Samakal:
2025-06-15@08:59:14 GMT

কেন নির্বাচনের তর সইছে না

Published: 14th, January 2025 GMT

কেন নির্বাচনের তর সইছে না

গত বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে বলে ধারণা দিয়েছিলেন। কিছু রাজনৈতিক দল, বিশেষত বিএনপি বারবার জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি জানতে চাওয়ার মধ্যেই তিনি ওই সময়ের কথা বলেন। কিন্তু এক মাস পর এসে বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানাল, এক থেকে দেড় বছর সময় মানে অনেক বিলম্ব। তারা চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন চায়।

কেন দ্রুত নির্বাচন দরকার? বিএনপি বলছে– ‘যত বিলম্ব হচ্ছে, ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচিত সরকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ (সমকাল, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫)। তারা প্রকারান্তরে যা বলতে চাইছে, নির্বাচন হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে।
বিএনপির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এখনকার রাজনৈতিক সংকট কী? সে বিষয়ে তারা কোনো ব্যাখ্যা অবশ্য দেয়নি। এখন রাজপথে রাজনৈতিক আন্দোলন, হরতাল-ধর্মঘট ইত্যাদি নেই; সংঘাত-সহিংসতা সেভাবে ঘটছে না; দলীয় রেষারেষিও তেমন দেখা যাচ্ছে না। তাহলে ‘রাজনৈতিক সংকট’ কোথায়? দলীয় নেতাকর্মী সরকারি পদ-পদবিতে নেই, সেটিই কি সংকট?
আমরা দেখতে পাচ্ছি, শুধু এমপি-মন্ত্রীর পদগুলোতে কোনো দলীয় লোক নেই। বাকি প্রায় সব জায়গায় দলীয় লোকের দাপট। পুলিশ-প্রশাসনেও রাজনৈতিক ধ্বজাধারীদের ক্ষমতায়ন। সারাদেশের মাঠঘাট, বাজার, স্ট্যান্ড-স্টেশনসহ ‌‘উপার্জন’-এর সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক লোকজন ক্ষমতায়িত।

ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান-মেম্বার রয়েছেন; উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনে জনপ্রতিনিধিরা নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে, সত্য। তবে সেগুলোতেও প্রশাসক থাকায় মোটাদাগে দেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালুই আছে। খালি জায়গাগুলো পূরণের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার দাবি আছে। কিন্তু বিএনপির আবার সে ক্ষেত্রে উল্টো মত। তারা আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় না।

তাহলে বিএনপি কি প্রকারান্তরে এটিই বলছে না, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলেই রাজনৈতিক সংকট কেটে যাবে? রাজনীতি যদি জনগণের জন্য, জনগণের সঙ্গে কাজ করা হয়, তাহলে স্থানীয় সরকার কি রাজনীতির বড় অংশ নয়? শুধু এমপিদের অভাবই রাজনৈতিক সংকট?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার দেশ চালায় না। দেশ চালায় জাতীয় সংসদ।’ সংবিধান বা আইনানুগভাবে যদি দেখি, আসলেই কি এমপিরা দেশ চালান? তারা আইনপ্রণেতা মাত্র; দেশের জন্য ভালো-মন্দ আইন তৈরি করেন। কিন্তু আমাদের পুরোনো ধারার রাজনৈতিক দলগুলো তার বদলে এমপিদের বানিয়েছে নির্বাচনী এলাকার ‘রাজা’। বিএনপির ভাষ্যে সেই হারানো সুরই পাওয়া যাচ্ছে।

দেশ চালায় সরকার; আইনসভা পথনির্দেশনা তৈরি করে। দৈনন্দিন কাজকর্মে এমপি নয়; জনগণের প্রয়োজন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি। ফলে জনগণের দিক থেকে দেখলে স্থানীয় সরকারকে ছোট করে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আরেকটি বিষয় খেয়াল করা দরকার। নেতারা প্রায়ই বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল বিষয় হলো জাতীয় সংসদ।’ জাতীয় সংসদ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গণতন্ত্রের এটাই কি মূল? গণতন্ত্রের মূল বিষয় কি জনগণের ক্ষমতায়ন নয়? হ্যাঁ, এমপিরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে। কিন্তু তার আগে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ, আলোচনা, মতবিনিময় কি তারা করেন? জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার কথা তারা কীভাবে জানেন? এক দিনের ভোটেই কি জনগণ সত্তা বিসর্জন দিয়ে দেয়? গণতন্ত্র কার্যকর করতে হলে এসব বিষয়েই বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। 

যেসব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছে, তারা জনগণের ক্ষমতায়ন নিয়ে কি মতবিনিময় করছে জনগণের সঙ্গে? সে রকম কোনো কর্মসূচি আজও দেখা যায়নি। রাষ্ট্রের সর্বত্র জনগণের মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির তৎপরতা চোখে পড়েনি। শুধু ভোটকেই মূল বিষয়ে পরিণত করা পুরোনো ব্যবস্থার ভেতরে থাকার কূট কৌশল।
ধরে নিলাম, ভোট হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে। কিন্তু তারা নির্বাচনের পর সংস্কারের যে কথা বলছে, সেসব বাস্তবায়নের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা কি পাবে? কিংবা সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তনের ম্যান্ডেট নিয়ে কি তারা ক্ষমতায় যাবে? যদি বিএনপিকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার করতে হয়, তাহলে তার উদ্যোগ এখনই শুরু করতে দোষ কোথায়? প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও গণতান্ত্রিক বা গণতন্ত্রমনা করে তুলতে হবে। সে রকম কর্মসূচি নিতে হবে। শুধু সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তা হবে না।

গত বছর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘ডামি ভোটের’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি; ঠেকাতেও পারেনি। দলটি বলতে গেলে চুপসে যায় এবং ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এক অর্থে প্রাণ ফিরে পায়। রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে নানা ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীও হয়ে ওঠে। এখন জুলাইয়ের মধ্যে ভোট চাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনোই জুলাই-আগস্টে নির্বাচন হয়নি; কারণ তখন ভরা বর্ষাকাল। আমাদের নির্বাচনের মৌসুম সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে মার্চের প্রথম দিক। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে জনদুর্ভোগ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় নির্বাচনের আয়োজন হয় না।
ফলে বিএনপি যে ভরা বর্ষাকালে নির্বাচনের কথা বলছে, সেটিও সুবিবেচনার পরিচায়ক নয়। এর পরও সেই সময়ই নির্বাচন আয়োজনের দাবির অর্থ হতে পারে– তারা নিজেরা কোনো চাপ অনুভব করছে। হতে পারে, বিলম্ব হওয়া মানে তাদের নির্বাচনী ভাবমূর্তি ক্ষয়ে যাওয়ার ভয়। কারণ নেতাকর্মীর ‘কীর্তি’ সামলানো যাচ্ছে না। আরেকটি কারণ হতে পারে, সরকারকেই চাপে রাখা, যাতে নির্বাচন জুলাইয়ে না হলেও ডিসেম্বরে হয় কিংবা নিদেনপক্ষে সরকার তার ঘোষিত সময়সীমার বাইরে না যায়।

অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে না বললেই নয়। বিগত সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি, পাচার, স্বেচ্ছাচার অর্থনীতিকে যে তলানিতে নামিয়েছে, সেখান থেকে দ্রুত টেনে তোলার জাদুর কাঠি কি বিএনপির কাছে আছে? যদি থাকে, জনগণের স্বার্থে কেন তা ব্যবহার করছে না বা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে না? তারা যেহেতু জনগণের জন্যই রাজনীতি করে, সেহেতু জনগণের মঙ্গলার্থে করণীয়গুলো নিয়ে এগিয়ে আসাও তাদের কর্তব্য। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তাদের রাজনীতিতে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে; প্রতিদানে হলেও তাদের কিছু করণীয় নিশ্চয় থাকা উচিত।

রফিকুল রঞ্জু: অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক, সমকাল

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ  

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আর এস ক্যাফে রেস্টুরেন্টে আয়োজিত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত ও আহত ১২ পরিবারের হাতে নগদ অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। 

আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে বিএনপি ও জিয়া পরিবার  সব সময় আছে ও থাকবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি জনগণের দল, বিএনপির কাছে আগে দেশ ও দেশের মানুষ। শত ষড়যন্ত্র ও বিপদেও বিএনপি দেশ ছেড়ে কোথাও যায়নি। বিএনপি মানুষের পাশে থেকে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের অনুষ্ঠেয় বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে যে ধোঁয়াশা, যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে সেসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে আলোচনায় আগামী দিনে একটি রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হবে। জনগণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের অধিকার ফিরে পাবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছে যে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে এ বৈঠকের মাধ্যমে তা কেটে যাবে। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর সভাপতিত্বে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজাহারুল আলম, শ্রীপুর ইউসিসি’র চেয়ারম্যান ও শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি  মাহফুল হাসান হান্নান, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের নেতা মাসুদ রানা প্রমুখ। 

সন্ধ্যায় কাওরাইদ কেএন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৫ ব্যাচের আয়োজনে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. জাহিদ বলেন, তিনি কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৫ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি। এ স্কুলের সাবেক শিক্ষক মোছলেম উদ্দিন অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • বর্তমান সংকটে হবস, রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেন যেখানে প্রাসঙ্গিক
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
  • জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
  • সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ