সুদানের রাজধানী খার্তুমকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। গতকাল বুধবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে তিনি এই ঘোষণা দেন। খার্তুম প্রায় দুই বছর আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) দখলে ছিল।

সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানই এখন উত্তর আফ্রিকার দেশটির প্রকৃত ক্ষমতাধর (ডি ফ্যাক্টো) নেতা। গতকাল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘খার্তুম এখন মুক্ত। আমাদের কাজ সম্পন্ন।’ কেন্দ্রীয় খার্তুমের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউট পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিতে সম্প্রতি অভিযান শুরু করেছিল বুরহানের বাহিনী।

গতকাল দুই বছর পর খার্তুমে প্রথম সফরে বুরহানকে কামানের আঘাতে জর্জরিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হেঁটে যেতে দেখা যায়। তিনি সামরিক পোশাক পরা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে নানা পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তা ও সেনাসদস্য ছিলেন। সেনাসদস্যদের ‘আল্লাহ মহান’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাপ্রধান বুরহান এবং তাঁর সাবেক ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেতির মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। আরএসএফ দ্রুত রাজধানী দখলে নেয়। ফলে বুরহানের অনুগত কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর পোর্ট সুদানে পালিয়ে যান।

রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারানো আরএসএফের জন্য বড় ধাক্কা। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। গতকালই দেশের দক্ষিণ থেকে নতুন বিদ্রোহী জোটের ঘোষণা দিয়েছে আরএসএফ।

আরও পড়ুনদুই বছর পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আবার নিয়ন্ত্রণ নিল সুদানের সেনাবাহিনী২২ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • সুদানের রাস্তায় শত শত মরদেহ, পালিয়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
  • ‘গোলায় আমার এক মেয়ে মারা গেছে, অন্য মেয়ের চোখে আঘাত লেগেছে, ছেলেটিও পক্ষাঘাতগ্রস্ত’