আন্দোলনকারী ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বরখাস্তের দাবি
Published: 30th, October 2025 GMT
আন্দোলনকারী ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের আপত্তিকর মন্তব্যের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। পরে ওই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশকরেনিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ওই শিক্ষক।
ওই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক নাছির উদ্দীনমিঝির। তিনি আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষক সংগঠন গ্রিন ফোরামের সদস্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফেসবুকে আবদুল্লাহ বিন আসাদ নামের এক আইডি থেকে ৪ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ওই অডিও প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গতকাল বুধবার সকালে বিষয়টিকে ‘স্লিপ অব টাং (মুখ ফসকে বলা) ’দাবি করেন নাছির উদ্দীন।
ফাঁস হওয়া অডিওটিতে নাছির উদ্দীনকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনকারী এক ছাত্রীকে শাসাতে শোনা যায়। এ ছাড়া সাজিদ ও আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীদের নিয়েওআপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে অডিও ফাঁসের পর গতকাল সকালে নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি আল-কোরআন বিভাগের সভাপতি হিসেবে শহীদ সাজিদ আবদুল্লাহর জন্য বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছি।আমার অফিসে বসেই মামলা এন্ট্রি করেছি। প্রশাসনিকভাবে বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ইবি থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু এরপরও বিভাগের অন্য শিক্ষকসহ আমার আরেকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কিছু শব্দচয়নে ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভঅডিওটি প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাছির উদ্দীনের এমন আপত্তিকর মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বিবৃতি দিয়ে ওই শিক্ষকের বিচারের দাবি জানায় শাখা ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়ন। এ ছাড়া গতকাল বেলা ১১টায় প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনের শেষে ওই শিক্ষকের বরখাস্তসহ পাঁচ দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো সাজিদ আবদুল্লাহ হত্যার খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য প্রতিবাদ ও আন্দোলনে বাধা প্রদানকারীদের উদ্দেশ্য যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকার ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখা।
স্মারকলিপি নেওয়ার পর উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক যেন এ ধরনের বক্তব্য না দেন, তোমাদের এ ব্যাপারে নিশ্চিত করছি। আর লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ছ র উদ দ ন আবদ ল ল হ উপ চ র য প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীর বালু লুট বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে এনসিপির মানববন্ধন
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীর বালু লুট বন্ধ, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক চার লেনে উন্নীত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা শাখার নেতা–কর্মীরা।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ার এলাকায় আজ বুধবার দুপুরে এই কর্মসূচি পালন করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। এতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে সংগঠনের নেতা–কর্মীরা এসে যোগ দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাজুড়ে ধোপাজান নদীর অবস্থান। ২০১৮ সাল থেকে এই নদীর ইজারা বন্ধ আছে। এর মধ্যেও বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালু তোলা হয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এই নদীতে প্রকাশ্যে বালু লুট শুরু হয়।
টানা আড়াই মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু লুট হয়েছে এই নদী থেকে। এর মধ্যেই গত মাসে এই নদী থেকে ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বালু (বিটি বালু) উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ওই প্রতিষ্ঠান সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চলমান কাজে এই বালু ব্যবহার করবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন নদী থেকে অবাধে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছে তারা। এতে এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।
মানববন্ধনে বলা হয়, ড্রেজারে বালু তোলা সাধারণ শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েছেন। অথচ এই নদী থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার নেই বিআইডব্লিউটিএর। একটি বালুখেকো সিন্ডিকেট এখানে বালু লুটে জড়িত আছে।
বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে গত ৯ মাসে দুর্ঘটনায় ৭০ জন মানুষ মারা গেছেন। সড়কটি সরু হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সড়কটি চার লেনে উন্নীত না করলে দুর্ঘটনা কমবে না। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ভরসার জায়গা জেলা সদর হাসপাতাল। অথচ এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই। আছে নানা অব্যবস্থাপনা। এতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন এনসিপির জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ছালেহ মো. নাসিম, সদস্য মাসুম আল হাসান ও শাহনুর আলম, জেলা ছাত্র শক্তির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সায়মন আহমদ ও সদস্যসচিব রেদওয়ানুল হক। সমাবেশে পরিচালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জেলা সদস্যসচিব মেহেদী হাসান সাকিব।