ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হচ্ছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিকেল ৩টা থেকে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। মিছিলে অংশ নেওয়া অধিকাংশের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

এই কর্মসূচির আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের পক্ষে ঢাকায় এটিই হবে সবচেয়ে বড় জমায়েত। তারা দল–মত নির্বিশেষে সবাইকে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেক এই জমায়েতে সভাপতিত্ব করবেন বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের গণমাধ্যম সমন্বয়ক শেখ ফজলুল করীম মারুফ বলেছেন, শনিবার দুপুর দুইটায় পাঁচটি পয়েন্ট থেকে মার্চ শুরু করে তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েত হবে। বাংলামোটর, কাকরাইল মোড়, জিরো পয়েন্ট, বকশিবাজার মোড় ও নীলক্ষেত মোড় থেকে মিছিল উদ্যানে ঢুকবে।

সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালি মন্দির গেট, টিএসসি সংলগ্ন গেট, রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট দিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই মিছিলসহ সমাবেশস্থলে আসছেন অংশগ্রহণকারীরা। এ সময় আগতদের হাতে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে নানা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। কর্মসূচি সুশৃঙ্খল রাখতে  প্রতিটি প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পাঁচটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রত্যেক রুটে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এসব রুটে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা সদস্যরা সন্দেহজনক হলে তল্লাশি করছে।

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের ফেসবুক পেজে ‘মার্চ ফর গাজা’র পক্ষে সংহতি জানিয়ে পরিচিত রাজনীতিক, আলেম ও তারকাদের ভিডিও বার্তা পোস্ট করা হচ্ছে। 

শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত রাজনীতিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান (মঞ্জু), খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো.

রাশেদ খান, আপ বাংলাদেশের প্রধান উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখের ভিডিও বার্তা ওই পেজে পোস্ট করা হয়েছে।

ওই পেজে আলোচিত ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ, আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শেখ মহিউদ্দিন, ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম আবরার, দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদ রানা ও তাইজুল ইসলাম, বুয়েটের প্রভাষক ও জনপ্রিয় ইউটিউবার এনায়েত চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোক্তার আহমেদ, ডা. জাহাঙ্গীর কবির, ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরিফের পীর ছাহেব আল্লামা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, উপস্থাপক আরজে কিবরিয়া, উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান সোহাগ, অভিনেতা তামিম মৃধা, টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিকের ভিডিও বার্তাও দেখা গেছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদও ‘মার্চ ফর গাজা’র পক্ষে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র চ ফর গ জ র রহম ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

হামাস নিরস্ত্র হোক, চান না ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি

বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি গাজায় হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় ইসরায়েল সত্যিই গাজায় যুদ্ধের ইতি টানবে কি না, তা নিয়েও তাঁদের গভীর সংশয় রয়েছে।

এ নিয়ে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজাজুড়ে একটি জরিপ চালিয়েছে ফিলিস্তিনি নীতি ও জরিপ গবেষণাকেন্দ্র (পিসিপিএসআর)। তাদের তথ্য অনুযায়ী, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বলেছেন, তাঁরা হামাসের নিরস্ত্রীকরণের ঘোরবিরোধী। হামাস নিরস্ত্র না হলে ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করতে পারে, এমন আশঙ্কা থাকার পরও তাঁরা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির অস্ত্র ছাড়ার পক্ষে নন।

হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অধিকৃত পশ্চিম তীরে। সেখানে জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বলেছেন, তাঁরা চান হামাসের সশস্ত্র শাখা নিজেদের অস্ত্র ধরে রাখুক।

২২ থেকে ২৫ অক্টোবর এ জরিপ পরিচালিত হয়। গত মঙ্গলবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

জরিপের প্রতিবেদনে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অধিকৃত পশ্চিম তীরে। সেখানে জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বলেছেন, তাঁরা চান হামাসের সশস্ত্র শাখা (ইজ্জেদিন আল–কাসাম ব্রিগেড) নিজেদের অস্ত্র ধরে রাখুক।

অধিকৃত পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) অধীন পরিচালিত হয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী দল ফাতাহ। মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহর সঙ্গে হামাসের মতবিরোধ রয়েছে।

আরও পড়ুনগাজায় আবার তীব্র হামলা চালানোর নির্দেশ নেতানিয়াহুর২৮ অক্টোবর ২০২৫

অন্যদিকে গাজার ৫৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা করেছেন।

মোট ১ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি এ জরিপে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭৬০ জন অধিকৃত পশ্চিম তীর ও ৪৪০ জন গাজার বাসিন্দা।

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, গাজা যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্প যে শান্তি পরিকল্পনা করেছেন, তা নিয়ে তাঁরা গভীরভাবে সন্দিহান।

মুখোমুখি কথা বলে এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে। পরে সমীক্ষার উত্তরগুলো এমন একটি সার্ভারে জমা হয়, যেখানে শুধু পিসিপিএসআর গবেষকদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। জরিপটির ত্রুটির সীমা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

কেন ফিলিস্তিনিরা হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা করছেন, তার উত্তরও জরিপে উঠে এসেছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, গাজা যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্প যে শান্তি পরিকল্পনা করেছেন, তা নিয়ে তাঁরা গভীরভাবে সন্দিহান।

আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধ শেষ হয়েছে, ইসরায়েলে যাওয়ার আগে ট্রাম্প১৩ অক্টোবর ২০২৫

জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন, ট্রাম্প এ যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে পারবেন না।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে সংশয় বেশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে। সেখানে ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা এ পরিকল্পনা নিয়ে সন্দিহান, গাজায় ৫৪ শতাংশ ফিলিস্তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

মুখোমুখি কথা বলে এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে। পরে সমীক্ষার উত্তরগুলো এমন একটি সার্ভারে জমা হয়, যেখানে শুধু পিসিপিএসআর গবেষকদের প্রবেশাধিকার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ৯ অক্টোবর মিসরের পর্যটন শহর শারম আল-শেখে গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি সই হয়। পরদিন ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

আরও পড়ুনট্রাম্পের প্রস্তাব ও হামাসের আংশিক সম্মতি নিয়ে বিশ্বনেতারা কে কী বললেন০৪ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মার্কস অলরাউন্ডার: ময়মনসিংহ ও দিনাজপুরসহ ৯ জেলায় কবে কোথায় প্রতিযোগিতা
  • ব্র্যাকে ইন্টার্নশিপ, স্নাতক পাসে করুন আবেদন
  • হামাস নিরস্ত্র হোক, চান না ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি