চাঙ্গা রেমিট্যান্স প্রবাহে কাটছে ডলার সংকট
Published: 4th, May 2025 GMT
রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে স্বস্তিতে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৫৪২ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। বাজারে ডলার সংকট কাটছে। দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে ডলার। ডলার নিয়ে হাহাকার নেই ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থ পাচার ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে হুন্ডি চাহিদা কমেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে এখন খোলাবাজারের ডলার দরে পার্থক্য নেই। বরং ব্যাংকে পাঠালেই প্রণোদনাসহ বেশি অর্থ পাচ্ছেন প্রবাসীরা।
এর আগে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর দেশে দেশে লকডাউনের মধ্যে হুন্ডি কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স চাঙ্গা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার, যা ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড.
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ছাড়া চলতি অর্থবছরের সব মাসেই আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। একক মাস হিসেবে গত এপ্রিলে প্রবাসীরা ২৭৫ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা প্রায় ৭১ কোটি ডলার বা ৩৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। এপ্রিল মাসের রেমিট্যান্স একক মাস হিসেবে এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এখন পর্যন্ত কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ প্রায় ৩৩০ কোটি ডলার এসেছে গত মার্চে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার আসে গত ডিসেম্বরে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই গত অর্থবছরের পুরো সময়ের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছর রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার।
রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে টানা ২০ মাস পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল রিজার্ভ উঠেছে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে। অবশ্য গতকাল রিজার্ভ সামান্য কমে আবার ২১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল ২০২২ সালের আগস্টে। সেখান থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নামে। তবে গত ৮ আগস্টের পর রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না সরকার। বরং আগের সরকারের রেখে যাওয়া ৩৭০ কোটি ডলার মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়ার বড় অংশই পরিশোধ করেছে। এর পরও রিজার্ভ বেড়ে এ পর্যায়ে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, অর্থ পাচার ঠেকাতে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ চলমান আছে। এ ছাড়া প্রবাসীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ছে। রপ্তানি আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। যে কারণে ডলার বাজারে এখন অস্বস্তি নেই।
ব্যাংকাররা জানান, রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে এখন ডলার নিয়ে ব্যবসায়ীদের হাহাকার নেই। বিগত সরকারের সময়ে আমদানিতে সর্বোচ্চ ১২৭ টাকায় উঠে যাওয়া ডলার অনেক দিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানি, ভ্রমণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরোপ করা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আমদানিকারকরা এখন ব্যাংকে গিয়ে ডলার পাচ্ছেন। আগে যেখানে ডলারের অভাবে আমদানি কমে যাচ্ছিল। চলতি অর্থবছরের গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানিতে আট মাসে আমদানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ না কমলে ডলার বাজারে স্বস্তি আরও বাড়ত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রব দ ধ র প রব স র র র একই আমদ ন সরক র সময় র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল