বাংলাদেশের সাবেক কোচ এখন নেপালের দায়িত্বে
Published: 29th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সর্বোচ্চ সফলতাটা এসেছে ২০১২ সালের এশিয়া কাপে। সেই সময় টাইগারদের কোচ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্টুয়ার্ট ল। বাংলাদেশে জীবন উপভোগ না করায়, বছর না ঘুরতেই বাংলাদেশ দলের চাকরি ছেড়ে দেন ল।
এরপর অবশ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের জাত চিনিয়েছেন ল। কোচিং করিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের মতো দলের, সফলতা এনে দিয়েছেন। তবে প্রোফাইলটা আর ভারী করতে পারেননি এই অজি কোচ। সবশেষ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোচ। তবে এবার দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দল নেপালের হেড কোচ হয়ে আবারও ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিলেন ল। এই ৫৬ বছর বয়সী কোচের নিয়োগের ব্যাপারটি নিশ্চিত করে নেপাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশকে হারায় যুক্তরাষ্ট্র! এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও কানাডাকে হারিয়ে সুপার এইটে চলে যায় মার্কিনিরা। যা ক্রিকেট বিশ্বে রীতিমত ঝড় তুলেছিল। বেসবল আর বাস্কেটবলের দেশটি ক্রিকেটের বাইশ গজে এমন সফলতা পায় মূলত অস্ট্রেলিয়ান কোচ ল’র অধীনেই।
আরো পড়ুন:
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেছেন জাহানারা
২২ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে ম্যাচ হারল পাকিস্তান
হারানোর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও কানাডাকে হারিয়ে সুপার এইটে চলে যায় যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসএ ক্রিকেটের এমন রূপকথার উত্থানের পেছনের কারিগর ছিলেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান কোচ স্টুয়ার্ট ল। তবে জুনে এমন সফলতা এনে দেওয়ার পর অক্টোবরেই এই ৫৬ বছর বয়সী কোচকে বরখাস্ত করে যুক্তরাষ্ট্র!
এমন দারুণ একজন কোচকে নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ হারায়নি নেপাল। মন্টি দেসাইয়ের সঙ্গে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে নেপাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। সে জায়গায় ২ বছরের জন্য স্টুয়ার্ট ল-কে নিয়োগ দিয়েছে নেপাল।
ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডেলে একটি টুইট করে নেপাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন লিখে, “অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্টুয়ার্ট ল’কে প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী ২ বছরের জন্য নেপাল জাতীয় পুরুষ দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন ল।” আগামী জুনে স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে নেপাল ক্রিকেটের সঙ্গে ল’র পথচলা শুরু হবে।
গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতেই ল’কে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি হারাতে হয়। কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে সঙ্গে নিয়ে দলের ভেতর অন্তর্কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, দলের ভেতর বৈষম্য, বিভেদ, অবিশ্বাস তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শোনা গিয়েছিল নিজের পছন্দের খেলোয়াড়দের জায়গা দেন ল।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।