৮–১০ জন মিলে এলোপাতাড়ি কোপ, বাঁচার আকুতি ব্যবসায়ীর
Published: 11th, January 2025 GMT
চাপাতি হাতে ৮–১০ জন সন্ত্রাসী এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে। সেই ব্যক্তি চিৎকার করে বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বিপণিবিতান মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, চাপাতির আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম এহতেশামুল হক। তিনি মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়ায় ‘ইমন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা’ এহতেশামুল হককে চাপাতি দিয়ে কোপায়।
এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী ওয়াহিদুল হাসান। শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ব্যবসায়ী এহতেশামুল মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি থেকে বেরিয়ে সড়কে এলে একদল ব্যক্তি তাঁকে রাস্তায় ফেলে চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু থাকে। এ সময় তিনি গাড়ি নিয়ে মাল্টিপ্ল্যানের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে রাস্তায় এলে তাঁর (ওয়াহিদুল) ওপরও হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তাঁর গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলা হয়।
ওয়াহিদুল হাসানের অভিযোগ, গত ২২ ডিসেম্বর ইমন গ্রুপের লোকজন এহতেশামুল হক ও তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির একজন সদস্য থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে শনিবার দুপুরে মানববন্ধন করেন বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোডের ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধন থেকে তাঁরা অবিলম্বে ব্যবসায়ী এহতেশামুলের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
ব্যবসায়ী এহতেশামুল হকের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি মানববন্ধন করেন বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোডের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা, ১১ জানুয়ারি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল