সাগরে আবার লঘুচাপের সম্ভাবনা, হতে পারে নিম্নচাপও
Published: 18th, October 2025 GMT
মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। তারপরও হঠাৎ করেই গতকাল শুক্রবার বৃষ্টি হলো। যদিও এর পরিমাণ খুব বেশি নয়।
আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। তবে এই নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হবে কি না, সে বিষয়ে আবহাওয়াবিদেরা নিশ্চিত নন।
দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে, ২৯ মিলিমিটার। আর দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের আরেক জেলা বান্দরবানে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২৪ মিলিমিটার। আর রাজধানীতে বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় ১ মিলিমিটার।
এ বৃষ্টির কারণ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু চলে যাওয়ার পরপরই একেবারেই স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হওয়া মেঘে অনেক সময় বৃষ্টি হয়। গতকাল রাজধানী ও অন্যান্য স্থানেও তা–ই হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীতে ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তনের সঙ্গে জলীয় বাষ্প মিলে মেঘের সৃষ্টি হয়েছিল। এটি একেবারে স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। আজ শনিবার রাজধানীতে বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব কম বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এখনো নিশ্চিত নয় যে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। তবে লঘুচাপটি ঘনীভূত হবে, তা বলা যায়। আর সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির লক্ষণ দেখার আগেই তা ঘূর্ণিঝড় হবে কি না, তা বলা সংগত নয়।মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক, আবহাওয়াবিদচার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি বলেন, ২৪ অক্টোবরের মধ্যে এ লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি আরও ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আবহাওয়া অফিস চলতি মাসের শুরুতে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে তিনটি লঘুচাপের কথা বলেছিল। এরই মধ্যে একটি লঘুচাপ মাসের একেবারে শুরুতে হয়ে গেছে। আরও দুটি লঘুচাপ হতে পারে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপ এমনকি ঘূর্ণিঝড়ও হতে পারে।
আগামী লঘুচাপটিই কি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এখনো নিশ্চিত নয় যে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। তবে লঘুচাপটি ঘনীভূত হবে, তা বলা যায়। আর সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির লক্ষণ দেখার আগেই তা ঘূর্ণিঝড় হবে কি না, তা বলা সংগত নয়।
দেশে বছরের দুটি সময় ঘূর্ণিঝড়প্রবণ। এর একটি মৌসুমি বায়ু আসার আগে এবং দ্বিতীয় দফায় হয় মৌসুমি বায়ু চলে যাওয়ার পর। প্রাক্–মৌসুমি বায়ুর সময় বা এপ্রিল ও মে মাস ঘূর্ণিঝড়প্রবণ। আবার মৌসুমি বায়ু চলে যাওয়ার পরপর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও ঘূর্ণিঝড় হয়। দেশের বড় ও বেশি ঘূর্ণিঝড় হয় মূলত নভেম্বর মাসে। সে অনুযায়ী অক্টোবর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়ে গেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’
১০ অক্টোবর। শরতের বাতাসে দিল্লির পাতা ঝরছে। ভারতের মাটিতে পা রাখলেন কাবুলের প্রভাবশালী নেতা মৌলভি আমির খান মুত্তাকি, যিনি আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতে তাঁর ছয় দিনের সফর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন মানচিত্র আঁকছে।
দিল্লিতে নেমে মুক্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বসলেন নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হলো, কাবুলে ভারত আবার দূতাবাস খুলবে, যা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধ। এরপর ১১ অক্টোবর মুত্তাকি গেলেন সাহারানপুরের দারুল উলুম দেওবন্দে; যা ইসলামিক ইমারতের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার প্রথম এই ভারতীয় মাদ্রাসা পরিদর্শন।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কীভাবে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রহণ করল—এ রকম প্রশ্ন নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে নিশ্চয়ই। কাবুলের সঙ্গে দিল্লি এমন এক সময়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে, সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে। তাহলে দেওবন্দ পরিদর্শন কি শুধু প্রতীকী, নাকি এর মধ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে?
২.২০২১ সালের আগস্ট তো বেশি দূরের সময় নয়। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত। চার বছর ‘সম্পর্কহীন’ থাকার পর তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার দিল্লিতে এসে বললেন, অমৃতসর-কাবুল ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। চার দশকের যুদ্ধে ক্লান্ত আফগানিস্তানের মানুষ উন্নয়নের জন্য উদ্গ্রীব।
আফগানিস্তানের আগের সরকারের সময় ভারত সেখানে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সালমা ড্যাম, জারঞ্জ-দেলারাম হাইওয়ে ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো প্রকল্পে। এবার মুত্তাকি এসে আফগানিস্তানের খনিজ ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এটা ‘তালেবান ২.০’-এর ইঙ্গিত। আসলেই কি তাই, নাকি এটা ‘শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু’ কৌশলের খেলা? ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান, যারা এখন আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের শত্রু।
■ দেওবন্দের যে চিন্তাধারা তালেবানকে প্রভাবিত করেছে, সেটি এসেছে পাকিস্তানের ‘ছাঁকনি’ দিয়ে। ■ প্রথমবারের মতো দেওবন্দ মাদ্রাসার সঙ্গে এবং দেওবন্দি ভারতীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রচিত হলো পাকিস্তানের ছায়ার বাইরে গিয়ে।বোঝার জন্য বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বটে; কিন্তু নানা যৌক্তিক কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত ছাড়া আমাদের আবার চলেও না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি ঈদের বাজার করতে ভারতেই ভরসা ছিল এতকাল; এমনকি বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদেরও ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ ভারত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের যদিও আগ্রাসী ভারতের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসার কারণে ভারতের আলেম-ওলামার সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় কোনো ইসলামি সম্মেলন মানেই ভারতের কোনো আলেমের আগমন।
দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি