অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি বড় দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু করেছেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা। দাবানল ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল ঝোড়ো বাতাস। কয়েক দিন ধরে চলা প্রচণ্ড এই বাতাস কমে আসায় শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রণ আসতে শুরু করেছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে 

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার থেকে একযোগে শুরু হওয়া ছয়টি দাবানলে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির আশপাশের এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১০ হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

দাবানলে হাজার হাজার মানুষ হঠাৎ করে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ঘন ধোঁয়ার কারণে মার্কিন কর্মকর্তারা জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের পশ্চিম প্রান্তে প্যালিসেইডস এলাকার আগুন ও পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত টন এলাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শুক্রবারের আগ পর্যন্ত প্যালিসেইডস ও ইটনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার মাত্রা ছিল শূন্য শতাংশ। শত শত অগ্নিনির্বাপণকর্মী আকাশ ও মাটি থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালানোর পরও কয়েক দিন ধরে দাবানল ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। অবশেষে প্যালিসেইডসের আগুন ৮ শতাংশ এবং ইটনের আগুন তিন শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদিও এরই মধ্যে দাবানলের আগুনে এই দুই অঞ্চলের প্রায় ৩৪ হাজার একর পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন বাস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে সাফল্যের খবরও পাওয়া গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, আগামী সপ্তাহের শুরুতে বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সে জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসকে প্রস্তুত রাখা এবং জীবন বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করা আমাদের প্রথম কাজ।’

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচটি দাবানলের আগুন নেভাতে এখনো সংগ্রাম করছেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা। এসব দাবানলে লস অ্যাঞ্জেলেস ও ভেনটুরা কাউন্টিতে নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সবশেষ খবর অনুযায়ী, প্যালিসেইডসে ২০ হাজার একর পুড়ে গেছে। অঞ্চলটির আগুন ৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ইটনের আগুন ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুড়েছে ১৩ হাজার ৯৫৬ একর এলাকা। লিডিয়ায় ৩৯৫ একর পুড়েছে। নিয়ন্ত্রণে এসেছে ৭৫ শতাংশ আগুন। হার্স্ট অঞ্চলে ৭৭১ একর পুড়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে ৩৭ শতাংশ। আর কেনেথ অঞ্চলে ৩৫ শতাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। নতুন করে আগুন ছড়ানো রোধ করতে সক্ষম হয়েছেন অগ্নিনির্বাপনকর্মীরা।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সারা গায়ে আগুন নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে গেলেন ১৪৫০ ফুট দূরত্ব

ফ্রান্সের একজন অগ্নিনির্বাপণকর্মী নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। ৪১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি সারা শরীরে আগুন জ্বলা অবস্থায় ১ হাজার ৪৫০ ফুট পথ মোটরসাইকেল চালিয়ে অতিক্রম করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ফ্রান্সের কোট দ’অর এলাকায়।

জোনাথন ভেরো পেশায় অগ্নিনির্বাপণকর্মী হলেও শখের বশে স্ট্যান্টম্যানের কাজ করেন। আর এ কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই বিপদের মুখোমুখি দাঁড়ান তিনি। কিন্তু কোনো বিপদ বা দুর্ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

ছোটবেলা থেকেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠানোর অদম্য স্বপ্ন ছিল জোনাথনের। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতেই তিনি এমন বিপজ্জনক একটি কাজ করেছেন। এর আগেও জোনাথন দুবার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন।

বিশ্ব রেকর্ড গড়তে জোনাথন ভেরো ইয়ামাহা ড্র্যাগস্টার ১১০০ নামের একটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এটিকে আগুন প্রতিরোধী করে বিশেষভাবে প্রস্তুত করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ও আবহাওয়ায় সারা গায়ে আগুন নিয়ে মোটরসাইকেলটি চালানোর অনুশীলন করেন।

জোনাথন বলেন, রেকর্ড গড়ার দিন আবহাওয়া ছিল অনুকূলে। মোটরসাইকেল চালানোর রাস্তাটাও ঠিকঠাক ছিল। এ কারণে সারা শরীরে আগুন নিয়ে সফলভাবে নির্ধারিত দূরত্ব পার হতে পেরেছেন তিনি।

এর আগে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দুবার নির্ধারিত দূরত্ব পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গড়েন জোনাথন। এর মধ্যে একবার অক্সিজেন ছাড়া সবচেয়ে দ্রুত ১০০ মিটার দৌড়ান এবং আরেকবার একই অবস্থায় দৌড়ে সবচেয়ে দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেন।

জোনাথন ভেরো বলেন, আগের দুটি রেকর্ড গড়তে গিয়ে তিনি শারীরিকভাবে আহত হয়েছিলেন। শরীরের অনেক জায়গায় পুড়ে গিয়েছিল। পুরোপুরি সুস্থ হতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগেছিল। তবু তিনি গর্বিত। কারণ, ছোটবেলায় যে রেকর্ড বই তিনি পড়তেন, সেখানে নিজের নাম উঠেছে।

তবে প্রশিক্ষণ ছাড়া এ ধরনের কাজ অত্যন্ত বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জোনাথন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা গায়ে আগুন নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে গেলেন ১৪৫০ ফুট দূরত্ব