হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা
Published: 14th, February 2025 GMT
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো হালুয়াঘাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম এনায়েত উল্লাহ কালাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নতুন এই আহ্বায়ক কমিটি হালুয়াঘাটে ১১৭, ধোবাউড়া ১০১ এবং হালুয়াঘাট পৌরসভায় ৯৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে মো.
হালুয়াঘাট পৌর বিএনপি: হালুয়াঘাট পৌর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহকে আহ্বায়ক এবং মো. আবদুল আজিজ খানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এছাড়া মো. আলমগীর কবির বিপ্লব, মো. সুলতান মহিউদ্দিন ,মো. হাবিবুর রহমান, মো. হুমায়ুন কবির, ইসাক আলী, ডা. ইমাম উদ্দিন আহমেদ ইমাম, মনিরুজ্জামান স্বাধীন, শামছুল আলম সামস, মো. সিদ্দিক হোসেন মুল্লা, হামিদুর রহমান, তাজিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ডা. আবুল কাশেম মেম্বার, মোকলেছুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন বিপ্লব, মোল্লা মো. আলী সাবরী মনি, মো. মশিউর রহমান, নূরে আক্তার হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদস্য করা হয়েছে ৭৪ জনকে।
ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপি: অপরদিকে ধোবাউড়া উপজেলায় নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে অধ্যাপক জিএম আজাহারুল ইসলাম কাজলকে আহ্বায়ক ও আনিসুর রহমান মানিককে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এতে মোয়াজ্জেম হোসেন খান লিটন, ফরহাদ রাব্বানী সুমন, হাবিবুর রহমান হাবিব, মো. মাহাবুবল আলম বাবুল, আ. ওয়াহেদ তালুকদার, মো. কসিম বিশ্বাস, আব্দুল কদ্দুস, আবুল হাসিম, নজরুল ইসলাম দুলাল, মো. গাজীউর রহমান, হুমায়ুন কবির সরকার, জাকিরুল ইসলাম টুটুন, সোলায়মান সরকার, আ. মমিন শাহীন, আবদুল শহীদ মিয়া, মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, মেজবা উদ্দিন সরকার মামুনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদস্য করা হয়েছে ৮২ জনকে।
এ ব্যাপারে হালুয়াঘাট উপজেলার নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক মো. আসলাম মিয়া বাবুল জানান, আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করবো।
ধোবাউড়া উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব আনিছুর রহমান মানিক বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংগঠনকে গতিশীল করা আমাদের লক্ষ্য।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কম ট ব এনপ সদস যসচ ব প র ব এনপ ল ইসল ম র রহম ন সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’