Samakal:
2025-05-01@07:53:08 GMT

জাতীয়তাবাদ বিতর্কের শেষ কোথায়

Published: 9th, February 2025 GMT

জাতীয়তাবাদ বিতর্কের শেষ কোথায়

মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি তিনটি– গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এই তিন নীতির ভিত্তিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচিত হয়েছিল। ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি দাঁড়ায় চারটি। বর্তমানে সংবিধানের এই চার মূলনীতির ব্যাপারে দেখা দিয়েছে গভীর এক সংকট। বিশেষত জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে বাঙালি, নাকি বাংলাদেশি– এ নিয়ে তর্ক উঠেছে। 
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতির মেরূকরণ হয়। নানা সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। যে দলের ভাবাদর্শ– গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। সেই সত্তর দশকের পর থেকে জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। 

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ হলেও ভৌগোলিক দিক থেকে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তত্ত্বটি বেশি যুক্তিযুক্ত। এ মতবাদের ভিত্তিতে বড় একটি অংশের ন্যারেটিভ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এ দেশের সীমানার মধ্যে বসবাসকারী জনগণের আত্মিক বন্ধনের ওপর গড়ে ওঠে এ মতবাদটি। বর্তমানে বাংলাদেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ১৫টি দল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ লালন করে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই চর্চা করা হচ্ছে– আমরা বাঙালি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই চর্চিত। ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের কাছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা হারায় বাংলা। এর পর থেকেই জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে বাংলার মানুষের মাঝে। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাভাষী মানুষ এ জাতীয়তাবাদের আওতাভুক্ত। তবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশি ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও এ জাতীয়তাবাদ লালন করে এবং তারাও এ মতবাদের অংশ। ভাষাবিদ ড.

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেছিলেন, ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোনো আদর্শের কথা নয়; এটি একটি বাস্তব সত্য। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই।’ বাঙালি জাতীয়তাবাদ না থাকলে এ দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে বলে মত দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। 

বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে নন্দিত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘খণ্ডিত বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে দুই বাংলায় মিলন ঘটাতে হবে এবং খণ্ডিত বাঙালি সংস্কৃতিকেও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’ 
এক কথায় বলতে গেলে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা আর বাংলাদেশের বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সমন্বিত কৃষ্টি-কালচারের মেলবন্ধন হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সব ধর্ম-বর্ণের মিলিত পথচলার বন্ধনই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও পুরো জাতি এখনও নির্দিষ্ট কোনো মতবাদে এসে একীভূত হতে পারেনি। এ জন্য হাল আমলের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে বিভক্তি ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। 

বাঙালি জাতীয়তাবাদে ভর করে যদি একাত্তরের মহান স্বাধীনতা অর্জন করা যায়, তাহলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নের এ মতবাদ লালন নয় কেন? এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, তেমনি ভূখণ্ডগত জাতিসত্তার ভিত্তি স্থাপনে জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রসার, প্রচার ও চর্চাও অমূলক নয়। 
মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীকে একই কাতারে শামিল করা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে যে মতবাদটি সর্বাপেক্ষা নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে, সেটাই আমলে নেওয়া উত্তম। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার পরে এতটা পথ পাড়ি দিয়েও একক জাতীয়তাবাদ গঠনে আমরা ব্যর্থ। 

বেলাল উদ্দিন বিল্লাল: সাংবাদিক    bubillalbd@yahoo.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এ মতব দ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু

কোনও মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, কোনও মহামানব কোনও দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।

এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমজনতার দলের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আমজনতার দলের আহ্বায়ক কর্নেল অব. মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।

বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, মানুষ বলতে কারা? আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দল, পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য যে কথাগুলো বলা হয়, সংস্কারের ব্যাপারে যেখানে ঐকমত্য হবে- সেই সংস্কারগুলো দ্রুত করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তো জনগণ বলতে কারা? 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ বলতে যদি কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী- যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে! এটা তো কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা যে সরকারই হোক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়া স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকট’
  • মিয়ানমারকে মানবিক করিডর দেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই: সিপিবি
  • সাবেক বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ 
  • কোনো মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু
  • জনগণ গণতন্ত্রের জন‍্য রক্ত দিয়েছে, কোনো মহামানবের প্রতিষ্ঠার জন্য নয়: আমীর খসরু