অভিযানসংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি থেকে গাজায় চিকিৎসকদের হত্যা : আইডিএফ
Published: 21st, April 2025 GMT
অভিযানসংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি থেকে গাজায় চিকিৎসকদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তাদের তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গাজায় ১৫ জন চিকিৎসক নিহত হন।
ইসরায়েলি বাহিনী তদন্ত করে বলেছে, তাদের নির্দেশ সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি ও আদেশ লঙ্ঘনের কারণে এ ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এ ঘটনার তদন্তে বেশ কিছু ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। তদন্তের সময় অসম্পূর্ণ এবং ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ২৩শে মার্চ ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং একটি ফায়ার সার্ভিস ট্রাকের একটি বহরে হামলা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে জাতিসংঘের এক কর্মীসহ ১৫ জন নিহত হন।
এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা শত্রু বাহিনীর হুমকির সম্মুখিন হয়েছে ভেবে গুলি চালিয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখেছে, নিহতদের মধ্যে ছয়জন হামাস সদস্য ছিলেন। সেখানে কোনো বাছবিচার ছাড়াই হত্যার বিচারের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
নিহতদের নাম প্রকাশ্যে থাকা সত্ত্বেও, হামাসের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততার প্রমাণ তারা উপস্থাপন করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাটি প্রতিকূল এবং বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে এলাকায় ঘটেছে অভিহিত করা হয়েছে এবং দ্রুতগতিতে যান এগিয়ে আসার পর ঘটনাস্থলে থাকা কমান্ডার তাৎক্ষণিক এবং স্পষ্ট হুমকি অনুভব করেছিলেন।
এ ছাড়া সেখানে যথেষ্ট আলো ছিল না বলেও আইডিএফ দাবি করেছে। তারা বলেছে, অ্যাম্বুলেন্স শনাক্ত করতে পারেনি তারা।
ইসরায়েল প্রথমে দাবি করেছিল, সন্দেহজনক গাড়ি অন্ধকারে আসতে দেখে সৈন্যরা গুলি চালিয়েছে । গাড়িতে হেডলাইট জ্বালানো ছিল না। এ ছাড়া গাড়ি চালানোর আগে অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা হামলায় নিহত চিকিৎসাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের মুঠোফোন থেকে সম্পূর্ণ ভিডিওটি উদ্ধার করেছে। আইডিএফ তাঁকে হত্যা করে ছোট একটি গর্তে কবর দিয়ে দেয়।
রিফাত রাদওয়ানের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে সম্মুখ বাতি ও জরুরি ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন চিকিৎসাকর্মীদের ওই দল। এ সময় হাই-ভিউ জ্যাকেট পরে থাকায় কমপক্ষে একজন কর্মীকে হলেও দেখা যাওয়ার কথা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, গাড়িতে থাকা ওই দলটির গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল এবং তাঁরা গাড়ির বাতি নিভিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু রিফাত রাদওয়ানের করা ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর সেনাবাহিনী তাদের বক্তব্য পরিবর্তন করে স্বীকার করেছে যে তাদের দাবি ভুল ছিল।
১৫ জন নিহত কর্মীর মৃতদেহ বালিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়নি। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ওই এলাকায় নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারেনি বা ঘটনাস্থল সনাক্ত করতে পারেনি।
রেড ক্রিসেন্ট এবং আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনার স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে বিবিসি জানায়, গাজায় ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার সময় ইসরায়েলি সেনারা ১০০টিরও বেশি গুলি ছুড়েছে। এর মধ্যে কিছু গুলি মাত্র ১২ মিটার (৩৯ ফুট) দূর থেকে করা হয়েছে। একটি মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওর ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষণে এমনটি দেখা গেছে।
একজন কমান্ডারকে বরখাস্ত করা এবং অন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়ার আইডিএফের সিদ্ধান্ত অস্বাভাবিক নয় - গত বছরের এপ্রিলে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজন সাহায্য কর্মী নিহত হওয়ার পর সামরিক বাহিনী দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল তদন ত ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর মুসলিমদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় ও তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন আরও বৃদ্ধি করছে।
কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্যটক হিসেবে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে।
পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালাতে পারে।
এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের হয়রানি করছে। তারা এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে দাবি করছে।
মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। ‘পাকিস্তানি’ বা ‘বাংলাদেশি’ তকমা অনেক সময়েই হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে।
উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটক—এই দুই রাজ্যে মুসলিমদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবরে সেগুলোকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সরকারি কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা অনেকটা সমষ্টিগত শাস্তির মতো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি