে চায় না।

চার.

ঝড়ের পরে সবাই শান্ত হয়ে আছি। সারিনা গম্ভীর হয়ে আছে। রাতে হালকা খাওয়াদাওয়া করল। ওর মা-বাবা আর বোনেরা ফোন করছে একটু পরপরই। অন্য দিন খলবল খলবল করে সারাক্ষণ কথা বলত। আমি মনে মনে খুব বিরক্ত হতাম। আজ এ রকম চুপচাপ হওয়াতেও খারাপ লাগছে। আরও খারাপ লাগছে সে কষ্ট পেয়ে আছে। আর কোনো প্রমাণও হাজির করা সম্ভব নয় তার অভিযোগের।

পাঁচ.

লাইট অফ করার পর সারিনা একদম স্বাভাবিক হয়ে উঠল। হালকা গান গাইতে গাইতে আমার ঘনিষ্ঠ হলো। গানের কথাগুলো গুনগুন থেকে হয়ে উঠল ফিসফিস। একসময় ফিসফিস বন্ধ হয়ে শুরু হলো তার ঠোঁটের কারুকাজ। এক ছন্দবদ্ধ শৃঙ্গারের উল্লাসে ভরে উঠল আমাদের রজনী। সারিনা আজ এত সক্রিয়, যা কোনো দিন হতে দেখিনি। সে আজ নানারকম বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। অন্যান্য দিন একটা পর্যায়ে গিয়ে আমরা যা করি আজ সেটা করতে দিল না সে। কিন্তু আমাকে চরমে পৌঁছাতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকল।

এক অপরূপ প্রশান্তির আলো ঠিকরে বের হচ্ছে সারিনার মুখ থেকে। আনন্দজল নিষ্ক্রান্তির পর চোখ খুলে তাকে দেখলাম আমি। ক্রমেই সে আলো ঠিকরে বের হতে থাকল তার পুরো শরীর থেকে। সারিনার মুখ দেখে এখন ভাববার একটুও অবকাশ নেই যে সে আজ এত এত কেঁদেছে।

সারিনা উঠে ওয়াশরুমে গেল। জল পড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এরপর বমির শব্দ। এবং সেই শব্দ থামছেই না। আমি উঠে ওয়াশরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকি, ‘দরজা খোলো।’ কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার পর দেখি সারিনা কোনো রকমে বেসিন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ধরে বিছানায় এনে শুইয়ে দিই। একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে।

কী করব, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। কিছু করার আগেই সারিনা আবার বমি শুরু করল। কিন্তু তেমন কিছু বের হলো না। আসলে পেটে যা ছিল, বেশির ভাগ বস্তুই তো বের হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। ড্রাইভারকে ফোন দিলাম। বন্ধ। এই গভীর রাতে তার মা–বাবাকে ফোন দিয়ে লাভ নেই। মাঝখানে টেনশনে পড়ে যাবেন তাঁরা। ছোট শ্যালিকাকে ফোন দিলাম। সে নিজেই ড্রাইভ করে চলে এল বাসায়।

ছয়.

সারিনার চিকিৎসা চলছে। আপাতত বমি হচ্ছে না। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর টেস্ট চলছে। কেবিনের বাইরে আমি আর আমার ছোট শ্যালিকা দাঁড়িয়ে আছি।

‘বলুন তো ভাইয়া, আপু বমি করার আগে কী করেছিল?’

আমি নির্বাক চেয়ে থাকি আমার শ্যালিকার দিকে। কীভাবে বলি এ কথা। কীভাবে বলি সারিনার বমি করার আগে ঘটে যাওয়া আনন্দ-মুহূর্তের কথা।

সেটা বাদ দিয়ে সারা দিনের ঘটনা বলি। শ্যালিকা ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে বলে, ‘ভেরি ইন্টারেস্টিং।’

আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে তার অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করি। এত বড় একটা অভিযোগ, আর সে কিনা মজা করছে। সে মেঝে থেকে কিছু একটা তোলার জন্য ঝুঁকে পড়ে। ঝুঁকে কিছুক্ষণ কী যেন খোঁজে।

উঠে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। জিনসের ওপর পরা লো কাট টি–শার্ট ঠিক করতে থাকে। নাভি ঢাকার জন্য নিচে টানতে থাকে। তাতে ওপরের অংশ বিপজ্জনকভাবে নিচে নেমে আসে। এমনকি তার গোলাপি ব্রার ফিতা উন্মুক্ত হয়ে ওঠে।

‘আসলে কী হয়েছে জানেন?’

আমি বুভুক্ষুর মতো তার মুখের দিকে চেয়ে থাকি।

শ্যালিকা আমার চোখের তাকিয়ে বলে, ‘ক্লিভেজ। আপনি ক্লিভেজে আটকে গেছেন ভাইয়া।’

আমি বোকার মতো তার দিকে চেয়ে থাকি। শ্যালিকা আকাশ–পাতাল দুলিয়ে খিলখিল করে হাসতে থাকে। হাসি একটু থামিয়ে বলে, ‘এই যে এখন যেমন ক্লিভেজে আটকে গিয়েছিলেন।’

নার্স কেবিন থেকে বের হয়ে বলে, ‘ম্যাডাম ডাকছে আপনাদের।’

সাত.

‘এখন কেমন লাগছে তোমার?’

‘খুব মজা লাগছে। বাসর রাতের মতো।’ শুষ্ক মুখে বিরক্তিকর কণ্ঠে সারিনা উত্তর দেয়।

একটু থেমে সারিনা আবার বলে, ‘সারিকা এসেছে কেন? ওকে চলে যেতে বলো।’

আমরা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাই। কী হলো এমন সারিনার! প্রাণের বোনের ওপর ক্ষিপ্ত!

সারিনার চোখ জলে ভরে উঠল। সারিকা গিয়ে তার পাশ বসে মাথায় হাত বোলাতে লাগল। সারিনা অস্ফুট স্বরে বলতে লাগল, ‘তোর ছেলের নাক খুব সুন্দর। কী তীক্ষ্ণ! চুল কী ঘন কালো আর খাড়া খাড়া। গায়ের রংটা দেখেছিস? চোখ দুটো! কপাল? গাল? খুব সুন্দর। কার মতো জানিস? ঠিক তোর ভাইয়ার মতো। এমনকি গায়ের সুবাসও।’

বলতে বলতে ঠোঁট উল্টে বাচ্চা মেয়েদের মতো কাঁদতে লাগল। আমার শ্যালিকা সারিকা আমার বউ সারিনার মুখটা বুকের ভেতরে টেনে নিল।

কিছুক্ষণ পর কান্না একটু থামলে সারিনা ঝটকা দিয়ে সারিকাকে সরিয়ে দিল। সারিকা বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল বড় বোনের দিকে।

সারিনা বলতে শুরু করল খুব ক্লান্ত স্বরে, ‘তোর বেবিটা কেন এত সুন্দর জানিস?’

একটু থামল সারিনা। হতভম্ব সারিকা একবার আমার দিকে, আরেকবার বড় বোনের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে। তখনই সারিনা উচ্চ স্বরে বলে উঠল, ‘কারণ, ওই বেবিটা তোর হাজব্যান্ডের নয়। ওটা তোর ভাইয়ার।’

আমি ভেবেছিলাম সারিকা এ কথায় খুব ভড়কে যাবে। কিন্তু না। সে আমার দিকে একনজর তাকিয়ে ঠোঁট টিপে একটু হাসল। তারপর সারিনার পাশে গিয়ে বসল।

আট.

সকালে সারিনার কনসিভ করার সুসংবাদ দিল ডাক্তার। সবার মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।

সারিনা এমন তরতাজা হয়ে উঠল, যেন কিছুই হয়নি। এমন সজীব আমি তাকে বহুদিন দেখিনি। তবে তিন–চার দিন পর যা ঘটল, তার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না।

সারিনার মিসক্যারেজ হয়ে গেল।

কিন্তু বিস্ময়করভাবে সারিনা একটুও ভেঙে পড়ল না। দুটো শোক আমাকে বিহ্বল ও অস্থির করে তুলেছিল। একটা হলো সাবিলা আর সারিকার বাচ্চা নাকি আমার—এই অভিযোগ। আরেকটা হলো এত সাধনার পরও সারিনার মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়া। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না এই মুহূর্তে সারিনাকে কী বলা যায়।

তবু তাকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘তুমি আর আমি মিলে যে পৃথিবী, তার ভেতরে অন্য কেউ নেই।’

সারিনা আমাকে অবাক করে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘আছে আরেকজন। ঠিক তোমার মতো। সে আসবে সময়মতো।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ ব স ন দর আম র দ ক স য ম পল ত ম র মত র জন য আম দ র ব র হয় প রক ত র ভ তর আনন দ হওয় র র ওপর এ রকম

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ