আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২১তম সাক্ষী হিসেবে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন আহত জুলাই যোদ্ধা মো. সানি মৃধা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার (গত বছরের ৫ আগস্ট) পরও গোলাগুলির শব্দ শুনে ছাত্র-জনতা আশুলিয়া থানার দিকে যায়। ওই সময় তাঁরা পুলিশদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, এখনো কেন গুলি করছেন? এরপর পুলিশ তাঁদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করছিল।

আশুলিয়ার বাসিন্দা সানি মৃধা জবানবন্দিতে বলেন, তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে বাইপাইল এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেদিন বেলা আনুমানিক ২টা থেকে আড়াইটায় সময় জানতে পারেন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তখন তাঁরা বিজয় মিছিল বের করেন। ওই সময় আশুলিয়া থানার দিক থেকে অনেক গোলাগুলির শব্দ আসছিল। তাঁরা (ছাত্র-জনতা) আশুলিয়া থানার দিকে রওনা হন।

সানি মৃধা বলেন, থানার সামনে যাওয়ার পর তাঁর দুই পা, হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান সহযোদ্ধারা।

এ মামলায় আসামি ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন এখন কারাগারে। তাঁরা হলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও মো.

শাহিদুল ইসলাম (সাভার সার্কেল), ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।

বৃহস্পতিবার তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এই মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ আট আসামি পলাতক।

এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ হবে আগামী বুধবার। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ মামলাটির বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

জেরায় পুলিশ হত্যা, লুটপাট প্রসঙ্গ

জবানবন্দির পর আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা করেন সাক্ষী সানি মৃধাকে। জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে তাঁরা বাইপাইল এলাকায় বিজয় মিছিল করছিলেন। সে জায়গা থেকে আশুলিয়া থানার দূরত্ব এক কিলোমিটার উত্তরে। তিনি আশুলিয়া থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন।

জেরায় এ মামলার আসামি আবদুল্লাহিল কাফীর আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রশ্ন করেন, বিজয় মিছিলের সময় আশুলিয়া থানার আশপাশে সব পুলিশ সদস্যের বাড়ি লুট করা হয় এবং যেসব বাসায় পুলিশ সদস্য ভাড়া বাসায় থাকতেন, সেখানে তল্লাশি করে তাঁদের মারা হয়।

এর জবাবে সানি মৃধা বলেন, এ কথা সত্য নয়।

তখন আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, বিজয় মিছিল ঢাকা অভিমুখে গেছে, আশুলিয়া থানার দিকে যায়নি।

এর জবাবে সানি মৃধা বলেন, এ কথাও সত্য নয়।

আইনজীবী বলেন, সবাই যখন বিজয় উল্লাস করতে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করেছিল, সে সময় সানি মৃধাসহ কিছু ব্যক্তি আশুলিয়া থানা লুটপাট করতে যান এবং অজ্ঞাত ব্যক্তির গুলিতে তিনি (সানি মৃধা) আহত হন।

এ প্রশ্ন করতেই প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) আপত্তি জানায়। প্রসিকিউশন বলে, একজন জুলাই যোদ্ধাকে লুটপাটকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বা তাঁর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

পরে ট্রাইব্যুনাল প্রশ্নটি আপত্তিসহকারে নেন।

জেরায় সানি মৃধা বলেন, আশুলিয়া থানার সামনে মূল সড়কের ওপর একটি ওভারপাস (পদচারী–সেতু) আছে।

তখন সানি মৃধাকে আইনজীবী মিজানুর বলেন, পুলিশ সদস্য সোহেল রানা ও রাজু আহমেদকে মেরে ওভারপাসে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, তা দেখেছেন?

জবাবে সানি মৃধা বলেন, তিনি দেখেননি।

তখন ট্রাইব্যুনাল এটিকে (দুই পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা) ‘লিডিং কোশ্চেন’ (যে প্রশ্নে উত্তরের ইঙ্গিত থাকে) হিসেবে উল্লেখ করেন। পরে এটি আমলে নেননি ট্রাইব্যুনাল।

জেরায় আইনজীবী মিজানুরের আরেক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী সানি মৃধা বলেন, পুলিশ ভ্যানে কে আগুন দিয়েছে, তা তিনি দেখেননি।

পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো

মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুটি মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম এবং সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন বলে প্রথম আলোকে জানান প্রসিকিউটর তারেক আব্দুল্লাহ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় চট্টগ্রামে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অন্যদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের একটি মামলায় মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউটর তারেক আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, মশিউর রহমানকে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। গুমের শিকার ৩৫ জনের বেশি ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মশিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলার অপর আসামি বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য ব জয় ম ছ ল ল ইসল ম র রহম ন আইনজ ব প রস ক অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের জামিন

চেক ডিজঅনার মামলায় আদালতের নির্দেশে ২০ লাখ টাকা জমা দিয়ে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম ওরফে চাইনিজ রফিক। 

বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক আব্দুল বাশির মো. নাহিদুজ্জামান তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। 

আরো পড়ুন:

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে আটক ৯ দালালের কারাদণ্ড

গাজীপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৪ মামলায় জরিমানা

আসামি পক্ষের আইনজীবী নুরে আলম সিদ্দিকী আসাদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘২১ অক্টোবর আদালতের বিচারক রফিকুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক চেকে বর্ণিত সমপরিমাণ টাকার অর্ধেক অর্থাৎ ২০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসামি আলাদতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আপিল দায়ের করার শর্তে তাকে জামিন দিয়েছেন।’’ 

৬৩ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার প্রফেসরপাড়া মহল্লার আবুল কালাম আজাদের ছেলে। ২০১৩ সালের ২৭ মার্চ মামলা দায়ের করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রামকৃষ্টপুর মহল্লার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. হাম্মাদ আলী।

বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘আসামি রফিকুল ইসলাম ট্রেজারির মাধ্যমে আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলায় রায়ে আরোপিত জরিমানার অর্ধেক অর্থাৎ ২০ লাখ টাকা জমা দেন। পরে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আবেদন করলে ১ মাসের মধ্যে আপিলের শর্তে ৫০০ টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক। আইনে যেহেতু আপিলের বিধান রয়েছে, সেজন্য আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’’ 

মামলার আর্জিতে বাদী উল্লেখ করেন, ব্যবসার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা হাম্মাদ আলীর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ধার নেন বিএনপি নেতা রফিক। কিছুদিনের মধ্যে টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে তিনি গড়িমশি করেন। একপর্যায়ে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি হাম্মাদ আলীকে ১০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ টাকার চারটি চেক দেন রফিক। পরে হাম্মাদ আলী চেকগুলো জমা দিলে পর্যান্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক সেগুলো প্রত্যাখান করে ডিজঅনার সনদ দেয়। ব্যবসায়ী হাম্মদ আলী টাকা না পেয়ে ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি লিগ্যাল নোটিশ দেন রফিককে। এরপরও টাকা না দেওয়ায় ওই সালের ২৭ মার্চ চিফ জুডিসিয়াল আদালতে মামলা দায়ের করেন হাম্মাদ আলী। 
 

ঢাকা/শিয়াম/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ
  • জামিন পেলেন বিএনপি নেতা সাখাওয়াতসহ ৬ জন
  • জামিন পেলেন বিএনপি নেতা সাখাওয়াতসহ ৬ আসামি
  • মেট্রোরেল দুর্ঘটনা: স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের, প্রতিবেদন দিতে হবে ৩০ দিনে
  • ‎সাখাওয়াত- টিপুর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে আইনজীবী ফোরামের মানববন্ধন
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের জামিন
  • হাসিনা–ইনুর অডিওতে স্পষ্ট বলা আছে, কারফিউ হবে কিন্তু গুলি হবে না: আইনজীবী মনসুরুল
  • সালমান শাহ হত্যা মামলা: আগাম জামিন চাইবেন সামিরা
  • ইনু ও হানিফের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২ নভেম্বর