জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড.

আসিফ নজরুল।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা

১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আগে একটা মানবাধিকার কমিশন ছিল, কিন্তু সেটি কার্যত দন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। নিয়োগ পদ্ধতিতে ত্রুটি, এখতিয়ারে ঘাটতি এবং নেতৃত্বের দুর্বলতায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবার সেটিকে সত্যিকারের এখতিয়ারসম্পন্ন, ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”

তিনি জানান, নতুন অধ্যাদেশে মানবাধিকার কমিশনের কাঠামো, এখতিয়ার ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কমিশন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করতে আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করা হবে এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিয়োগ পদ্ধতিটা এমনভাবে করেছি যাতে অভিজ্ঞ, যোগ্য ও মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় মানুষরা কমিশনে জায়গা পান।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি এবং প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানবাধিকারগুলোকেও এই কমিশনের এখতিয়ারে আনা হয়েছে। এর ফলে কমিশন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।”

অধ্যাদেশে কমিশনের এখতিয়ার বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও কমিশন তদন্ত করতে পারবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “আগের কমিশনের এখতিয়ারে গুরুতর সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষ করে শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে। এবার সেই সীমাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে।”

এছাড়া, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার সংরক্ষণমূলক যেকোনো আইনের বাস্তবায়নের দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আলাদা করে ‘গুম কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি জানান।

অধ্যাদেশে কমিশনের আদেশ প্রতিপালনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকে কমিশনের সুপারিশ বা নির্দেশ উপেক্ষা করা যাবে না। এর বাধ্যবাধকতা আইনি কাঠামোয় যুক্ত করা হয়েছে।”

ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।

ঢাকা/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ম হ ম মদ ইউন স আইন উপদ ষ ট র এখত য় র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা যুদ্ধের সংবাদে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগে ১৫০ লেখক নিউইয়র্ক টাইমস বর্জন করছেন

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং গাজায় যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনে ‘পক্ষপাতিত্ব’ করার অভিযোগ এনে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার মতামত বিভাগে আর লিখবেন না বলে ১৫০ জনের বেশি লেখক ও কলাম লেখক এক অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

ওই অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষরকারীরা লিখেছেন, নিউইয়র্ক টাইমস যদি তাদের পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশনের জন্য দায় স্বীকার না করে এবং গাজায় চালানো ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সত্যিকারের ও নৈতিক প্রতিবেদন না দেয়, তাহলে কোনো ব্যক্তির লেখা নিবন্ধ সংবাদকক্ষ বা সম্পাদক পর্ষদের জন্য কোনো ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে কাজ করবে না। বরং তাদের এই অসদাচরণ চালিয়ে যাওয়ারই অনুমতি দেবে।

লেখকেরা আরও যোগ করেছেন, ‘আমরা কেবল আমাদের শ্রম প্রত্যাহারের মাধ্যমেই সেই প্রভাবশালী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি, যা টাইমস দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মিথ্যাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ব্যবহার করে আসছে।’

চিঠিতে রিমা হাসান, চেলসি ম্যানিং, রাশিদা তালিব, স্যালি রুনি, ইলিয়া সুলেইমান, গ্রেটা থুনবার্গ, ভিয়েট থান এনগুয়েন এবং ডেভ জিরিন-এর মতো কয়েক ডজন সুপরিচিত কর্মী, শিল্পী ও মার্কিন রাজনীতিবিদ স্বাক্ষর করেছেন।

চিঠিতে লেখকেরা আরও লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখকদের প্রতি আমাদের কর্তব্য হলো, নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা এবং তাদের ভুলগুলো স্বীকার করতে বাধ্য করা। যাতে গণহত্যা, নির্যাতন ও বাস্তুচ্যুতিকে তারা কখনো বৈধতা দিতে না পারে।’

নিউইয়র্ক টাইমস বর্জনে যোগ দেওয়া অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন ক্রিস হেজেস, মার্ক ল্যামন্ট হিল, নুরা ইরাকাত, বিজয় প্রশাদ, মারিয়াম কাবা, রবিন ডি জি কেলি, মোহাম্মদ আল-কুরদ, সুসান স্ট্রাইকার, জিয়া টোলেন্টিনো, ইভ এল ইউইং, ডিন স্পেড, নাইল ফোর্ট, সুসান আবুলহাওয়া এবং রশিদ খালিদি।

তিন দাবি

স্বাক্ষরকারীরা নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছেন—

১. পত্রিকাটি যেন ‘ফিলিস্তিনবিরোধী পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে পর্যালোচনা করে’ এবং ফিলিস্তিন কভারেজের জন্য নতুন সম্পাদকীয় মান তৈরি করে। স্বাক্ষরকারীরা নতুন সোর্সিং (উৎস যাচাই) ও রেফারেন্স পদ্ধতি, সেই সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বর্ণনা দিতে পত্রিকার ব্যবহৃত শব্দভান্ডারের জন্য একটি নতুন স্টাইল গাইড চেয়েছেন। চিঠিতে এমন সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে, যাঁরা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন।

২. লেখকেরা নিউইয়র্ক টাইমসকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘Screams Without Words’ (স্ক্রিমস উইদাউট ওয়ার্ডস) শিরোনামের একটি প্রবন্ধ প্রত্যাহার করতে বলেছেন। ওই প্রবন্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি নারীদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন করেছে।

লেখকেরা লিখেছেন, ওই প্রবন্ধটি মূলত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্সের একজন প্যারামেডিকের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে লেখা হয়েছিল। অথচ প্রবন্ধটিতে যে কিবুৎসে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়, পরে সেখানকার একজন মুখপাত্র নিউইয়র্ক টাইমসের অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।

তাঁরা আরও লিখেছেন, ওই প্রতিবেদনের লেখকদের মধ্যে একজন আনাত শোয়ার্টজকে পরে পত্রিকাটি তদন্তের আওতায় আনে। কারণ জানা যায়, তিনি গাজাকে ‘কসাইখানায়’ পরিণত করার আহ্বান জানানো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টে লাইক দিয়েছিলেন।

প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার আগে হামলায় নিহত কথিত যৌন নিপীড়নের শিকার মেয়েদের পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, যা গল্পের দাবিগুলোর সঙ্গে মেলেনি। তবে সেই সাক্ষাৎকারগুলোর কোনোটিই নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়নি।

৩. চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ডকে ইসরায়েলের ওপর মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানানোর দাবি করেছেন।

স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, তাঁদের দাবিগুলো ‘অসম্ভব বা অযৌক্তিক’ নয়। লেখকেরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, পত্রিকাটি ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে এইডস সংকটের সময় তার স্টাইল গাইড হালনাগাদ করেছিল এবং ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকে হামলার পর ভুল সংবাদের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিল।

লেখকেরা চিঠিতে আরও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক টাইমসের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী কোনো সংবাদপত্র নেই। পশ্চিমা বিশ্বের সংবাদকক্ষগুলোতে সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা এই পত্রিকার কভারেজ অনুসরণ করেন। এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের “কাগজের দলিল” হিসেবে গণ্য করা হয়।’

স্বাক্ষরকারীরা আরও যোগ করেছেন, ‘ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধনে যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে নিউইয়র্ক টাইমস দখলদার বাহিনীর যুদ্ধাপরাধকে আড়াল করেছে, ন্যায্যতা দিয়েছে এবং সরাসরি অস্বীকার করেছে। এভাবে তারা ইসরায়েলি সরকার ও সামরিক বাহিনীর জন্য মাইক হিসেবে কাজ করার দশকব্যাপী অভ্যাস বজায় রেখেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি
  • যমুনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন
  • এই তিন কন্যার একজন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা, স্বামীও নায়ক
  • নিকোলাই গোগোলের নগরে
  • বিস্মৃতির ছোবল
  • ইবিতে ছাত্রীর পোশাক নিয়ে শিক্ষকের কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
  • সাভারে ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা চান
  • গাজা যুদ্ধের সংবাদে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগে ১৫০ লেখক নিউইয়র্ক টাইমস বর্জন করছেন