প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে: সালাহউদ্দিন
Published: 13th, December 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানের মুখ শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ডেকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে এক থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে দূরত্ব এবং পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য চলার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই আহ্বান এল।
১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে গুলি করা হয় ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদি এখন আশঙ্কিজনক অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় যখন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন রাজনৈতিক নেতারা, তখন তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকে ডাকেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিরোধ সভায় সব রাজনৈতিক দলকে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানান।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, আগামীকাল এবং পরশুও শাহবাগ অথবা শহীদ মিনারে যে প্রতিরোধ সভা হবে। সেখানে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে, সেই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি তাতে অংশ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাস রুখতে হলে ঐক্য ধরে রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঐক্যটা দেখাতে চাই। ফ্যাসিবাদবিরোধী, সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্যটা দেখাতে চাই। এটাই হবে আমাদের শক্তি।’
আরও পড়ুনতফসিলের পরদিন ‘প্রার্থী’ গুলিবিদ্ধ১১ ঘণ্টা আগেক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা নাকচ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই জাতীয় ঘটনা, দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে যদি পতিত ফ্যাসিবাদ মনে করে, বাংলাদেশের নির্বাচন রুখতে পারবে—এটা ভুল ধারণা।’
ওসমান হাদির ওপর হামলার পর জাতীয় নির্বাচনে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি আরও বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা করছে কি না, জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এ জাতীয় যেকোনো রকমের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে সরকারের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব আছে, জনগণের সচেতনতাও জরুরি। সে জন্য আমরা বলেছি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যৌথ বাহিনী এবং সরকার, জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে যদি আমরা এগুলোকে মোকাবিলা করি, ইনশাআল্লাহ এ ধরনের ঘটনা আমরা বন্ধ করতে পারব।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় দেড় যুগের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরতে যাচ্ছেন। তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বিভিন্ন সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়।
আরও পড়ুনহাদির ওপর হামলার চরিত্র ভিন্ন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ৭ ঘণ্টা আগেআজকের বৈঠকে তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এই বিষয়টা আজ এখানে আলোচনা হয়নি। অবশ্যই বিষয়টা আমাদের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা দলীয়ভাবেও চেষ্টা করব, সরকারকেও আহ্বান জানাব, যাতে ওনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।’
আরও পড়ুনদেশ অত্যন্ত সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে: তারেক রহমান২০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহ ব ন জ ন য় ছ স ল হউদ দ ন হ দ র ওপর র জন ত ক ব এনপ র র আহ ব সরক র ওসম ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: ‘তফসিল হয়েছে, তবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের বাম দলগুলো।
তারা দাবি করছেন, তারিখ ঘোষণার পরও মাঠে এখনো কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি,বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তাই ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন জরুরি।
আরো পড়ুন:
অসত্য তথ্য ছড়ানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ: সিইসি
তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “১৭ বছর পর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে এই তফসিল। জনগণও নিজেদের দল ও প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, “একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট-বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে নতুন অভিযাত্রার ইঙ্গিত হলেও সামনে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে।”
“একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন, তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের আস্থা ফেরানো জরুরি। ভোটে টাকার খেলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে”, বলেন সাইফুল হক।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তফসিল ঘোষণায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এখন থেকে প্রতিটি মুহূর্তে ইসি ও সরকারকে এমন সব পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দেখলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে, এবার সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।”
তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “প্রার্থী হওয়া ও ভোট দেওয়ার সমান সুযোগ সবার জন্য নিশ্চিত করতে ইসিকে আরো সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদকে পুনর্গঠন করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতার বার্তা আরো দৃশ্যমান করতে হবে।”
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “বহুল প্রত্যাশিত তফসিল ঘোষণায় স্বস্তি এসেছে, তবে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ এখনো মসৃণ নয়।”
“নির্বাচনকে টাকার প্রভাব, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা এবং প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত করতে হবে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে”, যোগ করেন তিনি।
সরকার, ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এবং জরুরি উদ্যোগ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।
ঢাকা/এএএম/রাসেল