সড়কের পাশে মাটি খুঁড়ে পা থেকে কোমর পর্যন্ত পুঁতে রাখা হয়েছে এক যুবককে। মুখ কালো করে আছেন আটকে থাকা ওই যুবক। তাঁর পাশে ফেস্টুনে লেখা ‘মা মারার শাস্তি ‘। অপর ফেস্টুনে লেখা ‘বাপ-মার গায়ে হাত তোলায় তার এই শাস্তি দেওয়া হলো’

আজ শনিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই যুবকের নাম মো.

খলিল (৩২)। তিনি ওই গ্রামের মো. নুরুদ্দীনের ছেলে।

মাকে মারধরের শাস্তি হিসেবে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা শাস্তি হিসেবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, খলিল দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। মায়ের অনুমতি নিয়ে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয় বলেও দাবি তাঁদের।

প্রতিবেশীরা বলেন, আজ সকালে মায়ের কাছে মাদক সেবনের জন্য টাকা চেয়েছিলেন খলিল। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে খলিল উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে ইট দিয়ে মাকে আঘাত করেন। একপর্যায়ে লাঠি দিয়েও আঘাত করেন।

প্রতিবেশীদের ভাষ্য, খলিল দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত হয়ে নানা অপরাধ করে যাচ্ছেন। অনেকবার তাঁকে গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। মুচলেকা দিয়ে তিনি আবার মাদকের টাকার জন্য মা-বাবার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. তোতা মিয়া বলেন, আজকের ঘটনায় খলিলের মা নিজেই ছেলেকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এলাকার লোকজন জড়ো করেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে ছেলেকে ভয় দেখাতে মাটিতে পুঁতে রাখার পরামর্শ দেন। এরপর এলাকার লোকজন মিলে তাঁকে ভয় দেখাতে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক বাসিন্দা বলেন, মা নিজেও সেখানে উপস্থিত থেকে খলিলকে মাটিতে পুঁতে রাখার কাজে অংশ নিয়েছেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে খলিল মাটি সরিয়ে সেখান থেকে পালাতে চাইলে তাঁকে আবার ধরে আটকে রাখা হয়।

খলিলের মা খোদেজা খাতুন বলেন, মাদকাসক্ত হয়ে ছেলে দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে মারধর করছে। শনিবার সকালেও মারধর করে। তাই এলাকাবাসীকে তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন। ছেলেকে ভয় দেখাতে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

খলিলের বাবা মো. নুরুদ্দীন বলেন, ছেলে তাঁকেও কয়েকবার মারধর করেছে। তার কারণে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে বর্তমানে আলাদা থাকছেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছির আহমদ বলেন, কাউকে মাটিতে পুঁতে রাখা আইনসম্মত নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় নারী শিক্ষার্থীকে চড় মারার ভিডিও ছড়ানো হলো ফেসবুকে

কুমিল্লায় বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে চড় মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এক মাস আগের ওই ঘটনার ভিডিও গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় এক মাস আগে প্রকাশ্যে চড় মারার ওই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত তরুণের নাম মোহাম্মদ জিহাদ। তিনি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পাশের একটি সড়কে ইউনিফর্ম পরা পাঁচজন নারী শিক্ষার্থী। তাদের একজন এক তরুণের সঙ্গে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। তখন দৌড়ে গিয়ে এক তরুণ ওই নারী শিক্ষার্থীকে চড় মারে। এ সময় ওই তরুণের সঙ্গে থাকা আরেকজন পুরো ঘটনাটির ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে।

মেয়েটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল আঙিনার বাইরে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাটি প্রায় এক মাস আগে ঘটলেও এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কাউকে কিছু জানায়নি বা কোনো অভিযোগ করেনি। গতকাল (শুক্রবার) ভিডিওটি আমাদের নজরে আসে। এরই মধ্যে আমরা আজ সকালে বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসেছি। দ্রুতই অভিভাবকদের নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’

ঘটনাস্থলের পাশের একটি দোকানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বখাটেরা অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। তারা বিভিন্ন সময় মেয়েদের বিরক্ত করে। প্রায় এক মাস আগে আমার দোকানের পাশেই ঘটনাটি ঘটেছে। কতটা অমানুষ হলে নির্যাতনের পর ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। শুনেছি, ছেলেটির পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী, তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জিহাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। আপনার মাধ্যমেই ঘটনাটি জানলাম। এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না। আমি পুরো ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘গতকাল বিষয়টি জানতে পেরে ছেলেটির বাবাকে ডেকে আনা হয়েছে। এরই মধ্যে দুই পক্ষকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। আমরা মেয়েটি ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ