আরসাপ্রধান আতাউল্লাহকে নেওয়া হলো বান্দরবান আদালতে
Published: 7th, April 2025 GMT
মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনীকে আজ সোমবার দুপুরে বান্দরবানের আদালতে হাজির করা হয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলার আসামি তিনি। এ ছাড়া অস্ত্র আইনেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ দুই মামলায় তাঁকে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হয়। উভয় আদালত থেকে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
সরকারি কৌঁসুলি আলমগীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আরসার ৯ সদস্যসহ গ্রেপ্তার হন আতাউল্লাহ। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইন ও বিদেশি আইনে মামলা করা হয়েছিল। এ ছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর মাদকবিরোধী অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদী হত্যা ও অস্ত্র আইনের মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাঁকে।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় প্রথমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ডিজিএফআই কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলায় আতাউল্লাহকে হাজির করা হয়। একই মামলায় আগে গ্রেপ্তার আরও নয়জনকেও হাজির করা হয়েছিল। আদালত আগের গ্রেপ্তার নয়জনের সঙ্গে আতাউল্লাহকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর অস্ত্র আইনে করা মামলায় আতাউল্লাহকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আতাউল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার জানিয়েছেন, স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ওই মামলায় আতাউল্লাহকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়েছিল। অস্ত্র মামলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। উভয় আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী হত্যার ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ডিজিএফআই কক্সবাজার কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা মো.
পুলিশ জানায়, আরসার প্রধান আতাউল্লাহ দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। তিনি গত নভেম্বরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আবাসিক এলাকায় ১০ তলা একটি ভবনে মাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। সেখান থেকে আরও ১০ সদস্যসহ তাঁকে গত ১৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁর কাছ থেকে ২১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন কর মকর ত হ জ র কর হয় ছ ল আরস র
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।