বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) গোপন লকারে কী আছে, তা নিয়ে কৌতূহল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত লকারটি আজ রোববার খোলা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
গত ১৯ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে এস কে সুরের বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা জব্দের সময় তাঁর নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে ভল্ট থাকার তথ্য পায় দুদক। পরে সংস্থাটি জানতে পারে, সেটি ভল্ট নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যবান সামগ্রী রাখার লকার (সেফ ডিপোজিট)।
এর পর দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া চিঠিতে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর ও হস্তান্তর না করতে বলে। ২১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা শাখা থেকে দুদককে ফিরতি চিঠি দিয়ে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর স্থগিত করার তথ্য জানায়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে বিধি অনুযায়ী ব্যাংকে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত মূল্যবান সামগ্রী তাদের নিজ নামে প্যাকেট অথবা কৌটায় নিজ দায়িত্বে সিলগালাযুক্ত অবস্থায় জমার তারিখ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত রাখা হয়।
এর পর ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক আরেক চিঠিতে জানায়, এস কে সুর তিনটি লকার নম্বরে মূল্যবান সামগ্রী রেখেছেন। এর মধ্যে গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বরের এসডি-৪৪/৬১ এবং ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির এসডি-৪৮/১২ নম্বরের নমিনি করেছেন স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীকে।
আর ২০১৭ সালের ১২ জুলাইয়ের এসডি-৪৭/৩৫ নম্বরে রাখা সামগ্রীর নমিনি করেছেন মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীকে। সামগ্রীগুলোর ধরন চিঠিতে সম্পর্কে বলা হয়, সেগুলো কাপড়ে মোড়ানো গালাযুক্ত কৌটা বা প্যাকেট। তবে ওই তিনটি লকারে কী রেখেছেন এস কে সুর, তা বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়নি।
সূত্র জানায়, লকারে রাখা প্যাকেট ও কৌটা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা শাখা জানলেও, এর ভেতরে সামগ্রীর বিষয়ে জানে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ চিঠির পর দুদক সেটি খুলে দেখার জন্য অনুমতি চায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, লকার খুলতে আদালতের অনুমতি লাগবে। পরে ২২ জানুয়ারি দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন স্বাক্ষরিত আবেদন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজের কাছে জমা দেওয়া হয়। পরদিন লকার খোলার অনুমতি দেন আদালত।
লকার খোলার সময় উপস্থিত থাকার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে দুদক পরিচালক কাজী মো.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকে গ্রাহকের জন্য লকার সেবা রয়েছে। লকারে কী সামগ্রী থাকে, তা ব্যাংকের কাউকে জানানো হয় না। কতগুলো প্যাকেট বা কৌটা রাখা হয়েছে, শুধু সে তথ্য জানানো হয়। ব্যাংকগুলোর অসংখ্য লকারে অপরাধলব্ধ অর্থ নিরাপদে রাখার সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা।
এভাবে ব্যাংকের অজ্ঞাতে জিনিসপত্র নিরাপদ লকারে রাখায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা যেসব জিনিস রাখছেন, সেগুলো কি বৈধ? যেহেতু ব্যাংক কর্তৃপক্ষই জানে না লকারের প্যাকেট অথবা কৌটায় কী রাখা হয়েছে। এ কারণে লকারগুলোতে অবৈধ জিনিসপত্র রাখা সম্ভব হচ্ছে। বিগত দিনে বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে লকারের জিনিসপত্রের তথ্য চাওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো তা দেয়নি।
কেন দেয়নি– এমন প্রশ্নে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা বলেছেন, অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল অঙ্কের টাকা ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রায় রূপান্তর করে ওইসব লকারে রাখা হচ্ছে। যেহেতু লকার মালিক ইচ্ছেমতো যে কোনো সময় সেটি খুলে গচ্ছিত মালপত্র আনা-নেওয়া করতে পারেন, সেহেতু অবৈধ সম্পদ ভোগ করার জন্য লকার অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে।
তারা আরও বলেন, গ্রাহক ব্যাংক হিসাবে টাকা রাখলে সে সম্পর্কিত তথ্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জানার সুযোগ আছে। অথচ লকারে কী কী জিনিসপত্র রেখেছেন, সে সম্পর্কে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অন্ধকারে থাকছে।
দুদক এস কে সুর, তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে গত ২৩ ডিসেম্বর। এস কে সুরকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৪ জানুয়ারি। এর পর ১৯ জানুয়ারি দুদক এস কে সুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে টাকা জব্দ করে।
সূত্র জানায়, দেশের আর্থিক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎসে যারা ছিলেন, এস কে সুর তাদের অন্যতম। দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক আদালতে ১৬৪ ধারায় বলেছেন, নির্বিঘ্নে দুর্নীতি-সংক্রান্ত কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে এস কে সুর প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা পেতেন। সময়ে সময়ে দেওয়া হতো বিপুল অঙ্কের টাকা ছাড়াও মূল্যবান সামগ্রী।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ন সপত র গ র হক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত, একজন গ্রেপ্তার
পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ার নিজ বাড়িতে জওহরলাল বসাক তুলশী (৭৭) নামের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শহরের আবদুল হামিদ সড়কে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও সেচ্ছাসেবক দল মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনায় করা মামলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁর নাম–পরিচয় প্রকাশ করেনি।
আরও পড়ুনপাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখম, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন২৮ জুলাই ২০২৫স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকেই জেলা শহরের বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুপুর ১২টার দিকে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সেই সঙ্গে অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মাসুম, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হিমেল রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইয়ামিন খান, সদস্যসচিব কমল শেখ, যুগ্ম আহ্বায়ক দীপঙ্কর সরকার প্রমুখ।
বক্তারা জানান, জহুরলাল বসাক সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষক। তিনি মানুষ গড়ার কারিগর। দেশব্যাপী তাঁর হাজার হাজার ছাত্র রয়েছে। তাঁর মতো একজন মানুষের ওপর এই হামলা ন্যক্কারজনক। এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
নুর মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘স্যার (জওহরলাল বসাক তুলশী) একজন সাদামাটা ও হাসিখুশি মানুষ। তাঁর মতো মানুষের ওপর হামলা আমাদের জন্য লজ্জাকর। আমরা ছাত্র হিসেবে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।’
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরই পুলিশের বিভিন্ন শাখা আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি হামলার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে ঢাকা থেকে পাবনায় আনা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত অন্যজনকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, আহত জওহরলাল বসাক পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। গত রোববার বিকেলে দুই ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে আহত করে ও আসবাবপত্র তছনছ করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন জওহরলাল বসাক। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দুপুরে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং শহরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে মানববন্ধন করেন।