ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ
Published: 30th, October 2025 GMT
ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ৫ বছর আগে উচ্চ আদালতের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনা তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা প্রতিপালনের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এক রিটের ধারাবাহিকতায় আবেদনকারীপক্ষের করা সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি উর্মি রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর দিন রেখেছেন আদালত।
ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পরদিন ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আাদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দেন।
সম্প্রতি ঢাকার বায়ুদূষণের বিষয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২৮ অক্টোবর এইচআরপিবি সম্পূরক ওই আবেদন করে। আবেদনে ‘ঢাকার বাতাসে আরেক ক্ষতিকর ধূলিকণা’ শিরোনামে ২৭ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ, উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী মো.
আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গত বছর ঢাকায় বায়ুর মান উন্নত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিবাদীপক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বর্তমানে ঢাকার বায়ু দূষিত হয়েছে। ফলে বায়ুর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং ঢাকায় বসবাসরত মানুষের জীবনরক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। শুনানি নিয়ে আদালত ওই আদেশ দেন বলে জানান জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।
হাইকোর্টের ৯ দফার মধ্যে ঢাকা শহরে মাটি/বালু/বর্জ্য পরিবহন করা ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা; নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালু/সিমেন্ট/পাথর/নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা; সিটি করপোরেশনভুক্ত রাস্তায় পানি ছিটানো; রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দরপত্রের শর্ত পালন নিশ্চিত করা; সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচলের সময়সীমা নির্ধারণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ করা; পরিবেশগত সনদ ছাড়া চলমান টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা; মার্কেট/দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগে ভরে রাখা এবং বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করার বিষয়গুলো রয়েছে।
‘ঢাকার বাতাসে আরেক ক্ষতিকর ধূলিকণা’ শিরোনামে ২৭ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়, শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুসের সংক্রমণের জন্য দায়ী রেসপিরেবল সিলিকা (আরএস) বা একটি অতি ক্ষুদ্র ধূলিকণার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে রাজধানীর বাতাসে। শুষ্ক মৌসুমে বা নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এ ক্ষতিকর উপাদান বেশি পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও সহনীয় মাত্রার দ্বিগুণের বেশি এর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আপিল মঞ্জুর করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল চাইলেন জামায়াতের সেক্রেটারির আইনজীবী
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুর করে এ ব্যবস্থা পুনর্বহাল চাইলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। শুনানিতে তিনি বলেছেন, পুনরুজ্জীবিত হলেও এটি মুহূর্তে কার্যকর সম্ভব নয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার শুনানিতে এ কথা বলেন আইনজীবী শিশির মনির।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ চতুর্থ দিনের মতো শুনানি হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু হয়। মাঝে বিরতি দিয়ে চলে সোয়া একটা পর্যন্ত। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রাখা হয়েছে। আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়।
আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, আগামী নির্বাচন যেটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এই নির্বাচন ত্রয়োদশ সংশোধনীতে উল্লেখিত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আছে, ওই ব্যবস্থায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। এ-সংক্রান্ত সংবিধানের আগের ৫৮ অনুচ্ছেদে যে পরিস্থিতিতে পদ্ধতিটি প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে, সে পরিস্থিতি আপাতত নেই। আগের যে বিধান ছিল সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে—এই সরকার গঠিত হবে। সংসদ ভেঙে গেছে আরও এক বছরের বেশি সময় আগে। বর্তমানে কোনো সংসদ নেই, তাই সংসদ ভাঙারও প্রশ্ন আসে না।
শুনানিতে শিশির মনির আরও বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর করার আইনি কোনো বিধান বাংলাদেশে নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন করার ম্যান্ডেট আছে। নতুন সংসদের সিদ্ধান্তে আগের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আগের মতো থেকে যায় অথবা জুলাই সনদে উল্লেখিত নতুন কোনো প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা হলে সেই পদ্ধতিতে পরবর্তী সময় থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো২১ অক্টোবর ২০২৫আপিল মঞ্জুর করা উচিত, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা সমীচীন। তবে পর্যবেক্ষণ দেওয়া সমীচীন হবে না, যেহেতু বৃহত্তর সংস্কারপ্রক্রিয়া চলমান। জুলাই সনদ হয়েছে, আদেশ হবে, গণভোট হবে। পরবর্তী সংসদে এটি নিয়ে আলোচনা হবেমোহাম্মদ শিশির মনির, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবীতত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ধারণা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অনন্য ধারণা, এটিকে কেন্দ্র করে দেশে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে পুনঃপ্রবর্তনের জন্য আজও সেই ঐকমত্য আছে। তত্ত্বাবধায়ক শাসনব্যবস্থা একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া, যেটি দেশে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। আপিল মঞ্জুর করা উচিত, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা সমীচীন। তবে পর্যবেক্ষণ দেওয়া সমীচীন হবে না, যেহেতু বৃহত্তর সংস্কারপ্রক্রিয়া চলমান। জুলাই সনদ হয়েছে, আদেশ হবে, গণভোট হবে। পরবর্তী সংসদে—এটি নিয়ে আলোচনা হবে। এ জন্য সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ থাকা সমীচীন হবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ১৪ বছর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে (৪: ৩) রায় দিয়েছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ২৩ অক্টোবর ২০২৫রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। সে অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরই ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন। শিশির মনিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানিতে অংশ নেন।
আরও পড়ুনপঞ্চদশ সংশোধনই হাসিনাকে স্বৈরাচারে পরিণত করেছিল: বদিউল আলম১৯ জুলাই ২০২৫