বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচি: নয়াপল্টনে এসে মিলছে সব পথের মিছিল
Published: 13th, December 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ-মিছিল করছে বিএনপি।
একই সঙ্গে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এই কর্মসূচিতে।
আরো পড়ুন:
গুলি হাদির মাথার ডান দিক দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে বেরিয়ে গেছে: ডিজি
হাদিকে গুলি: ‘রিকশা থেকে ভেসে আসছিল বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার’
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেছেন। মিছিলগুলোতে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা হাতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা বহন করছেন। তারা হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাসমুক্ত ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে বিরোধী প্রার্থী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ভয়ভীতি দেখাতে এই ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে। শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাকে তারা নির্বাচনি পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেন।
তাদের দাবি, অবিলম্বে হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তারা প্রশাসনের প্রতি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং সব প্রার্থী ও ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তোলেন।
বিএনপির এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
দলটি জানিয়েছে, হামলার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
শুক্রবার জুম্মার পর গণসংযোগে থাকা ওসমান হাদির ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। পুলিশ বলছে, এরই মধ্যে হামলায় জড়িত একজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। হামলাকারীদের ধরতে পুরষ্কারও ঘোষণা করেছে পুলিশ।
ঢাকা/আলী/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ মল ব এনপ ন শ চ ত কর দ র ওপর ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে
একাত্তরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মাদারীপুর সদর ছাড়া বাকি সব থানা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। পাকিস্তানি বাহিনী তখন মাদারীপুর শহরে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাই সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা শহরের চারপাশ থেকে একযোগে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাবেন। ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই পক্ষের যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে ১০ ডিসেম্বর মুক্ত হয় মাদারীপুর সদর।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ (৭) বইয়ে লেখা আছে, পাকিস্তানি বাহিনী ২২ এপ্রিল মাদারীপুরে বিমান হামলা চালায়। এর দুই দিন পর ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী মাদারীপুর সদরে ঢুকে। পরের দিন সদরের কুলপদ্দী গ্রামে ১৬ জনকে এবং নমোপাড়ায় ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। জুন পর্যন্ত চলতে থাকে তাদের হত্যা, অত্যাচার ও বর্বরতা।
একই বইয়ে লেখা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালান তাঁরা। এই অঞ্চলে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক মিলে গঠিত ‘খলিল বাহিনী’ মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
‘খলিল বাহিনী’র প্রধান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বরের তিন দিনের লড়াইটি ছিল ভয়ানক। তবে মুক্তিবাহিনী সব দিক ঘিরে আক্রমণ চালানোয় পাকিস্তানি বাহিনীর পালানোর পথটিও বন্ধ হয়ে যায়। তাদের আত্মসমর্পণের দৃশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিন দিনের ওই যুদ্ধের কথা আছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর–আট) বইয়ে। সেখানে লেখা হয়েছে, ৮ ডিসেম্বর মাদারীপুর সদরে মুক্তিযোদ্ধাদের কলাগাছিয়া প্রধান ক্যাম্পে খবর আসে, পাকিস্তানি বাহিনী মাদারীপুর ছেড়ে ফরিদপুরের দিকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পাঠানো হয়। তাঁরা পাকিস্তানি বাহিনীর চলে যাওয়ার পথ ধরে অবস্থান নেন।
একই বইয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী আটটি ট্রাক ও একটি সামরিক গাড়িতে করে তাদের দোসর রাজাকার–আলবদরসহ তল্পিতল্পা নিয়ে মাদারীপুর ছেড়ে রওনা দেয়। ঘটকচর ব্রিজ পার হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী কিছু দূর এগোতেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা পেছন থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। এতে পাকিস্তানি বাহিনী সামনে এগোতে থাকলে প্রচণ্ড শব্দে মাইনের বিস্ফোরণ হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর দুটি গাড়ি ধ্বংস হয়ে ব্রিজসহ নিচে পড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পুরোনো বাংকারগুলোতে আশ্রয় নিয়ে পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করে।
বইটিতে লেখা হয়েছে, ৯ ডিসেম্বর সারা দিন ও সারা রাত ধরে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলে। ১০ ডিসেম্বর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা মাইকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তাতে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা বাংকার থেকে রাইফেলের মাথায় সাদা জামা উঁচিয়ে দেখায়। বাংকার থেকে বের হয়ে পাশের খালে নেমে পানি পান করে, গাড়ির মধ্যে রাখা শুকনো খাবার খায়। এরপর বাংকারে গিয়ে হঠাৎ করে মুক্তিবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা নাগাদ পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মাদারীপুর পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়। বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।