ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. রাব্বি মিয়া (২০) নামের এক তরুণ আহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। গুলির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে আহত রাব্বির মা জোহরা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

গুলিবিদ্ধ রাব্বি উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে রাব্বি পরিবারের সঙ্গে নবীনগর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিকাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নবীনগর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো.

আতাউর রহমান (৪৮), জাহিদ মিয়া (১৯), জুবায়েদ মুন্সী (১৯), মো. আহসান উল্লাহ (৪৪) ও মো. জসিম উদ্দিন (৪৪)। তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশিদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. সানি (২০) ও একই পাড়ার মো. জিসানের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও তর্ক হয়। একপর্যায়ে ঝগড়ার সময় সানি জিসানকে ছুরিকাঘাত করেন। এ ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ সালিস ডাকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার কালীবাড়ি মোড়ের জমিদারবাড়ির মাঠে সানিসহ তাঁর লোকজন ও জিসানসহ তাঁর লোকজন সালিসে বসেন।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রাব্বি সানির পক্ষের সমর্থক। তবে সালিসের রায়ে সানি ও তাঁর লোকজন সম্মত হননি। সালিস ছেড়ে ওঠার সময় জিসানসহ তাঁর লোকজন সানির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে জিসান বন্দুক বের করে গুলি করেন। এতে রাব্বি গুলিবিদ্ধ হন এবং প্রতিপক্ষের হামলায় সানি আহত হন।

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাব্বিকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তরুণের বুকের বাঁ পাশের পাঁজরে গুলি লেগেছে।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গুলির ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ল কজন র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষককে হেনস্তা করলেন ডাকসু নেতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীনকে হেনস্তা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক যুবাইর বিন নেছারী (এ বি জুবায়ের)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ওই শিক্ষককে হেনস্তা করেন তিনি। একপর্যায়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দীন দৌড়ে পালাতে গেলে তাঁকে ধাওয়া করেন এ বি জুবায়ের। পরে অবশ্য ওই শিক্ষক একটি গাড়িতে করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

বেলা দুইটার দিকে এ ঘটনার পর এ বি জুবায়ের এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ পাঁচজন শিক্ষক ক্যাম্পাসে গোপন বৈঠকে যুক্ত হয়েছিলেন। খবর পেয়ে তাঁদের পাকড়াও করে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। তবে আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা গাড়িতে তাঁরা পালিয়ে গেছেন।

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আ ক ম জামাল উদ্দীনসহ আওয়ামী লীগপন্থী কয়েকজন শিক্ষক আজ দুপুরে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে এসেছিলেন। খবর পেয়ে কিছু শিক্ষার্থী ওই ভবনের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে ডাকসু নেতা এ বি জুবায়েরের নেতৃত্বে আ ক ম জামাল উদ্দীনকে ধাওয়া দেওয়া হয়।

এ বি জুবায়ের গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। জুবায়ের স্বতন্ত্রভাবে ডাকসুতে নির্বাচিত হলেও তাঁর প্রতি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থন ছিল বলে ক্যাম্পাসে আলোচনা আছে। ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ দোকান, হকার, মাদকসেবী ও ভবঘুরে উচ্ছেদে ‘অভিযান’ চালিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তখন পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হেনস্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সিঁড়িতে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীনকে জাপটে ধরে আটকানোর চেষ্টা করছেন জুবায়ের। অধ্যাপক জামাল নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তাঁর পরিহিত হুডি খুলে ফেলেন। একপর্যায়ে সিঁড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন ডাকসু নেতা জুবায়ের ওই শিক্ষকের পিছু ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে অধ্যাপক জামাল একটি গাড়িতে উঠে পড়েন। তখনো গাড়ির দরজা ধরে তাঁকে টেনে নামানোর চেষ্টা করছিলেন জুবায়ের।

ঘটনার পর এই ভিডিও নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ডাকসু নেতা এ বি জুবায়ের। সেই পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘স্বঘোষিত রাজাকারের বাচ্চাগুলোরে ধইরা ধইরা ব্রাশফায়ার দিতে হবে বলা আওয়ামী লীগের কুলাঙ্গার শিক্ষক আ ক ম জামাল, নীল দলের পোস্টেড নেতা জিনাত হুদাসহ ৫ জন ফ্যাসিস্টের দোসর শিক্ষক আজকে ক্যাম্পাসে এসে গোপন মিটিংয়ে যুক্ত হয়েছিল। খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে পাকড়াও করে পুলিশে দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আনফরচুনেটলি আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায় কুলাঙ্গারগুলো! ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা এদের ক্লাস-পরীক্ষা সব বয়কট করেছে। তারপরও এরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সাহস কীভাবে পায়! প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে। খুনিদের সাথে কোনো সহাবস্থানের সুযোগ নেই। সবগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে হবে শীঘ্রই।’

অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক ছিলেন। এ সংগঠনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। একপর্যায়ে মঞ্চে বিভক্তি তৈরি হলে সংগঠনের একটি পক্ষ অধ্যাপক জামালকে বহিষ্কারও করেছিল। তবে এরপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে কার্যক্রম চালিয়ে যান।

ঘটনার বিষয়ে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গত মাসে তাঁকে নীল দলের আহ্বায়ক করা হয়। নীল দলের পক্ষ থেকে তাঁরা কয়েকজন শিক্ষক আজ দুপুরে উপাচার্যের কাছে একটি স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার সময় তিনিসহ কয়েকজন শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে যান চা খাওয়ার জন্য। চা খেয়ে যখন সেখান থেকে বের হন, তখন তিন-চারজন ছাত্র তাঁদের সামনে ব্যারিকেড দেন যে তাঁদের এখান থেকে যেতে দেবেন না।

অধ্যাপক জামালের ভাষ্য, ‘একপর্যায়ে তারা আমার গায়ে হাত দেয়, হামলা করে। তারা আমার ব্যাংক কার্ড, ক্রেডিট কার্ড—সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা কি আমাকে এভাবে হামলা করতে পারে? আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী তার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ডাকসুর একজন প্রতিনিধি হয়ে কি এ ধরনের কাজ করা যায়?’

ঘটনার সময় অধ্যাপক জামাল উদ্দীনের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকদের হেনস্তা করা, তাঁদের ওপর হামলা করা এখন একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এ ঘটনাকে হত্যাচেষ্টা হিসেবেই দেখি। আমার শিক্ষকতাজীবনে আমি কখনো এ ধরনের ঘটনা দেখিনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও উপাচার্য এখনো আমাদের খোঁজ নেননি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেসিকে দেখতে না পেয়ে কলকাতায় গ্যালারিতে ভাঙচুর, দর্শক নেমে পড়লেন মাঠে
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষককে হেনস্তা করলেন ডাকসু নেতা
  • ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি হওয়া ৯৪ ভরি সোনা উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫
  • ১৪৫ ভরি স্বর্ণ লুট, পুলিশ-সাংবাদিক-কৃষকলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৫