করের চাপে আরেক দফা বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়
Published: 11th, January 2025 GMT
সকালে প্রত্যেক পরিবারের ঘরেই রান্না চড়ে। সেই রান্না যদি এলপি গ্যাসে হয়, তাহলে আগের চেয়ে বেশি খরচ হবে। নাশতার টেবিলে যদি আমদানি করা আপেল, নাশপাতি, আঙুরের মতো ফল কিংবা জুস থাকে, তাহলেও খরচ বাড়বে।
মুঠোফোনে দরকারি কথা সারবেন কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, তাতেও শান্তি নেই। মুঠোফোনে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে কর বাবদ ৩০ টাকা চলে যাবে। চাকরি বা ব্যবসার প্রয়োজনে রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেও লাগবে বাড়তি টাকা। রাতে বাসায় ফেরার সময় ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে গেলেন, সেখানেও খরচ আরেকটু বাড়বে।
এভাবেই নতুন করে প্রয়োজনীয় শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। বাড়তি করের চাপটি এমন সময় এল, যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছেন মানুষ। গত ডিসেম্বরেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে শত পণ্যের শুল্ক ও কর বৃদ্ধি সাধারণভাবেই মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরেক দফা বাড়াবে।
রাজধানীর বাড্ডায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন পলাশ আহমেদ। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সাঁতারকুলে ভাড়া বাসায় থাকেন। গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, গত দুই বছরে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, সেই হারে বেতন বাড়েনি। নতুন করে যেসব পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, সেগুলো নিত্যপণ্য। কথায় কথায় ভ্যাট বাড়ানো হলেও বেতন তো আর বাড়বে না। ফলে জীবন চালানো আরও কঠিন হবে।
মুঠোফোনে দরকারি কথা সারবেন কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, তাতেও শান্তি নেই। মুঠোফোনে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে কর বাবদ ৩০ টাকা চলে যাবে। চাকরি বা ব্যবসার প্রয়োজনে রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেও লাগবে বাড়তি টাকা।শুল্ক-কর বাড়ানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গতকাল এক পোস্টে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘এই সিদ্ধান্তগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে সরকারের মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় কোনো সঠিক সমন্বয় নেই। সরকারের উচিত ছিল, এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে দরিদ্র ও সাধারণ জনগণের সহায়তার পরিসর বাড়ানো এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।’
পরে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই সহজ পথে হাঁটছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের বাজেট পর্যালোচনা করা দরকার ছিল। সেটি না করায় আসলে আগের সরকারের কাঠামোই মূলত অনুসরণ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে অনেক ক্ষমতাশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর অব্যাহতির অন্যায় সুযোগ নিয়েছে। অনেক সম্পদশালী কর ফাঁকি দিয়েছেন। সেগুলো বন্ধ করে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর সুযোগ আছে। আমাদের প্রত্যাশা, এই সরকার সেই কঠিন কাজটি করবে।’
আরও পড়ুনশতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ল০৯ জানুয়ারি ২০২৫জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বেচলতি অর্থবছরের মাঝে হঠাৎ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার; যা ওই রাতেই কার্যকর হয়ে গেছে। অংশীজনদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিসংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রস্তাব পাস হয়। তারপর ভোক্তা পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সংগঠন ও অর্থনীতিবিদেরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেন। একপর্যায়ে ৪ জানুয়ারি এনবিআর এক বিবৃতিতে দাবি করে, যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই। এতে সর্বসাধারণের ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না; মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না।
অবশ্য অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ওষুধ, এলপিজি, রেস্তোরাঁর খাবার, মুঠোফোন সেবা, বিস্কুট-কেক, টিস্যু পেপার, তৈরি পোশাক, বিদেশি ফল ও জুসের ওপর বাড়তি কর আরোপ করা হয়েছে, যা কি না সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার্য পণ্য ও সেবা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ব্যয় বাড়বে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টাকা ছাপিয়ে সরকার চালানোর চেয়ে কর বাড়ানো ভালো। তবে নিত্যপণ্যের ওপর কর বাড়ানো হলে স্বল্প আয়ের মানুষ চাপে পড়ে। নিত্যপণ্যে কর বাড়ানোর চেয়ে কর সংগ্রহে জোর দেওয়া প্রয়োজন; যাতে মানুষের কাছ থেকে নেওয়া কর অন্য কারও পকেটে না যায়। ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি পুরোপুরি অনলাইনে করা দরকার। ওষুধের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অতীতে অনেক ক্ষমতাশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর অব্যাহতির অন্যায় সুযোগ নিয়েছে। অনেক সম্পদশালী কর ফাঁকি দিয়েছেন। সেগুলো বন্ধ করে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর সুযোগ আছে। আমাদের প্রত্যাশা, এই সরকার সেই কঠিন কাজটি করবে।সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানবিকল্প উপায় কী ছিলযেসব পণ্য ও সেবায় কর ও শুল্ক বাড়াবে, তার মধ্যে রয়েছে মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে। আবার ব্র্যান্ড কিংবা ব্র্যান্ড নয় এমন পোশাকে ভ্যাটের হার দ্বিগুণ করা হয়েছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচও বাড়বে; কারণ, সেখানে ভ্যাট তিন গুণ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে ওষুধ, মিষ্টি, এলপি গ্যাস, আমদানি করা ফল ও ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, বিভিন্ন ধরনের টিস্যু, সিগারেটসহ নানা পণ্যের। এসব পণ্যভেদে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হয়েছে। আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় আকাশপথে ভ্রমণে খরচও বাড়বে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন শর্তে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ঋণ কর্মসূচির আকার আরও ৭৫ কোটি ডলার বাড়ানোর অনুরোধ করে। এই অর্থ দিতেও সম্মত হয়েছে সংস্থাটি। তবে কর আদায় ও নীতি গ্রহণকারী সংস্থাকে আলাদা করাসহ রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মতো কিছু কঠোর শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। মূলত তাদের শর্ত মানতেই অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে শুল্ক ও কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, এমনটাই বলছেন রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে ওষুধ, মিষ্টি, এলপি গ্যাস, আমদানি করা ফল ও ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, বিভিন্ন ধরনের টিস্যু, সিগারেটসহ নানা পণ্যের।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইএমএফ সব সময় ভ্যাটের হার একক করার কথা বলছে। তবে সেটি ১৫ শতাংশ হতে হবে, তা বলে দেয়নি সংস্থাটি; বরং সরকারের ইচ্ছায় তা কম-বেশি হতে পারে। তবে সব পণ্যের ক্ষেত্রে একই হারের পক্ষে আইএমএফ। তা ছাড়া বাংলাদেশের জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আয় বছরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছিল সংস্থাটি। সেটা কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নির্ভর করে সরকারের ওপর। সরকার চাইলে আয়কর বাড়িয়ে, করের আওতা বাড়িয়ে এবং কর ফাঁকি বন্ধ করে বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে পারে।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ল, যা সময়োপযোগী হয়নি। করের হার বৃদ্ধি করা তখনই উচিত, যখন আর কোনো উপায় থাকে না। দুর্নীতি কমানো, করজাল বৃদ্ধি, সরকারের ব্যয় কমানো ইত্যাদির মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখা যেত। তিনি আরও বলেন, আইএমএফের শর্তের কারণে বছরের মাঝপথে সরকার শুল্ক–কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদি আইএমএফ এমন শর্ত দিয়েও থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে ছয় মাস সময় চাওয়া যেত। আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে আগামী বাজেটে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যেত বলে মনে করেন তিনি।
করের হার বৃদ্ধি করা তখনই উচিত, যখন আর কোনো উপায় থাকে না। দুর্নীতি কমানো, করজাল বৃদ্ধি, সরকারের ব্যয় কমানো ইত্যাদির মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখা যেত।বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফ থেকে পরের কিস্তি পাওয়ার আলোচনা হবে নতুন সরকারের সঙ্গে
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হবে নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া নতুন সরকারকে এ ব্যাপারে মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়াই যৌক্তিক হবে।
সফররত আইএমএফ মিশনের দুই সপ্তাহের বৈঠক শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন মিশন চিফ ক্রিস পাপাজর্জিও। তিনি আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান এবং তাঁর নেতৃত্বেই এবারের মিশন ২৯ অক্টোবর থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কাল বিকেলে তাদের শেষ বৈঠক ছিল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।
৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির পর গত বছরের জুনে এর সঙ্গে ৮০ কোটি যোগ করে তা ৫৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। এ কর্মসূচির অধীনে আইএমএফ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে পাঁচ কিস্তিতে দিয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। সে অনুযায়ী এখনো বাকি আছে ১৮৬ কোটি ডলার। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এরই মধ্যে মন্তব্য করেছেন যে আগামী ডিসেম্বরে যে ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে পাপাজর্জিও বলেন, ‘চলমান ঋণ কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা–সংক্রান্ত আলোচনা গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফের বার্ষিক সভায় শুরু হয়েছিল। আমরা মনে করেছি, ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া নবনির্বাচিত সরকারকে এ নিয়ে পদক্ষেপ নির্ধারণে মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়াই যৌক্তিক হবে। নির্বাচনের পর আগামী বছরের এপ্রিল বা মে মাসে উচ্চপর্যায়ের আরেকটি মিশন আসতে পারে এবং যৌথ পর্যালোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে কি না, সেই সময়ই মূল্যায়ন হবে। একসঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার অভিজ্ঞতাও আমাদের আছে, যেখানে বড় অঙ্কের অর্থ ছাড় করা হয়েছিল।’
রাজস্ব সংগ্রহ হোক জাতীয় অগ্রাধিকার
রাজস্ব সংগ্রহকে জাতীয় অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, রাজস্ব সংগ্রহ না বাড়ালে সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে না এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও কঠিন হবে। এ ছাড়া নিম্নগতির প্রবৃদ্ধির ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে বাংলাদেশ।
সংস্থাটি আরও বলেছে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বিশ্বের মধ্যেই নিম্নতম বাংলাদেশে। এ দেশের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে কর দিচ্ছে না। অপরিহার্য পণ্য ও সেবা ছাড়া ভ্যাটের হার কমানো, করমুক্তির সুযোগ বাতিল এবং সব প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম টার্নওভার কর বৃদ্ধি করা দরকার।
রাজস্ব খাত নিয়ে সংস্থাটি বলেছে, নীতি পরিকল্পনা অবশ্যই সমাধানের অংশ। তবে বাস্তবায়ন ব্যবস্থা উন্নত না হলে ভালো নীতিও কার্যকর হবে না। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে এটি দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা হিসেবে আছে। তাই ছোট সংস্কার বা আংশিক পদক্ষেপের বদলে এখন দরকার সাহসী, কার্যকর ও সহজে পালনযোগ্য সংস্কার।
আন্তর্জাতিক অংশীদারেরা বাংলাদেশের পাশে আছে এবং থাকবে বলেও জানায় আইএমএফ। ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কার চেষ্টাকে তারা সহায়তা করে যাচ্ছে। অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে আমরা মনে করি, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য দেশীয় সম্পদ সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সহায়তা একটি সহায়ক হাত, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিকল্প নেই।’
সুদহার কমানো এখনই নয়
আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা জরুরি, এমন পরামর্শ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি কৌশল হাতে নেওয়া দরকার। ব্যাংক পরিচালনায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দরকার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা।
আইএমএফ বলেছে, বিনিময় হার সংস্কারের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে। প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয়ের কারণে এটা হচ্ছে। কিন্তু এই অনুকূল পরিস্থিতি চিরকাল স্থায়ী হবে না। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর্থিক ও রাজস্ব নীতিকে কঠোর করার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। দুই অঙ্কে পৌঁছানো সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যদিও গত অক্টোবরের হিসাবে এখনো তা ৮ দশমিক ২ শতাংশে অবস্থান করছে। মুদ্রানীতির অগ্রাধিকার থাকা উচিত মূল্যস্ফীতি কমানোয়। এ হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে না নামা পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখাই সংগত হবে এবং নীতি সুদহার না কমানোই ভালো হবে।
নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্ব
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখতে নীতিগত ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন পাপাজর্জিও। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও মূল অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার বজায় রাখতে পারলে তা উন্নয়ন যাত্রাকে রক্ষায় সহায়ক হবে। নীতির অগ্রাধিকার যেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হারিয়ে না যায়।
সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি এবার বিএনপি,জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফের মিশন। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচি, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পাপাজর্জিও। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক চক্রের কারণে অনেক সময় সংস্কারের আগ্রহ কমে যায়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যাতে নীতি ধারাবাহিকতা থাকে ও কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা যায়, সেটা ছিল তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করার অন্যতম উদ্দেশ্য।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সামাজিক সুরক্ষা শুধু দারিদ্র্য হ্রাস নয়, এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষারও হাতিয়ার। দুর্বল ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য এটি বিশেষভাবে জরুরি। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে অগ্রগতি থাকলেও মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের অস্থিরতার কারণে ঝুঁকি রয়েছে। তাই কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটাল নিবন্ধন ও তথ্যভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োজন।