Samakal:
2025-11-03@08:22:06 GMT

জাতীয়তাবাদ বিতর্কের শেষ কোথায়

Published: 9th, February 2025 GMT

জাতীয়তাবাদ বিতর্কের শেষ কোথায়

মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি তিনটি– গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এই তিন নীতির ভিত্তিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচিত হয়েছিল। ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি দাঁড়ায় চারটি। বর্তমানে সংবিধানের এই চার মূলনীতির ব্যাপারে দেখা দিয়েছে গভীর এক সংকট। বিশেষত জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে বাঙালি, নাকি বাংলাদেশি– এ নিয়ে তর্ক উঠেছে। 
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতির মেরূকরণ হয়। নানা সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। যে দলের ভাবাদর্শ– গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। সেই সত্তর দশকের পর থেকে জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। 

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ হলেও ভৌগোলিক দিক থেকে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তত্ত্বটি বেশি যুক্তিযুক্ত। এ মতবাদের ভিত্তিতে বড় একটি অংশের ন্যারেটিভ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এ দেশের সীমানার মধ্যে বসবাসকারী জনগণের আত্মিক বন্ধনের ওপর গড়ে ওঠে এ মতবাদটি। বর্তমানে বাংলাদেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ১৫টি দল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ লালন করে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই চর্চা করা হচ্ছে– আমরা বাঙালি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই চর্চিত। ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের কাছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা হারায় বাংলা। এর পর থেকেই জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে বাংলার মানুষের মাঝে। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাভাষী মানুষ এ জাতীয়তাবাদের আওতাভুক্ত। তবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশি ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও এ জাতীয়তাবাদ লালন করে এবং তারাও এ মতবাদের অংশ। ভাষাবিদ ড.

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেছিলেন, ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোনো আদর্শের কথা নয়; এটি একটি বাস্তব সত্য। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই।’ বাঙালি জাতীয়তাবাদ না থাকলে এ দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে বলে মত দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। 

বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে নন্দিত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘খণ্ডিত বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে দুই বাংলায় মিলন ঘটাতে হবে এবং খণ্ডিত বাঙালি সংস্কৃতিকেও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’ 
এক কথায় বলতে গেলে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা আর বাংলাদেশের বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সমন্বিত কৃষ্টি-কালচারের মেলবন্ধন হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সব ধর্ম-বর্ণের মিলিত পথচলার বন্ধনই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও পুরো জাতি এখনও নির্দিষ্ট কোনো মতবাদে এসে একীভূত হতে পারেনি। এ জন্য হাল আমলের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে বিভক্তি ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। 

বাঙালি জাতীয়তাবাদে ভর করে যদি একাত্তরের মহান স্বাধীনতা অর্জন করা যায়, তাহলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নের এ মতবাদ লালন নয় কেন? এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, তেমনি ভূখণ্ডগত জাতিসত্তার ভিত্তি স্থাপনে জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রসার, প্রচার ও চর্চাও অমূলক নয়। 
মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীকে একই কাতারে শামিল করা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে যে মতবাদটি সর্বাপেক্ষা নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে, সেটাই আমলে নেওয়া উত্তম। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার পরে এতটা পথ পাড়ি দিয়েও একক জাতীয়তাবাদ গঠনে আমরা ব্যর্থ। 

বেলাল উদ্দিন বিল্লাল: সাংবাদিক    bubillalbd@yahoo.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এ মতব দ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শেষ পর্যন্ত কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাটতে হয় কি-না, এমন শঙ্কাও জানিয়েছেন তারেক রহমান। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।’

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’

দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তবে তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।

শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তাঁর দল।

তারেক রহমান বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।’

প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • গণতন্ত্রের পথে সংকট দেখছেন তারেক
  • এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন জাতির দাবি
  • জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি