রাজধানী খার্তুমকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা সুদানের সেনাপ্রধানের
Published: 27th, March 2025 GMT
সুদানের রাজধানী খার্তুমকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। গতকাল বুধবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে তিনি এই ঘোষণা দেন। খার্তুম প্রায় দুই বছর আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) দখলে ছিল।
সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানই এখন উত্তর আফ্রিকার দেশটির প্রকৃত ক্ষমতাধর (ডি ফ্যাক্টো) নেতা। গতকাল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘খার্তুম এখন মুক্ত। আমাদের কাজ সম্পন্ন।’ কেন্দ্রীয় খার্তুমের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউট পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিতে সম্প্রতি অভিযান শুরু করেছিল বুরহানের বাহিনী।
গতকাল দুই বছর পর খার্তুমে প্রথম সফরে বুরহানকে কামানের আঘাতে জর্জরিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হেঁটে যেতে দেখা যায়। তিনি সামরিক পোশাক পরা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে নানা পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তা ও সেনাসদস্য ছিলেন। সেনাসদস্যদের ‘আল্লাহ মহান’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাপ্রধান বুরহান এবং তাঁর সাবেক ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেতির মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। আরএসএফ দ্রুত রাজধানী দখলে নেয়। ফলে বুরহানের অনুগত কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর পোর্ট সুদানে পালিয়ে যান।
রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারানো আরএসএফের জন্য বড় ধাক্কা। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। গতকালই দেশের দক্ষিণ থেকে নতুন বিদ্রোহী জোটের ঘোষণা দিয়েছে আরএসএফ।
আরও পড়ুনদুই বছর পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আবার নিয়ন্ত্রণ নিল সুদানের সেনাবাহিনী২২ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বসতি, বাজার ও স্কুলে বোমাবর্ষণ করে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে সুদানের বিমানবাহিনী
সুদানের বিমানবাহিনী দেশটির আবাসিক এলাকা, বাজার, স্কুল ও বাস্তুচ্যুতদের শিবির লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ চালিয়ে অন্তত ১ হাজার ৭০০ মানুষকে হত্যা করেছে। সেখানে গৃহযুদ্ধ চলাকালে বিমান হামলা নিয়ে এক তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘সুদান উইটনেস প্রজেক্ট’ বলেছে, সুদানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সাম্প্রতিকতম লড়াইয়ে সরকারি বাহিনী যেসব বড় বড় বিমান হামলা চালিয়েছে এবং তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সেসব তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার প্রস্তুত করেছে তারা।
সুদান উইটনেসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিমানবাহিনী জনবহুল এলাকায় ‘আনগাইডেড’ বোমা বেশি ব্যবহার করেছে।
আনগাইডেড বোমা বলতে এমন বোমা বোঝানো হয়, যা নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে ছোড়া হয় না; বরং আকাশ থেকে ফেলার পর সেটি যেকোনো এলাকায় পড়তে পারে। এতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়।
আরএসএফ আকাশ থেকে হামলা চালাতে ড্রোন ব্যবহার করেছে। কিন্তু এ গবেষণায় ড্রোন হামলায় হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।সুদান উইটনেস প্রজেক্ট শুধু যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালানোর ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে তৈরি করেছে এ প্রতিবেদন। সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর হাতে যুদ্ধবিমান আছে। কিন্তু তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী, প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে কোনো যুদ্ধবিমান নেই।
আরএসএফ আকাশ থেকে হামলা চালাতে ড্রোন ব্যবহার করেছে। কিন্তু এ গবেষণায় ড্রোন হামলায় হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সুদান উইটনেস হলো সেন্টার ফর ইনফরমেশন রেজিলিয়েন্সের (সিআইআর) পরিচালিত একটি উদ্যোগ, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো প্রকাশের কাজ করে। এ প্রকল্পের জন্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তহবিল পেয়েছে তারা।
বিবিসি ওই গবেষণা প্রতিবেদনের একটি আগাম অনুলিপি হাতে পেয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুদান উইটনেস ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত ৩৮৪টি বিমান হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে। এসব হামলায় ১ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষ নিহত ও ১ হাজার ১২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ও আহত উভয় সংখ্যাই আরও বেশি হতে পারে। কারণ, তারা সর্বনিম্ন সংখ্যা ধরে এ হিসাব করেছে।
‘সুদান উইটনেস প্রজেক্ট’ বলেছে, যেসব এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে, সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন। সেখানে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল ও বিশ্বাসযোগ্য সূত্র চিহ্নিত করা দুরুহ। এ ছাড়া সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সংখ্যার খবর সম্ভবত কম জানা গেছে।সুদান উইটনেস যে ৩৮৪ ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে, তার মধ্যে ৩৫টি ঘটনায় বোমাবর্ষণ করা হয় বাজার বা বাণিজ্যিক স্থাপনায়। হামলার সময় ওই সব স্থানে মানুষের ভিড় ছিল। আর ১৯টি হামলা হয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
সুদান উইটনেস স্বীকার করেছে, তাদের গবেষণা অসম্পূর্ণ। কারণ, তাদের ফলাফল মোট হামলার সংখ্যার ভিত্তিতে নয়; বরং তাদের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
প্রজেক্ট আরও বলেছে, যেসব এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে, সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন। সেখানে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল ও বিশ্বাসযোগ্য সূত্র চিহ্নিত করা দুরুহ। এ ছাড়া সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সংখ্যার খবর সম্ভবত কম জানা গেছে।
আরও পড়ুনসুদানের যুদ্ধ ও গণহত্যার পেছনে কারা০৪ নভেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনসুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী ৩১ অক্টোবর ২০২৫