সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত ইয়ামিনের মরদেহ তুলতে দেয়নি পরিবার
Published: 4th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের মরদেহ কবর থেকে তুলতে দেয়নি তার পরিবার। আজ মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো, আলী হাসান এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন মরদেহটি তুলতে গেলে পরিবারের বাঁধার মুখে ফিরে যান।
আজ দুপুরে শহীদ ইয়ামিনের মরদেহটি তুলতে সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক টাউন কবরস্থানে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এসময় ফরেনসিক বিভাগের লোকজন, সাভার মডেল থানা-পুলিশ, নিহতের স্বজন ও মামলার বাদী উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলাই আন্দোলনের সময় নিহত ইয়ামিনের মরদেহ কবর থেকে তুলতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা ও মামলার বাদী আপত্তি জানান। পরে ইয়ামিনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার পুলিশের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন নিহতের স্বজনদের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মরদেহটি উত্তোলনের বিষয়টি অবহিত করেন এবং তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বাধ্য হয়ে আদালতের নির্দেশ স্থগিত করে ইয়ামিনের মরদেহ না তুলে তারা চলে যান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে শহীদ ইয়ামিনের মরদেহটি উত্তোলনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু পরিবারের বাঁধার কারণে মরদেহটি উত্তোলন না করেই চলে আসতে হয়েছে।’
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী হাসান বলেন, ‘শহীদ ইয়ামিনের মরদেহ উত্তোলন করে সুরতহাল করার জন্য আদালত থেকে আমাকে নিয়োগ করা হয়। সেই আলোকে আমরা সাভারে যাই। কবরস্থানে যাওয়ার পরে শহীদ ইয়ামিনের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি এবং মামলার বাদীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনে অনিচ্ছুক থাকায় কার্যক্রমটি স্থগিত করা হয়েছে। তারা আমার কাছে একটি ফরমাল আবেদন দিয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করেছেন, ইয়ামিন শহীদী মর্যাদা পেয়েছে বিধায় তারা লাশ উত্তোলনে অনিচ্ছুক। এ বিষয়টি আমরা আদালতকে অবহিত করব এবং পরে আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
গত ১৮ জুলাই দুপুরে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপরে উঠে গুলিতে শহীদ হন শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। তিনি রাজধানীর মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় শহীদ ইয়ামিনের মামা আব্দুল্লাহ আল মুন কাবির বাদী হয়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে সাভার মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের ভিত্তিতে আদালত কবর থেকে শহীদ ইয়ামিনের মরদেহটি উত্তোলনের নির্দেশ দেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তারেক রহমান সুস্থ থাকলে গণতন্ত্র টিকে থাকবে : মান্নান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান আয়োজন করলেন এক ব্যতিক্রমী মানবিক অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) উপজেলার মেঘনা শিল্প নগরীর ঝাউচর দারুল উলুম মাদ্রাসায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন মাদ্রাসার কয়েক হাজার এতিম শিক্ষার্থীদের দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া, খাবার পরিবেশন, কবরস্থান জিয়ারত ও চকলেট বিতরণের মাধ্যমে দিনটি পরিণত হয় গভীর আবেগ ও ধর্মীয় শ্রদ্ধার এক অনন্য অভিজ্ঞতায়।
সকালে সোনারগাঁয়ের শতাধিক মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার এতিম শিক্ষার্থী একত্র হয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুরু করলে পুরো পরিবেশ জুড়ে পবিত্র সুরের আবহ ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এই দৃশ্য দেখে।
তেলাওয়াত শেষে আজহারুল ইসলাম মান্নান নিজ হাতে সব শিক্ষার্থীর মাঝে খাবার পরিবেশন করেন। এমন একটি দৃশ্যে উপস্থিত অনেকেই বিস্মিত হন—একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতার হাতে নিজেদের প্লেটে খাবার পাওয়া এতিম শিশুদের কাউকে হাসিয়েছে, কাউকে করেছে আবেগাপ্লুত।
দোয়া শেষে মান্নান এতিম শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে স্থানীয় কবরস্থানে যান। সেখানে দেশের প্রয়াত ব্যক্তিবর্গসহ সকল মৃতের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। হাজারো শিক্ষার্থীর ‘আমিন’ ধ্বনিতে কবরস্থানের পাথর-গাছ পর্যন্ত যেন স্পন্দিত হয়ে ওঠে।
জিয়ারত শেষে মান্নান শিক্ষার্থীদের হাতে নিজ হাতে চকলেট ও উপহার তুলে দেন। শিশুদের উচ্ছ্বাস, হাসিমাখা মুখ অনুষ্ঠানটিকে আরও প্রানবন্ত করে তোলে। মান্নান বলেন, “ওদের মুখের হাসিই আমার নেতা তারেক রহমানের জন্মদিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।”
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। কণ্ঠ ভারী হয়ে তিনি বলেন, “চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের আশা, আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে আমি তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
তিনি সুস্থ থাকলে দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে, মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে। চেয়াপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি জাতির মা। তাঁর সুস্থতা কামনা করছি। আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
আপনারা সবাই দোয়া করবেন—আমাদের নেত্রী যেন সুস্থ হয়ে দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিতে পারেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে সফল করতে পারেন।”
পুরো আয়োজন সোনারগাঁয়ে মানবিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।