ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে যারা হত্যার চেষ্টা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। না হলে ১৫ ডিসেম্বর শহীদ মিনার থেকে এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালিত হামলার প্রতিবাদে ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজিত ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাবেশ ও গণ প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই কর্মসূচির সভাপতি হিসেবে এই ঘোষণা দেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

মাহমুদুর রহমান বলেন, এই সরকার জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। হাদির ওপরে হঠাৎ করে আক্রমণ হয়নি। তাঁর ওপর যে আক্রমণ হবে সেটা বারেবারে জানান দেওয়া হয়েছে। আজক জুলাই যোদ্ধাদের ওপরে আক্রমণ করা হচ্ছে। ফুয়াদ (এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক) আক্রান্ত হয়েছে। জুবায়ের (ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক যুবাইর বিন নেছারী বা এ বি জুবায়ের) বলে গেলেন, টেলিফোনে হুমকি আসছে। অথচ এই সরকার ভদ্রতা দেখাচ্ছে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো কম্বিং অপারেশন চালাতে পারে নাই। অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের কোনো অ্যাকশন তারা দেখাতে পারে নাই।

মাহমুদুর রহমান বলেন, হাদিকে যারা হত্যা করার চেষ্টা করেছে, সেই আততায়ীদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে ১৫ ডিসেম্বর শহীদ মিনার থেকে এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তাঁরা দ্বিতীয়বার বিপ্লব করে অসম্পূর্ণ বিপ্লব পূর্ণ করবেন। যাতে করে সব রাজনীতিবিদ বলতে বাধ্য হয়, এবার বাংলাদেশে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে।

আজকের এই সমাবেশ থেকে ১৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেলা ৩টায় সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।

‘ফ্যাসিস্টদের কোনো স্পেস হবে না’

এই কর্মসূচিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গতকালের গুলিটা ওসমান হাদির মাথা দিয়ে ফুটু করা যায় নাই। এটা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষকে ফুটু করে গেছে।’

বাংলাদেশের শত্রু আওয়ামী লীগ এবং ভারত উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন,  বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টদের কোনো ধরনের কোনো স্থান হবে না। সে যেই নামেই থাকুক না কেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এখন গুলশানে জাতীয় পার্টির নামে তারা আবার ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। ওসমান হাদি ভাইয়ের রক্তের শপথ, ওদেরকে বাংলাদেশে এক ইঞ্চিও জায়গা দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুনওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার১ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে না

ওসমান হাদি যেন বেঁচে ওঠেন সেজন্য দেশবাসী দোয়া করছে উল্লেখ করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যাঁরা ওসমান হাদির নামটা পর্যন্ত সুন্দর করে উচ্চারণ করতে পারেন না, যাঁরা ইনকিলাব মঞ্চের নাম শোনেন নাই, তাঁরা আগামী দিনের বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন। এটাই হচ্ছে আগামী দিনের রাজনীতির মূল তত্ত্বকথা।

আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সঙ্গে বেইমানি করে, বাংলাদেশকে আবার নতুন করে দিল্লির কাছে বেচে দেওয়ার সেই নাটক মঞ্চস্থ চলছে। বক্তব্য খুব পরিষ্কার, বাংলাদেশ ৫ আগস্টের অতীতে ফিরে যাবে না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ফিরে আসতে পারবে না। বাংলাদেশে দিল্লির দাসত্ব কায়েম হবে না।

‘হাদির ওপর হামলা মানে জুলাই বিপ্লবের ওপর হামলা’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, গতকাল এই বর্বরোচিত কাপুরুষোচিত হামলা শুধু ওসমান হাদির ওপরে হয়নি, হামলা হয়েছে বাংলাদেশের ওপর। হামলা হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর, হামলা হয়েছে জুলাই বিপ্লবের ওপর।

মামুনুল হক বলেন, বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর থেকে বহুদিন পর্যন্ত তিনি একটি কথা অনুভব করেছেন, সেটি হলো জুলাই বিপ্লবের অংশীজনদের মধ্যে বিভক্তি নতুন করে পরাজিত শক্তিকে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের পথ তৈরি করবে। অনেক চিৎকার করেও তিনি জুলাই বিপ্লবের অংশীজনদেরকে এ কথাটা বোঝাতে পারেননি।

আজকের সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। সমাবেশ শেষে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ থেকে টিএসসির দিকে যান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওসম ন হ দ আবদ ল ল হ দ র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে এবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলা ও হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত থেকে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ ও কর্মসূচি চলছে।

যবিপ্রবিতে শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের আবাসিক হল ও প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে শেষ হয়। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে দোয়া ও সম্মিলিত মুনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘হাদির ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল আলিম সামি বলেন, “হাদির ওপর হামলা পরিকল্পিত এবং তার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার চেষ্টা।” দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাহফুজ রাসেল বলেন, “এই হামলা শুধু হাদির ওপর নয়, বরং পুরো জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের ওপর আঘাত।”

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দিন রাতে মূল ফটকে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ইনকিলাব মঞ্চ কুবি শাখার আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, “জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের টার্গেট করেই এই হামলা চালানো হয়েছে।” আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বহিষ্কার দাবি করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতের বেলা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্বজিৎ চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘তুমি কে? আমি কে? ওসমান হাদি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা বলেন, “মতাদর্শ ভিন্ন হলেও এই হামলার বিরুদ্ধে সবাই এক।” প্রাণীবিদ্যা বিভাগের জান্নাতুল উর্মি তারিন বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের দাবি জানান। অন্য শিক্ষার্থীরা দেশের স্থিতিশীলতা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

এছাড়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব এক বিবৃতিতে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য জুলাই আন্দোলনের চেতনা নস্যাৎ করা, নির্বাচনী পরিবেশ অস্থির করা এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয় নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান বিন হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঢাকা/ইমদাদুল/এমদাদুল/লিমন/জান্নাত

সম্পর্কিত নিবন্ধ