শুনেছি, বিপ্লবের পরে নাকি প্রতিবিপ্লব ঘটে। কিন্তু বিজয়ের পরে যে বিপর্যয় আসে, সে তো নিজের চোখেই দেখলাম। কত রক্ত, কত আত্মত্যাগের বদলে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো! সে তো কেবল এক দিনে নয়। চব্বিশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম আমাদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছিল বিজয়ের এই ক্ষণটির জন্যে। পঁচিশে মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর আক্রমণ সেই সংগ্রামের শেষ অধ্যায় রচনা করেছিল বিদ্যুৎগতিতে। আজ তো মুছেই দেওয়া হচ্ছে চব্বিশ বছরের সংগ্রামের সেই ইতিহাস। মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটা সামরিক সংঘাতের বিষয়। ভ্রাতৃপ্রতিম পাকিস্তানি সেনাদের স্বদেশে পাঠিয়ে দিয়ে এই ভূখণ্ডের কর্তৃত্ব দখল করাই ছিল বুঝি এর একমাত্র উদ্দেশ্য।
ওই চব্বিশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসকে অপ্রাসঙ্গিক করে না ফেললে ১৯৭২ সালের সংবিধানে গৃহীত রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিগুলো নষ্ট করা যেত না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আবার কী, ধর্মনিরপেক্ষতা তো ভারতীয় ধারণা, সমাজতন্ত্র তো রুশ প্রতীতি—ওসব আবার কেন? গণতন্ত্র চাই বটে, কিন্তু তাও কি যখন-তখন? গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যেই তো জারি হয় সামরিক শাসন—একবার ফিরিয়ে যদি দেখা যায় জনসাধারণ উপযুক্ত হয়নি গণতন্ত্রলাভের, তবে আবার দিতে হয় সামরিক শাসন। যাঁরা সামরিক শাসন জারি করেন, তাঁদের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার। যত শীঘ্রসম্ভব তাঁরা ফিরে যেতে চান নিজের কাজে—শুধু আম-জনতার মঙ্গলের জন্যে তৈরি করেন একটি রাজনৈতিক দল, জনগণের ইচ্ছা পূরণ করতেই কেবল রয়ে যান শাসনক্ষমতায়। তাঁরা যখন আবির্ভূত হন, জনসাধারণ হাততালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় তাঁদের, রাজনীতিবিদদের একটা অংশ দৌড়ে গিয়ে অভিনন্দন জানায়—খুদকুঁড়ো কিছু পাওয়ার আশায়। তারপর একদিন অতিষ্ঠ মানুষ অনেক রক্ত ঝরিয়ে উচ্ছেদ করে শাসকদের। অথবা শাসকদের নিজেদের দ্বন্দ্বে রক্ত ঝরে আরও, ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। আবার মানুষের উত্থান, আবার গণতন্ত্রের ফিরে আসা।
আজ তো মুছেই দেওয়া হচ্ছে সেই সংগ্রামের সেই ইতিহাস। মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটা সামরিক সংঘাতের বিষয়। ভ্রাতৃপ্রতিম পাকিস্তানি সেনাদের স্বদেশে পাঠিয়ে দিয়ে এই ভূখণ্ডের কর্তৃত্ব দখল করাই ছিল বুঝি এর একমাত্র উদ্দেশ্য।আনিসুজ্জামান (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭—১৪ মে ২০২০).উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ: ফখরুল
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে “বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার এক নতুন অধ্যায়” হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এবারকার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৃহস্পতিবার এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, “তফসিল ঘোষণা শুধু নির্বাচনসূচি নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার এক গুরুত্বপুর্ণ মুহূর্ত। দেশের জনগণ বহু অপেক্ষার পর যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছে, তার সূচনা এই তফসিল।”
আরো পড়ুন:
সারা দেশে ‘রোড শো’ করবে বিএনপি, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ
বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া
অতীতের মতো কোনোরূপ পক্ষপাত, প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি মুক্ত, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘জনগণই দেশের মালিক। তাদের রায়কে সম্মান জানানো এবং ভোটের অধিকার রক্ষা করাই বিএনপির মূল অঙ্গীকার।’’
ফখরুল আরও দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলকে সামনে রেখে বিএনপি মাঠে শক্তিশালীভাবে উপস্থিত থাকবে এবং গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা চাই একটি সুষ্ঠু পরিবেশ, সমান সুযোগ, পর্যাপ্ত স্বাধীনতা এবং সব দলের জন্য মাঠ সমতল রাখা হোক। জনগণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চায়।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, তফসিল ঘোষণার পর দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচনের পরিবেশ দেখতে পাবে।
ফখরুল আরও বলেন, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা জনগণকে সতর্ক করেছে। তাই এবার তারা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সচেতন ও রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি নির্ধারক সময়। দেশের গণতন্ত্র, ভবিষ্যৎ এবং নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন রক্ষায় এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা/আলী//