এক বছর বন্ধ থাকার পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা রাখাইনের মংডু টাউনশিপের উত্তরে বলিবাজার, সায়েরবিল ও তরুব্রু এলাকা এবং নাফ নদীর তোতার দ্বীপে গোলাগুলি হয়। গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কে আছেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্তের বাসিন্দারা।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, টানা এক বছর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। আজ কয়েকটি মর্টারশেল বিস্ফোরণে হোয়াইক্যং সীমান্তের তুলাতলী, খারাইংগা ঘোনা, বালুখালীসহ কয়েকটি গ্রাম কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে মানুষ ছোটাছুটি শুরু করেন। নাফ নদীতে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। ওপারের কয়েকটি গুলি হোয়াইক্যং সীমান্তের কয়েকটি ঘরবাড়িতে এসে পড়ে। এতে কয়েকটি বাড়ির টিনের চালা ছিদ্র হলেও কেউ হতাহত হননি।

এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বক্তব্য পাওয়া যায়নি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইনামুল হাফিজ নাদিম প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

সীমান্তের কয়েকটি সূত্র জানায়, বেশ কয়েক দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির অবস্থানে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে সরকারি বাহিনী। আবার আরাকান আর্মির সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়েছে মিয়ানমারের তিনটি রোহিঙ্গা সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা), আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরআরএসও) ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের বাহিনী।

নাফ নদীতে মাছ ধরা স্থানীয় কয়েকজন বাংলাদেশি জেলে বলেন, ভোর রাতে ওপার থেকে ছোড়া কয়েকটি গুলি নদীতে পড়েছে। একটি মর্টারশেলও পড়েছে। নাফ নদীর মিয়ানমারের জলসীমায় জেগে ওঠা বিলাসীর দ্বীপ ও তোতার দ্বীপ এলাকায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে ওই গোলাগুলি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক খোকন চন্দ্র রুদ্র বলেন, আজ ভোর থেকে ওপারে (রাখাইনে) ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি গুলি টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং এলাকার লোকজনের ঘরবাড়িতে এসে পড়েছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ওপারে কেন ও কার সঙ্গে গোলাগুলি হচ্ছে, তিনি জানেন না। নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড তৎপর আছে।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ওপার থেকে আসা গুলি এপারের চার ব্যক্তির বাড়িতে পড়েছে। এর মধ্যে বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল কুদ্দুস ও সরওয়ার আলমের বাড়ি আছে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোরে ওপারের গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিস্ফোরণে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। ঘরবাড়ি কাঁপতে থাকে। বাইরে গিয়ে একটি গুলির খোসা পেয়েছেন।

আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘একটি গুলি এসে তাঁর ঘরের টিনের চালে পড়েছে। তাতে পরিবারের সদস্যদের ঘুম ভেঙে যায়।’ সরওয়ার আলম বলেন, গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘরের এক কোণে নিরাপদ আশ্রয় নেন। এ সময় হঠাৎ একটি গুলি এসে তাঁর ঘরের টিনের চালে আঘাত করে। চাল ফুটো হয়ে গুলিটি ঘরের ভেতরে পড়ে।

টানা ১১ মাস যুদ্ধের পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের ৮০ শতাংশ (২৭১ বর্গ কিলোমিটার) এলাকা দখলে নেয় আরাকান আর্মি। ১১ মাসের ওই যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে শত শত মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তখন থেমে থেমে কেঁপে উঠত টেকনাফ সীমান্ত। এরপর টানা এক বছর বিস্ফোরণের শব্দ পাননি সীমান্তের বাসিন্দারা। এখন নতুন করে বিস্ফোরণ ও ঘরবাড়িতে গুলি এসে পড়ায় আতঙ্কে ভুগছেন সীমান্তের অন্তত ১০ হাজার বাসিন্দা। ঝুঁকিতে আছেন নাফ নদীতে মাছ ধরা কয়েক হাজার জেলে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র খ ইন র জ য আর ক ন আর ম ঘরব ড় ত ন ফ নদ র আলম আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় নারী শিক্ষার্থীকে চড় মারার ভিডিও ছড়ানো হলো ফেসবুকে

কুমিল্লায় বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে চড় মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এক মাস আগের ওই ঘটনার ভিডিও গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় এক মাস আগে প্রকাশ্যে চড় মারার ওই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত তরুণের নাম মোহাম্মদ জিহাদ। তিনি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পাশের একটি সড়কে ইউনিফর্ম পরা পাঁচজন নারী শিক্ষার্থী। তাদের একজন এক তরুণের সঙ্গে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। তখন দৌড়ে গিয়ে এক তরুণ ওই নারী শিক্ষার্থীকে চড় মারে। এ সময় ওই তরুণের সঙ্গে থাকা আরেকজন পুরো ঘটনাটির ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে।

মেয়েটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল আঙিনার বাইরে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাটি প্রায় এক মাস আগে ঘটলেও এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কাউকে কিছু জানায়নি বা কোনো অভিযোগ করেনি। গতকাল (শুক্রবার) ভিডিওটি আমাদের নজরে আসে। এরই মধ্যে আমরা আজ সকালে বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসেছি। দ্রুতই অভিভাবকদের নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’

ঘটনাস্থলের পাশের একটি দোকানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বখাটেরা অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। তারা বিভিন্ন সময় মেয়েদের বিরক্ত করে। প্রায় এক মাস আগে আমার দোকানের পাশেই ঘটনাটি ঘটেছে। কতটা অমানুষ হলে নির্যাতনের পর ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। শুনেছি, ছেলেটির পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী, তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জিহাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। আপনার মাধ্যমেই ঘটনাটি জানলাম। এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না। আমি পুরো ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘গতকাল বিষয়টি জানতে পেরে ছেলেটির বাবাকে ডেকে আনা হয়েছে। এরই মধ্যে দুই পক্ষকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। আমরা মেয়েটি ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ