আ.লীগ নেতাদের নিয়ে বিএনপি অফিস উদ্বোধন
Published: 10th, May 2025 GMT
শরীয়তপুরের নড়িয়া নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ফয়জুল হাসান বাদল মুন্সী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মনি দেওয়ান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্বাস হালদার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বোরহান তফাদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাপা তফাদার, সহসভাপতি মোস্তফা হাওলাদার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য নজু ছৈয়াল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আবুল বাশার খালাসী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সিয়াম সিকদার, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছাত্তার চৌধুরী এবং ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মিন্টু ছৈয়াল।
এ সময় বিএনপির উপজেলা সভাপতি সামসুল আলম দাদন মুন্সী উপস্থিত ছিলেন। তাঁর পাশেই ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার খুনি ফ্যাসিবাদী পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের একটি অঙ্গসংগঠনের প্রথম শ্রেণির নেতাদের নিয়ে বিএনপির উপজেলা সভাপতির বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধনের বিষয়টি লজ্জাজনক। পরিতাপের বিষয় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা স্টেজে অতিথিদের পাশে বসেছিলেন। পতিত হাসিনা সরকারের আমলে তারা বিএনপির নেতাকর্মীকে হয়রানি করেছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামসুল আলম দাদন মুন্সী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে দলীয় সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী এ ঘটনায় দায়ী সব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা বিএনপি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জেলা ও উপজেলার অনেক বিএনপি নেতা। তাদের মতে, বিষয়টি বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বেইমানির শামিল।
নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সভাপতির বিরুদ্ধে অনেকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করে থাকেন এবং শনিবারের ঘটনাও সত্য। সভাপতি শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিয়ে বিএনপির অফিস উদ্বোধন করেছেন, যা তাঁর নজরে পড়েছে। তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বিষয়টি জেলা বিএনপিকে জানিয়েছেন। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামসুল আলম দাদন মুন্সী বলেন, ‘আমি কোনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে নিয়ে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করিনি। যদি কেউ আসে, সেটি তারা দেখতে বা আমাদের কথা শুনতে আসতে পারে।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত রয়েছে, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে নিয়ে কোনো সভা-সমাবেশ করা যাবে না। তিনি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে কথা বলবেন। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলের মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ আওয় ম ল গ ন ত কর ম ক ব এনপ র স অন ষ ঠ ন উপস থ ত ন আওয় ম গঠন ক উপজ ল সদস য ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব লঙ্ঘনের অভিযোগে দুই আয়োজক গ্রেপ্তার
ইরানের কিশ দ্বীপে এক দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব ছাড়া নারীদের অংশ নেওয়ার ছবি প্রকাশের পর দুজন আয়োজককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার দেশটির বিচার বিভাগ এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশটির অতি রক্ষণশীলদের সমালোচনা বেড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক হিজাব আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ ব্যর্থ হচ্ছে। পশ্চিমা প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কায় এসব সমালোচনা আরও জোরালো হয়েছে।
গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০২২ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর থেকে ইরানে অনেক নারী হিজাব আইন লঙ্ঘন করে চলেছেন। গত সপ্তাহে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দপ্তর জুনে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হিজাববিহীন এক নারীর ছবি প্রকাশ করে সমালোচনার মুখে পড়ে।
দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাববিহীন নারীদের অংশ নেওয়ার ছবিগুলো শুক্রবারের। এতে দেখা যায়, অনেক নারী হিজাব ছাড়া দৌড়ে অংশ নেন। ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে হিজাব বাধ্যতামূলক করে ইরান।
বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৌড় প্রতিযোগিতার দুই প্রধান আয়োজককে পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের মধ্যে একজন কিশ মুক্তাঞ্চলের কর্মকর্তা। অন্যজন প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, কিশ দ্বীপের এ দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।
এর আগে ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছিল, দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজকদের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রসিকিউটরের বরাতে মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের প্রচলিত আইনকানুন, ধর্মীয় ও সামাজিক নীতি এবং পেশাগত নীতিমালা মানার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগেই (আয়োজকদের) সতর্ক করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানটি এমনভাবে আয়োজন করা হয়েছে, যা সামাজিক শালীনতা লঙ্ঘন করেছে।’
ইরানের ‘তাসনিম’ ও ‘ফার্স’-এর মতো রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যমগুলো এ দৌড় প্রতিযোগিতাকে আগেই অশালীন এবং ইসলামি আইনের প্রতি অসম্মানজনক উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছিল।
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লব হয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত শাহ সরকার উৎখাত হয়। নতুন প্রতিষ্ঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র নারীদের পোশাকে কড়াকড়ি আরোপ করে আইন পাস করে। শুরুতেই এ আইনের বিরুদ্ধে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল।
ইরানের বর্তমান আইন অনুযায়ী, জনপরিসরে নারীদের মাথার চুল ঢেকে রাখা এবং শালীন ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক।
২০২২ সালে যথাযথভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে রাজধানী তেহরান থেকে মাশা আমিনি নামের এক কুর্দি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নীতি পুলিশের হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটিতে কয়েক মাস টানা বিক্ষোভ হয়। এতে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কয়েক শ বিক্ষোভকারী নিহত হন। গ্রেপ্তার হন কয়েক হাজার। এরপর হিজাব আইন মানার ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে শৈথিল্য দেখা যায়।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইরানের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে হিজাব আইন প্রয়োগের ব্যর্থতার অভিযোগ আনে। পরে দেশটির প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই হিজাব আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
ইরানের পার্লামেন্ট হিজাব আইন লঙ্ঘনকারী নারীদের কঠোর শাস্তির আদেশসংবলিত একটি আইন পাস করে। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সরকার তা অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০২৩ সালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজ শহরের এক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে নারীরা হিজাব ছাড়া অংশ নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ওই বছরের মে মাসে দেশটির অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।