ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৫৬ শিক্ষার্থী ও ১০ শিক্ষক
Published: 18th, October 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের তিন বছরের (২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সাল) ‘ডিনস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। ১৪ অক্টোবর নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। কলা অনুষদের ১৭টি বিভাগের মোট ১৫৬ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান। দেশে-বিদেশে প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক প্রবন্ধের জন্য চারটি ক্যাটাগরিতে ১০ জন শিক্ষককে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান প্রধান অতিথি এবং সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক দরুল আমিন ডিনস অ্যাওয়ার্ড স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেন। ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। এ অনূষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, অনুষদের শিক্ষকেরা, রেজিস্ট্রার ও অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন বাংলা বিভাগের মাহফুজা মাহবুব।
ইংরেজি বিভাগের জেরিন তাসনিম রাইসা, মানতাহা কিশোয়ার, মো.
আরবি বিভাগের মাসুদুর রহমান, আবদুল্লাহ মজুমদার, আতহারুল ইসলাম শহিদ, তৌহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইকরামুল হক, মুনতাসির আহমদ মুয়াজ, মাহমুদুল হাসান, এজাজুল হক, মো. সাজ্জাদ হোসেন খান, সামিয়া জাহান, মিজানুর রহমান, নাজমুস সাকিব, হোসাইন আহম্মদ, ইয়াসির মাহমুদ, হাসমত আলী, মাহমুদুল আহসান, মুনতাসির আহমদ, আরফাতুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মাসুদ, ইমরান হোসাইন, ওমর ফারুক, জেসমিন ইসলাম তাপসী ও মোহাম্মদ আবদুর রহমান মাহদি।
ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সায়মা আক্তার, মো. খায়রুজ্জামান, মোসা. ফাহিমা সুমাইয়া, মো. ইশরেকাত হাসান ইমন, মাহমুদা আক্তার ও শান্তা আক্তার।
উর্দু বিভাগের সৈয়দা জাসিয়া আলী, মোসা. আলপনা আক্তার, মো. আবু সাজিদ, নাকিবা আজিম ও মো. হাবিবুল্লাহ মুসকান।
সংস্কৃত বিভাগের অনিক চন্দ্র বিশ্বাস, মধু কুমার রায়, উম্মে তামান্না সুলতানা কুয়াশা, সুমি রাণী দাস ও তমা রাণী সরকার।
পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের পিয়া দাস, অধিবাসী রায়, তানজিলা আক্তার ও প্রতিভা চাকমা।
ইতিহাস বিভাগের মো. হাসাইবুর রহমান, সোনিয়া আক্তার, মো. হাসিবুর রহমান, মো. মেহেদী হাসান, আবু তৈয়ব, সৌরভ মিয়া, অনন্যা আক্তার, তাসনিম মোস্তফা, পূজা দাস, ফারজানা পারভিন, সুষ্মিতা বাড়ৈ, অর্জুনা আক্তার, সুরাইয়া ইয়াসমিন সূচনা ও রূপম রোদ্দর।
দর্শন বিভাগের সানজিদা ইমু, তামান্না খাতুন, শায়লা ইসলাম নিপা ও মো. ইমরান হোসাইন।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাঈদ নাকিব, মো. হাসান তারেক খান, মো. মাজহারুল ইসলাম, রাকিজাতুল জান্নাত, কাজী নাঈম সিদ্দিকী, মোহাম্মদ জায়েদ, মো. মাহমুদুর রহমান, মো. আমির ফয়সাল, মো. আহমদ্দুল্লাহ, উম্মে কুলসুম, তাসলিমা আক্তার অণু, জাকিয়া খাতুন, নাসরিন আক্তার, মো. সাখাওয়াত হোসাইন সাব্বির এবং মো. নুর আলম, খায়রুন নেসা।
আরও পড়ুনএইচএসসি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণে মানতে হবে ৯টি নিয়ম১৪ অক্টোবর ২০২৫২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে ডিনস অ্যাওয়ার্ড পাওয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ ল ইসল ম র রহম ন হ স ইন
এছাড়াও পড়ুন:
বদলে যাচ্ছে ধনীদের পছন্দ, কী কাজে ব্যয় করছেন তাঁরা
শ্যাতো দ’ইকেম ২০১০—এই পানীয়ের এক বোতল যেন বিলাসিতার সংজ্ঞা। এতে আছে খুবানি, টোস্ট করা বাদাম, লেবুর খোসা, রসালো লেবু আর সাদা ট্রাফল—সব মিলিয়ে স্বাদ-গন্ধের নিখুঁত সমারোহ।
অনেক দিন ধরেই বিশ্বের এই সেরা মিষ্টি ওয়াইনটির দাম বেড়েছে। ২০২৩ সালে এসে এর দাম ছিল ২০১০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। তখন কেবল ওয়াইন নয়—বিলাসিতা মানেই ছিল বাড়তি মূল্য। পুরোনো গাড়ি, পুরোনো হুইস্কি, বিশাল অট্টালিকা—সবকিছুর দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পদবিষয়ক প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্রাঙ্কের তৈরি ‘লাক্সারি ইনভেস্টমেন্ট ইনডেক্স’ প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করেই যেন দৃশ্যপট বদলে গেল। ২০২৩ সালের শীর্ষ থেকে ওই সূচক এখন ৬ শতাংশ কমেছে। বোর্দোর বিখ্যাত ওয়াইন যেমন লাফিত রথচাইল্ড ও মারগোর দাম কমেছে ২০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত জেট ও বিলাসবহুল নৌকার দাম কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। ব্যবহৃত রোলেক্স ঘড়ির দাম ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম। দামি শিল্পকর্মের বাজারেও মন্দা।
আবাসনপ্রতিষ্ঠান স্যাভিলসের হিসেবে, বিশ্বের বড় শহরগুলোর সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ির দাম এখন আর তেমন বাড়ছে না, বরং লন্ডন ও প্যারিসে বিলাসবহুল আবাসনের দাম নিম্নমুখী। সানফ্রান্সিসকোর ‘বিলিয়নিয়ার্স রো’ (ধনীদের এলাকা)–এর এক অট্টালিকার দাম দুই বছর আগে বিক্রির জন্য উঠেছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারে; এখন সেই দাম ২৬ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।
কিন্তু ধনীদের জিনিসপত্রে এমন মন্দা কেন—ধনীদের সম্পদ কি কমে গেছে। ফোর্বসের হিসাব বলছে, এখন বিশ্বে বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি—এক বছর আগের তুলনায় আরও ২০০ জন বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ধনী শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষের হাতে এখন দেশটির মোট পারিবারিক সম্পদের ১৪ শতাংশ—কয়েক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সানফ্রান্সিসকোতে এখন ভবনের ক্রেতা নেই, কিন্তু সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থানের জোয়ারে প্রতিদিন নতুন নতুন কোটিপতি তৈরি হচ্ছে।
মুডিস অ্যানালিটিকসের গবেষক মার্ক জান্ডির তথ্য বলছে, ২০২২ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের খরচ বরং বেড়েছে।
কী ঘটছে
তাহলে হচ্ছেটা কী, ধনীদের সম্পদ তো কমেনি, বরং পৃথিবীতে ধনী–গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। বিষয়টি হলো, বিলাসপণ্যের অর্থনীতি পাল্টে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন বোঝার জন্য মার্কিন অর্থনীতিবিদ থরস্টিন ভেবলেনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়। ২০ শতকের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, বিলাসিতা টিকে থাকে দুর্লভতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর ভর করে। কোনো জিনিস শুধু দামি বলেই বিলাসবহুল নয়—বরং তখনই বিলাসবহুল হয়, যখন একজনের উপভোগের কারণে অন্যদের কাছে তা অপ্রাপ্য হয়ে ওঠে। আজকের অর্থনীতিতে এই দুই বৈশিষ্ট্যই বদলে গেছে।
ধনীদের জন্য সমস্যা হলো, বিলাসিতা এখন সর্বত্র। বিশ্বের অনেক দেশেই উৎকৃষ্ট ওয়াইন তৈরি হচ্ছে—তাহলে সেরা বোর্দো কি প্রকৃতই ততটা আলাদা? ল্যাবে তৈরি হীরার সঙ্গে প্রকৃত হীরার অমিল নেই বললেই চলে। পুরোনো পণ্যের অনলাইন বাজারে এখন যে কেউ সামান্য অর্থে কিটন জ্যাকেট বা এমনকি ব্যক্তিগত জেটও ভাড়া নিতে পারে। শিল্পজগতের পুরোনো মাস্টারদের চিত্রকর্ম এখন ‘ভাগ’ করে শত শত বিনিয়োগকারীকে মালিক বানানো হচ্ছে। সবাই এখন ‘ভালো জীবনের’ অভিজ্ঞতা নিচ্ছে—আর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখাতেও পারছে। ফলে এসব জিনিস আর দুর্লভ বা একান্ত মনে হয় না। তাই এগুলো আর ‘বিলাসবহুল’ বলে মনে হয় না।
সেরার সেরা থেকেও সেরা
তাই ধনীরা এখন পণ্য নয়, অভিজ্ঞতায় খরচ করছেন—বড়, ব্যতিক্রমী ও সেবামূলক অভিজ্ঞতা প্রাপ্তির দিকে এখন তাঁদের ঝোঁক। এই পরিস্থিতিতে দ্য ইকোনমিস্ট ‘আল্ট্রা-লাক্সারি সার্ভিস ইনডেক্স’ তৈরি করেছে—যেখানে রয়েছে সুপার বোলের টিকিট থেকে শুরু করে বিশ্বের সেরা রেস্তোরাঁয় খাবারসহ নানা অভিজ্ঞতা। এই সূচক প্রণয়নে ইকোনমিস্ট এমন অভিজ্ঞতাগুলোই আমলে নিয়েছে, যেগুলো শুধু ভালো নয়, বরং বিশ্বের সেরার সেরা—এবং যার মূল্যসংক্রান্ত তথ্য বহু বছর ধরে নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়। হিসাব অনুযায়ী, এই সূচক ২০১৯ সালের পর থেকে ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের পর পণ্যের দাম কমলেও এই সূচক আরও ওপরে উঠেছে।
এর ঊর্ধ্বগতি বিলাসপণ্যের মতোই—দুর্লভতা ও সীমিত সুযোগের প্রতিযোগিতার ফল। ধরা যাক, প্যারিসের বিখ্যাত হোটেল লে ব্রিস্টল। এর ছাদে থাকা পুল থেকে আইফেল টাওয়ার দেখা যায়। অতিথিরা পানীয়ের চেয়ে তার ছবি তুলতেই ব্যস্ত। এই হোটেলে ঘরসংখ্যা ২০০–এরও কম। ফলে সেখানে থাকা মানেই এক বিরল আনন্দ। সেখানে এখন এক রাত থাকার খরচ ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
অন্যদিকে গৃহকর্মীদের বাজারেও তীব্র প্রতিযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্রে এখন তাদের বেতন ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। ফ্লোরিডার অভিজাত এলাকা পাম বিচে গৃহকর্মীরা বছরে দেড় লাখ ডলারের বেশি আয় করেন।
বাস্তবতা হলো, ঘড়ি বা গয়না বিক্রি করা যায়, কিন্তু উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে কাটানো একদিনের অভিজ্ঞতা বিক্রি করা যায় না। ২০১৬ সালে যে সদস্যপদের টিকিট ৫০ হাজার পাউন্ডে পাওয়া যেত, এখন তার দাম এক লাখ পাউন্ড ছাড়িয়েছে। সুপার বোলের টিকিটও দ্বিগুণ। মেট গালার প্রবেশমূল্য ২০১৯ সালের দ্বিগুণের বেশি। সানফ্রান্সিসকোর তিন তারকা রেস্তোরাঁ বেনুর খাবারের দাম ২০১৫ সালের তুলনায় ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। সেখানে এক বেলা খাবারের জন্য ৫০০ ডলারের বেশি খরচ করেছেন দ্য ইকোনমিস্টের সাংবাদিক।
কিন্তু এমন রেস্তোরাঁয় খাওয়া মানে কেবল খাবার নয়। ওখানে খাওয়ার অর্থ হলো, আগামী কয়েক ঘণ্টায় পৃথিবীর আর কেউ আপনার জায়গায় বসতে পারবে না। নিউইয়র্ক ও প্যারিস ফ্যাশন উইক, এক্সক্লুসিভ ফান্ডরেইজার, এনবিএ প্লে-অফ—এসব জায়গায় এখন ‘সস্তায়’ যাওয়ার সুযোগ নেই, বরং সেটাই গর্ব—আপনি সেখানে ছিলেন, অন্যরা ছিল না।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালের পুনর্বিক্রিত টিকিটের দাম কত উঠবে, তার পূর্বাভাস করা কারও সাধ্য নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেটাই এখন বিলাসিতার প্রকৃত মোহ। যখন আপনি নিজে ইয়ামাল আর কিলিয়ান এমবাপ্পেকে মাঠে মুখোমুখি দেখতে পারেন, তখন এক বোতল শ্যাতো দ’ইকেম কতটা সন্তুষ্টি দেবে, তার চেয়ে তো বেশি নয়।