পণ্য রপ্তানিতে বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পেতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় আকারে আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানিতে কয়েক বছর মেয়াদে চুক্তি করতে চেয়েছে। প্রধান প্রধান পণ্যে শুল্ক অর্ধেক করারও অঙ্গীকার দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক তিন মাস স্থগিতের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অন্যদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিকে আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি শুল্ক কমানো, অশুল্ক বাধা পুরোপুরি দূর করাসহ বিভিন্ন উপায়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের গাড়ি নির্মাণ কারখানা স্থাপনের প্রস্তাবও দিয়েছেন।  

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন বলে তাঁর প্রেস উইং নিশ্চিত করেছে। চিঠিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ট্রাম্প ঘোষিত এজেন্ডাকে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ এ বিষয়ে সব কার্যক্রম শেষ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গত ২ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেন। ট্রাম্পের আদেশ অনুযায়ী ৯ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পণ্য ঢুকবে, তার ওপর বিদ্যমান শুল্কহারের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ যোগ হবে। বাংলাদেশের পণ্যের প্রায় ৯০ ভাগ তৈরি পোশাক, যেখানে আগে থেকে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এতে করে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বিমসটেক সম্মেলন থেকে ফিরে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পর ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন।

বাংলাদেশ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। আর সে দেশ থেকে আমদানি করে ২২০ কোটি ডলারের পণ্য। বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬২০ কোটি ডলার। ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি থেকে বাণিজ্য উদ্বৃত্তে যাওয়া। বাণিজ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 
প্রধান উপদেষ্টা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘আপনার অভিষেকের পরপরই আমি আমার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভকে পাঠিয়ে ১৭ কোটি মানুষের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছি। আমরাই এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণকারী প্রথম দেশ। আমরাই প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি আমদানিতে কয়েক বছরের চুক্তিতে সই করতে যাচ্ছি। আপনি এলএনজি রপ্তানির ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর থেকেই বাংলাদেশ এ বিষয়ে সহযোগিতা সম্প্রসারণে কাজ করছে।’

অধ্যাপক ইউনূস চিঠিতে উল্লেখ করেন, “আমাদের কার্যক্রমের প্রধান বিষয় হবে কৃষিপণ্য বিশেষ করে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি উল্লেখযোগ্য অঙ্কে বাড়ানো; যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের আয় ও জীবিকার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানি বাড়ানোর গতি বাড়াতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য রাখতে একটি আলাদা ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউস’ চালুর কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।” অধ্যাপক ইউনূসের চিঠিতে জানানো হয়েছে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে বিস্তারিত কার্যক্রম জানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 
চিঠিতে জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ পণ্যে শুল্ক সর্বনিম্ন। তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিনে এবং লোহার স্ক্র্যাপেও বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে চায়। এ ছাড়া গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর এবং মেডিকেল ইকুইপমেন্টসহ প্রধান প্রধান পণ্যে শুল্ক ৫০ শতাংশ কমানোর জন্য কাজ করছে। এ ছাড়া অশুল্ক বাধা দূর করা হবে। নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা, প্যাকেজিং যৌক্তিকীকরণ, লেবেলিং এবং সনদের প্রয়োজনীয়তা তুলে দেওয়া হচ্ছে এবং কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। 

চিঠিতে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দেশে মার্কিন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক চালুর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও প্রতিরক্ষা খাতসহ বিভিন্ন উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। চিঠির শেষে বলা হয়েছে, পরবর্তী তিন মাসের মধ্যেই চলমান এবং পরিকল্পিত সব কার্যক্রম শেষ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে গুরুত্বপূর্ণ এসব কাজ শেষ করতে এজন্য প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

বাণিজ্য উপদেষ্টার চিঠিতে যা আছে 
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) অ্যাম্বাসাডর জামিসন গ্রিয়ারকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার শুল্ক কমানো এবং সব ধরনের অশুল্ক বাধা দূর করার উপায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এ ছাড়া সরকার দুই দেশের জন্য সহায়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আমদানি নীতি সংশোধন, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করা, মেধা সম্পদ অধিকার কার্যকর করা ইত্যাদি। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি সরবরাহকারীদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং সে দেশের গাড়ি নির্মাতাদের এ খাতে কারখানা স্থাপনের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবা খাতেও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী বাংলাদেশ। 
বাণিজ্য উপদেষ্টা চিঠিতে আরও বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে গড় শুল্ক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের তুলার অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক। তবে বাংলাদেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই উচ্চ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। নতুন শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো বাণিজ্য বাধা দূর করতে আলোচনা ও সংলাপে আগ্রহী। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বাণিজ্য সহায়ক বিভিন্ন ধরনের অশুল্ক বাধা তুলে দেওয়া হচ্ছে। মোট বাণিজ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই হয় তুলা, সয়াবিন, লোহার স্ক্র্যাপ এবং জ্বালানি তেল– এই চার পণ্যে। এর বাইরে আর কী কী পণ্যে বাধা দূর করলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বাড়বে, তা নির্ণয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ১৯০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। আগামীতে এটি আরও কতটুকু বাড়ানো যায় সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ করছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই এ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তাই অনেক পণ্যের শুল্ক সহজ হবে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেছেন, আরও ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন। 
এলএনজি আমদানির চিত্র

২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি দুই টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে বছরে ১১৫টি এলএনজি কার্গো হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ৫৬টি কার্গো আসছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়। কাতার থেকে আসে ৪০টি এবং ওমান থেকে ১৬টি। খোলা বাজার থেকে ২৪টি কার্গো আমদানি করা হয়। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ৪৫৪ কার্গো।  দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২৫৪ কার্গো, ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ওমান থেকে ১১৮ কার্গো এবং স্পট মার্কেট থেকে ৮২ কার্গো আমদানি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি কিনছে। ওই বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ প্রথম ৩ হাজার ৪১৯ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৬০ মিলিয়ন ঘনফুটে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয় ৩৭ হাজার ৭৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ে। ফলে বিশ্বের খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ। যে কারণে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এর পরের দুই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি আবার বেড়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্ববাজারে আবারও এলএনজির দাম কমতে শুরু করলে স্পট মার্কেট থেকে কেনা বাড়ায় বাংলাদেশ। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২৪ হাজার ১৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসে দেশে।
ইআইএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২৬ হাজার ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা হয় যুক্তরাষ্ট্র থে‌কে। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরে মোট ৫৭ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে মোট ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এ ছয় বছরে ২৬ হাজার ২১৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে এ খাতে। বাকি ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা ব্যয় মেটানো হয়েছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আমদ ন শ ল কম ক ত স ব ধ ব ণ জ য উপদ ষ ট র এলএনজ পর ম ণ র জন য দ র কর আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

তাণ্ডব হচ্ছে ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট

তান্ডব সিনেমা কি সত্যিই তান্ডব বইছে নাকি অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই না? সবই মিডিয়ার হাইপ? মোটাদাগে তান্ডবের প্রধান দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, প্রতিশোধ নিতে একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জিম্মি করে স্বাধীনে টিম (শাকিব)। জিম্মিদের সাথে আলোচনা হবে টিভি লাইভে, যেনো দেশবাসী সরাসরি জানতে পারে। কেনো জিম্মি করলো, শুরু হয় শাকিবের গ্রামের গল্প। প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়া, আশা-নিরাশা- হতাশার গল্প পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এর মাঝে উঠে আসে, বেকারত্ব, মামা-চাচার জোর না থাকলে চাকরি না পাওয়ার চিত্র।  এই সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনীতিবীদ, প্রশাসন, টিভি চ্যানেল ও বড় ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধাবাদিশ্রেনি সিন্ডিকেট করে সব কিছু নিজেদের দখলে রাখে, বঞ্চিত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। এই হল তাণ্ডবের গল্প। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু মাত্র। 

সিনেমার শেষের দিকে একবার মনে হতে পারে গল্প শেষ, কিন্তু নিশোর আগমন বাড়তি টুইস্ট যোগ করে। তান্ডবের সিক্যুয়ালে শাকিব, নিশোর লড়াই বেশ জমজমাট হবে, এমন ইংগিত দেওয়া হয়েছে এতে। গল্পে সাবিলা নূরের ট্রাজেডি খুব একটা যুক্ত সঙ্গত ছিল না। পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো। গল্পে ইমপেক্ট পড়ে নাই সিয়ামের ক্যামিও চরিত্র। তবে সিনেমা তার  চরিত্রে সিয়াম অসাধারণ অভিনয় করেছে। অনেক তারকার ভীড়ে তান্ডবের সব আলো কেড়ে নিয়ে একাই জ্বলজ্বল করছেন শাকিব খান।  

চেনা চেনা লাগে: ক্রাইম থ্রিলার জনরার সিনেমা তাণ্ডব। গল্পে থ্রিল আছে তবে ইউনিক না। থ্রিলগুলো খানিকটা ধার করা বলা যায়। কারো কারো মনে হতে পারে,  বহু সিনেমার বহু দৃশ্যের সুষম মিশ্রণ। দৃশ্যটি দেখলে, চরিত্রের ডিটেইলটা চেনা চেনা লাগতে পারে। বিশেষ করে গল্পের শুরুতে সবাই মুখোশ পড়ে আসে। এটি বহুল প্রচারিত দৃশ্য কিন্তু ভালো লাগবে। গল্পে শাকিব খান মুখোশ পড়ে যে ভাবে হাত দিয়ে উড়ার মতো করে আসে, এই দৃশ্যও দর্শকদের আনন্দিত করেছে, সিনেমা হলে উল্লাস করেছে। তবে গল্পাংশ, চরিত্রায়ণ যেখান থেকেই মিল থাকুক না কেনো, সব মিলিয়ে সিনেমাটি দেখতে দারুণ লাগবে।

গান: তিনটি গানের মধ্যে “লিচুর বাগান” গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানের বিশেষ দিক হলো, বাংলা লোকগানের আধুনিক মিউজিক আয়োজন। এটা দারুণ ব্যাপার। তবে এই ধরণের গান কোক স্টুডিও বাংলায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না এই গান। যদিও গানটি মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট খুব ভালো ছিল। একটি টাইটেল ট্রাক ছিল, সেই গানের শব্দগুলো বুঝতে সমস্যা হয়েছে। রোমান্টিক গানটা  শ্রুতিমধুর ছিল।

অভিনয় ও চরিত্রায়ণ: শাকিব খান দারুণ অভিনয় করেছেন। একটা গ্রামের ছেলে আরেকটা গ্যাংস্টার। দুইটা কন্ঠ দুই রকম ছিল। বডি ল্যাগুয়েজ, হাঁটা চলা, কথা বলার ধরণে ভিন্নতা ছিল। গ্যাংস্টারে খষখষে কন্ঠ হওয়াতে চরিত্রের মধ্যে ডায়মেনশন এসেছে। শাকিব দিন দিন অভিনয়ে গড হয়ে উঠছে যেনো। সাবিলা নূর এই চরিত্রের জন্য খুবই মানানসই। এক ঝাঁক তারকা অভিনয় করেছে সিনেমাটিতে। সবাই চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করেছেন। তবে আলাদা করে বলতে হয় জয়া আহসানের কথা। জয়া ঠিকই নিজের চরিত্রে সেরাটা দিয়েছে, এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কল্পনা করার সুযোগ ছিল না। আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, নাঈম, সালাউদ্দীন লাভলু, ফজলুর রহমান বাবু, সাইফুল জার্নাল, রোজী সিদ্দিকী নিজ নিজ চরিত্রে দারুণ। যদিও কারো কারো চরিত্র প্রস্ফুটিত হয়নি ঠিক মতো।  

সেট, লাইট, কস্টিউম: তান্ডবের সেট লাইট দারুণ। দৃশ্যে আয়োজন, আলোর ব্যবহার খুবই মানানসই। টিভি চ্যানেলের সেট বিশ্বাসযোগ্য ছিল। চরিত্রানুযায়ী পোশাক ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে শাকিব, জয়া, সাবিলার পোশাক সুন্দর লেগেছে। অন্যান্য চরিত্রের পোশাকও ছিল দারুণ।  

আবহ সঙ্গীত, সংলাপ: সংলাপ দারুণ। কিছু কিছু গালি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। গল্পের সাথে গালিগুলো যথাযথ ভাবেই মানিয়ে গেছে, তাই অশ্লীল লাগে নাই। আবহ সঙ্গীত মনে দাগ না কাটলেও খারাপ লাগে নাই। গল্পের মুড বুঝেই আবহ সঙ্গীত এগিয়ে গেছে। সংলাপে যখন দেশের কথা বলে, তখন বুকিশ লাগে নাই, শুনতে ভালো লেগেছে।

নির্মাণ: আধুনিক নির্মাণের সকল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। শট ডিজাইন, ট্যাকিং, ক্লোজ আপের ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পরিচালক। মুভমেন্ট শটগুলো গল্পকে গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। জনবহুল বড় বড় দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক তুলে আনা গেছে। 

সবশেষে: তাণ্ডব একটি গ্যাংস্টার মুভি। কতগুলো অসৎ লোকের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ধরণের মুভি গরম গরম দেখতে ভালো লাগে, বিনোদন পাওয়া যায়, সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল পাওয়া যায় কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোন ইমপেক্ট পড়ে না। শেষ কথা হলো, কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা সিনেমা সোনালী অতীত পেরিয়ে এখন ডায়মন্ড যুগে প্রবেশ করেছে। তাণ্ডব  হলো সেই ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট।   

লেখক: লেখক ও নাট্যকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ