দিনভর আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের সুপারিশের অধিকাংশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশে ভিন্নমত জানানো দলটি আলোচনার টেবিলেও রাজি হয়নি। আগামী রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে তারা। 
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন বিএনপি নেতারা। বিরতিহীন তা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রথম দিনে শুধু সংবিধান এবং বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে আংশিক আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদদ) সংস্কার নিয়ে কথা হয়নি। 

সংস্কারের জন্য গঠিত পাঁচ কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান সংস্কারের ৭০ সুপারিশের ১৪টিতে একমত বিএনপি। বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের ২০টিতে একমত বলে জানিয়েছিল। 

রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশ বিষয়ে আংশিক একমত এবং একমত নয় বলে জানিয়েছে, সেগুলো নিয়েই সংলাপ চলছে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান-সংক্রান্ত যে ৫৬ সুপারিশে বিএনপি একমত নয় বা আংশিক একমত, সেগুলোর অর্ধেক নিয়ে কথা হয়েছে। এর পর আলাপ হয়েছে বিচার বিভাগ নিয়ে। ২৮টি সুপারিশের তিন-চারটিতে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আগের মতামত পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেছে বিএনপি। 

তবে ঐকমত্য কমিশন সূত্রের ভাষ্য, খুব বেশি বিষয়ে বিএনপি আগের অবস্থান বদল না করলেও খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিএনপি যেসব সুপারিশে একমত নয়; কেন একমত নয়– কমিশনের এসব প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব দিয়েছে। কমিশন তা নোট করেছে। দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে বিএনপিকে রাজি করাতে চেষ্টা করা হবে। কমিশন সংস্কারের সুপারিশের যেমন যুক্তি তুলে ধরে, বিএনপিও দলীয় অবস্থানের পক্ষে পাল্টা যুক্তি দেয়। কিছু সুপারিশে বিএনপির যুক্তিকেও আমলে নিয়েছে কমিশন। 

বৈঠকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং আবু মো.

মনিরুজ্জামান খান উপস্থিত ছিলেন। 
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার আলোচনায় অংশ নেন। 
গত বুধবার রাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১ সুপারিশের ওপর ৫১ পৃষ্ঠার এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিপরীতে ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয় বিএনপি। 
বৈঠকের পর আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ পথরেখা তৈরি হবে।

বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংস্কার সুপারিশের প্রস্তাবনা, প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, মৌলিক অধিকার এবং আইন বিভাগ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে। বিচার বিভাগ নিয়ে আলাদা আলোচনা করেছি। কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো আবার আমাদের দলীয় ফোরামেও আলোচনা করতে হবে। 
তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারে ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানিয়েছি। কমিশন কতটুকু গ্রহণ করবে, তা পরবর্তীকালে দেখা যাবে। আস্থা-অনাস্থা ভোট এবং সংবিধান সংশোধনে যদি ৭০ অনুচ্ছেদ না থাকে, সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না। বিএনপি মতামত দিয়েছে– অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থা ভোট ও জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতীত এমপিরা স্বাধীন থাকবেন। 
গণভোট ও সংবিধান সংশোধন বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরও গণভোট লাগবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। বিএনপি বলেছে, সংবিধানের সব সংশোধনীতে গণভোট প্রযোজ্য নয়। যদি ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হয় তাহলে গণভোটে যেতে হবে। ভবিষ্যৎ সংসদ যদি কোনো কোনো বিষয়কে গণভোটের জন্য উপযুক্ত মনে করে, তখন সেটা হবে। 

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় স্পিকারসহ ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমবে। বিএনপির এ নেতা বলেন, এনসিসি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়নি। তবে দফাওয়ারি আলোচনার শুরুতেই জানিয়েছি, বিএনপি এনসিসি গঠনের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। এনসিসির চর্চা নেই দেশে। হঠাৎ তা করলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাহী বিভাগ এবং সংসদ দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে। যে সময় সংসদ থাকবে না বা সংসদ ভেঙে যাবে, তখন এনসিসি খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্যকিছু করে কিনা, তা দেখতে হবে।

বিএনপি আগেই জানিয়েছিল, শেখ হাসিনার সরকারের করা পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে সংবিধানের যে চার মূলনীতি ছিল, তা পুনর্বহাল করতে হবে। এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের করা চার মূলনীতি পুনর্বহাল তথা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ ফেরত চায়। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এখানে একটা ভুল বোঝার কারণ ছিল, কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ অন্যগুলো বাতিলে জন্য প্রস্তাব করেছে। বিএনপি চেয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বাবস্থায় যাওয়া হোক। ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই; আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ মূলনীতি হিসেবে থাকবে। সুতরাং বিএনপি বহুত্ববাদের পক্ষেও নয়,  ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নয়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার– যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রয়েছে, সেগুলো প্রস্তাবনা ও মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা– কমিশন প্রস্তাব করেছে। এতে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত। 
বৈঠক সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের অন্তর্বর্তী সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, সে জন্যও সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে দলটি অভিমত জানিয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ স ল হউদ দ ন প রস ত ব র সদস য ব এনপ র র মন র এনস স গণভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট কথা বলে দুই দেশের উদ্বেগজনক বাণিজ্য বিরোধের মীমাংসা করতে পারলেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর বিজ্ঞ নেতারা দীর্ঘ আলোচনা করে ঠিক করতে পারছেন না কীভাবে নির্বাচন ও সংস্কার কাজটি করা যাবে।

অনেক আলোচনা ও বিতর্কের পর ১৭ অক্টোবর বৃষ্টিস্নাত বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বেশ ঘটা করে ২৫টি দল জুলাই সনদে সই করেছিল; চারটি বামপন্থী দল রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তন করার প্রতিবাদে সনদে সই দেয়নি, তাতে অবাক হইনি। কিন্তু ছাত্রনেতৃত্ব থেকে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক পার্টি, যারা জুলাই সনদের দাবিটি প্রথম তুলেছিল, তাদের সই না দেওয়াটা অস্বাভাবিক ঠেকেছে। এটা নিয়ে তারা যে দর–কষাকষি করছে, তার পেছনে কি নীতিগত অবস্থান, না ভোটের হিসাব–নিকাশ মুখ্য ছিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্যে যে সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করেছে, তা নিয়ে রাজনীতির মাঠ বেশ গরম। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল একে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও তামাশা বলেও অভিহিত করেছে। আবার কেউ কেউ স্বাগতও জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, জুলাই সনদ ও আইনি ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হতে পারলে নির্বাচন হবে কীভাবে?

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তিনটি বলয় তৈরি হয়েছে। একটি বলয় হলো বিএনপি ও তাদের সমর্থক-অনুসারী দল। আরেকটি হলো জামায়াতে ইসলামী ও এর অনুসারী দল। তৃতীয়টি হলো জাতীয় নাগরিক পার্টি। আবার কোনো কোনো দল দুই নৌকায় পা দিয়ে রেখেছে। যেখানে গিয়ে ভোটের মাঠে সুবিধা করা যাবে, শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যাবে।

মাঠে সক্রিয় থাকা ৩০টি রাজনৈতিক দলকে নিয়েই সরকার তথা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘ আট মাস ধরে আলোচনা করে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৪৮টি বিষয় যেহেতু সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেহেতু এগুলোর আইনি ভিত্তি তৈরির জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে, যা নিয়ে আবার মতভেদ দেখা দিয়েছে। যদিও সনদ তৈরির সময় বলা হয়েছিল, তারা আইনি ভিত্তির সুপারিশ করবে না। কিন্তু অসমাপ্ত সনদ করতে গিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আরও জট পাকিয়ে ফেলেছে।

জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসতে না পারলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কাটবে না। সরকার বলছে, তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রতিযোগী রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজি করাতে না পারলে কীভাবে সেই নির্বাচন হবে? প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন সামনে রেখে বড় আক্রমণের আশঙ্কার কথা বলেছেন। সেই আশঙ্কা মোকাবিলার দায়িত্ব তো সরকারকেই নিতে হবে। 

যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তীব্র, তার একটি হলো গণভোটের তারিখ। জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অনুসারীরা বলছে, নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের অনুসারীদের দাবি, সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হতে পারবে না। তাঁরা মনে করেন, আগে গণভোটের দাবি তোলা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার দুরভিসন্ধি ছাড়া কিছু নয়। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অবশ্য দুই বিকল্প প্রস্তাবই সরকারের কাছে পেশ করেছে। সমস্যা হলো যিনি সরকারপ্রধান, তিনি ঐকমত্য কমিশনেরও প্রধান। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে কে কার কাছে প্রস্তাব পেশ করেছেন।

দ্বিতীয়ত, জুলাই সনদে ঐকমত্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের আপত্তিগুলো লিপিবদ্ধ হলেও আইনি ভিত্তির সুপারিশে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও তাদের অনুসারীদের প্রধান আপত্তি এখানেই। জুলাই সনদে বলা হয়েছে, যেসব বিষয় রাজনৈতিক দলগুলো আপত্তি জানিয়েছে, নির্বাচনে তারা জনগণের রায় পেলে সেটি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য নয়। কিন্তু আইনি ভিত্তিতে যখন সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে এবং সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে সেটি অনুমোদন করে নিলে সংসদের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে।

তাদের তৃতীয় আপত্তির জায়গা হলো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আইনি ভিত্তি অনুমোদিত হয়ে যাওয়া। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলেছে, যদি ৯ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ উল্লিখিত বিষয়ে আইন পাস না করে, তাহলে সেটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অনুমোদিত হয়ে যাবে। ঐকমত্য কমিশনের এই আইনি ভিত্তির সঙ্গে ১৯৭০ সালে ইয়াহিয়া খান প্রণীত এলএফওর মিল খুঁজেও পেয়েছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র অনৈক্যের কারণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ‘দুরূহ চ্যালেঞ্জ’ দেখছে সরকার। তবে গণভোটসহ সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করার বিষয়টিও গভীরভাবে চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ (প্রথম আলো, ৩১ অক্টোবর ২০২৫)

সিদ্ধান্তটি কবে হবে, কেমন হবে? যদি একই দিনে দুই ভোট করার পক্ষে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে জামায়াত ও এনসিপি কি মেনে নেবে? আর যদি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হয়, বিএনপি কি তা গ্রহণ করবে? যদি না করে, কী পরিস্থিতি তৈরি হবে?

রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই সনদের পক্ষে এনে সরকার যতটুকু বাহবা পেয়েছিল, তার বেশি সমালোচিত হয়েছে আইনি ভিত্তি দিতে গিয়ে। এখানে কোনটি ন্যায্য, কোনটি অন্যায্য; তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেমন একে অপরকে বিশ্বাস করবে না, তেমনি তাদের বড় অংশ সরকারের প্রতিও আস্থাশীল নয়। নির্বাচনের বিষয়ে শুরু থেকে সরকারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন সন্দেহ বাড়িয়েছে, তেমনি সরকারের প্রতিও একধরনের অনাস্থা সৃষ্টি করেছে।

সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল, রাজনৈতিক দলের সংস্কার, সেখানেই তারা কম গুরুত্ব দিয়েছে। তারা এই একটি বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিলে রাষ্ট্রীয় ও রাজনীতির সংস্কারকাজ অনেকটা সহজ হতো। এখন রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের চাপে সনদে যতই সই করুক না কেন, কাজ করবে তাদের মতো করে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধানের দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন নিয়ে যতটা ব্যস্ত ছিল, রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ণ নিয়ে ততটাই উদাসীন থেকেছে। 

জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসতে না পারলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কাটবে না। সরকার বলছে, তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রতিযোগী রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজি করাতে না পারলে কীভাবে সেই নির্বাচন হবে? প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন সামনে রেখে বড় আক্রমণের আশঙ্কার কথা বলেছেন। সেই আশঙ্কা মোকাবিলার দায়িত্ব তো সরকারকেই নিতে হবে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন যত বাড়বে, আক্রমণের আশঙ্কারও তত জোরদার হবে। এই সহজ সত্যটি সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে চাইলে অবিলম্বে সৃষ্ট জট খোলার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসুন। সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে।

সোহরাব হাসান, সাংবাদিক ও কবি

* মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: তুরস্ক
  • গণভোটের রায়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় জামায়াত