তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলে ধ্বংস হয় গণতন্ত্র, শুরু হয় গুম-খুন: শুনানিতে জয়নুল আবেদীন
Published: 29th, October 2025 GMT
দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গুম-খুনের শুরুর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলকে কারণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সংকটের জন্য তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি দায়ী করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির মহাসচিবের করা আপিল–সংক্রান্ত শুনানিতে আজ বুধবার অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ এ মামলার পঞ্চম দিনের শুনানি হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন রাখা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠমতে দেওয়া রায় সর্বোচ্চ আদালতের অন্য সব রায়কে লঙ্ঘন করেছে দাবি করে জয়নুল আবেদীন বলেন, বিশেষ করে অষ্টম সংশোধনী মামলা, মাসদার হোসেন মামলাসহ অন্য সব মামলার রায়। সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রিম কোর্ট। এই ক্ষমতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না, যা ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সবাই কথা বলে। আগের যে সরকার, ফ্যাসিস্ট সরকার, সে–ও বলেছে, বিচার বিভাগের সব স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এমন স্বাধীনতা পেয়েছি যে “রাতের বেলায় কুপিবাতি জ্বালিয়ে” বিচার হয়েছে।’
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার ঠিক আগে বিচারপতি খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন।
বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তনের পটভূমি শুনানিতে তুলে ধরেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার আগেই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক সংক্ষিপ্ত রায় বদলে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন, যা অনৈতিক।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এ বি এম খায়রুল হক তাঁর রায়ে বলেছেন, সেখানে (তত্ত্বববধায়ক ব্যবস্থায়) কোনো বিচারপতি থাকতে পারবে না, তারা লাভবান হবে। কিন্তু সেই ক্রিমটা নিজে নিয়েছেন। তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থার জায়গাটা যিনি ধ্বংস করেছেন।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত আগস্টে বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার হন। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৪ বছর আগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন। এরপর বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জয়নুল আবেদীন শুনানি শুরু করলেন, সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ য ষ ঠ আইনজ ব ন র জন য ব যবস থ ব চ রপত আপ ল র আপ ল ব আওয় ম ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে মাস্ক পরা যুবক, এরপর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন
লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে থাকা বেশ কিছু মালামাল ও নথিপত্র পুড়ে গেছে। আজ শনিবার ভোর চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পেট্রল ঢেলে কক্ষটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভোরে মাস্ক পরা এক যুবক কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকছেন। কিছুক্ষণ পর কার্যালয়ের একটি কক্ষে আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। এর পরপরই মাস্ক পরা ওই যুবক আগের মতো দেয়াল টপকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন বলেন, ‘মাস্ক পরা এক যুবক পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। তখন কার্যালয়ের ভেতরে আমাদের নিরাপত্তা প্রহরী ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই নিরাপত্তা প্রহরী আগুনের বিষয়ে টের পেয়ে কে কে বলতেই মাস্ক পরা যুবক পালিয়ে গেছেন।’
মো. ফারুক হোসাইন আরও বলেন, স্টোররুমে দেওয়া আগুনে ২০০৮ ও ২০০৯ সালের ভোটারদের দ্বিতীয় ফরম পুড়ে গেছে। এ ছাড়া একটি অকেজো ডেস্কটপ, সিপিইউসহ কিছু সরঞ্জামও পুড়েছে। আগুন নেভাতে বেশি সময় লাগেনি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুর রশিদ বলেন, আগুনে অফিসের কিছু নথিপত্র পুড়ে গেছে। তবে বিষয়টি দ্রুত টের পাওয়ার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। দ্রুত আগুন নেভানো গেছে।
লক্ষ্মীপুরের জেলা নির্বাচন কার্যালয়