পাভলোর মোট তিনটি বিড়াল—তিনটি ভিন্ন রঙের। সাদা, কালো আর ধূসর। তিনজনের প্রিয় বসার স্থানও ভিন্ন ভিন্ন। সাদাটি সর্বদা বসে থাকে দোতলার ছাদের কার্নিশে। কালোটি বসে থাকে কমলালেবুগাছের কোমল ছায়ায়। আর ধূসর রঙেরটি একতলার ছাদে পেতে রাখা টেবিলের কোণে। এই তিনটি বিড়ালের জন্য সকালের প্রাতরাশটা একটু ঝামেলাপূর্ণ হয়ে যায়। টেবিলে দুধ আর রুটি—এ দুটি বস্তু দেখলেই একজন পাশের চেয়ারে বসল তো ভিন্নজন এসে একেবারে টেবিলের ওপর আসন গেড়ে বসে গেলেন। সে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি। আবার যেহেতু পাভলোর পোষা আদুরে বিড়াল, তাই যে খুব করে কষে ধমক দিয়ে দাবড়ে দেব, সেটিও হচ্ছে না।

সকালের দিকটায় পাভলোর বেশ ব্যস্ত সময়। ওর বউ রান্নাঘরে চায়ের জল গরম করছে, আর ও দৌড়ে বউকে এটা-ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। দুটি ছেলের মধ্যে যেটির বয়স সাড়ে তিন, সেটি গুটিগুটি পায়ে সারা ছাদ হেঁটে বেড়াচ্ছে। আর ছয় মাসের ছোটটি প্যারাম্বুলেটরে বসে চুকচুক করে দুধ খাচ্ছে। দৌড়োদৌড়ির মধ্যে পাভলো কিছুক্ষণ পরপরই ছুটে গিয়ে দেখে আসছে ছোটটি কাঁদছে কি না।

‘আজ আমাদের গ্রামের বেকারিটা খুলেছে বেশ বেলা করে। এ জন্যই রুটি তুলে এখানে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।’ বেশ খানিকটা লজ্জিত মুখে পাভলো বলে।

পাভলোদের গ্রাম, মানে মারিতসা নামের ছোট্ট জনপদ—এখানে থেকে ঘণ্টাখানেক দূরের পথ। বাস আছে। পাভলো আর ওর বউ সাতসকালেই দুই ছেলেকে নিয়ে চলে আসে এই সরাইখানায়। বউ প্রাতরাশ বানায়। এরপর বেলা এগারোটা নাগাদ আবার বাড়ি ফিরে যায়। পাভলো থাকে সন্ধ্যা অবধি।

বংশানুক্রমিকভাবে প্রাপ্ত প্রায় দুই শ বছরের পুরোনো স্থাপনা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নীলফামারীতে বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, রেড অ্যালার্ট

ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১২ ঘণ্টার ব্যবধানের সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। সকাল ৬টায় প্রবাহিত হচ্ছিল ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার দিয়ে। সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে প্রবাহিত হচ্ছিল ৫২ দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার ডান তীরের বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে বাশের পাইলিং করে বালির বস্তা নিক্ষেপ করছে পাউবো।

তিস্তার তীরবর্তী ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম এবং চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, রোববার দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা অব্যাহত আছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরস্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ তিস্তাপারের বিভিন্ন চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমন খেত তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্রমতে, রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৪৮ মিটার, দুপুর ১২টায় ৫২ মিটার, বেলা তিনটায় ৫২ দশমিক ১৪ মিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তা নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জ নামের স্থানে তিস্তার ডান তীরের প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেটির মেরামতকাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪ টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ