লোডশেডিংয়ে অনেক সময় গৃহস্থালি থেকে শুরু করে কলকারখানার কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। মানুষকেও মানিয়ে নিতে হয় এ সমস্যার সঙ্গে। লোডশেডিং সমস্যার কারণে রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিকস অ্যাপ্লায়েন্স নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে দিনের বড় একটা সময় বাড়ির বাইরে থাকায় কর্মজীবী অনেকে এ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। ভোল্টেজের ওঠানামা ও দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় নষ্ট হতে পারে রেফ্রিজারেটরে রাখা খাবার। হয় আরও নানা সমস্যা। এখন দারুণ সব প্রযুক্তি রয়েছে বাজারে, যেগুলো দীর্ঘ সময় লোডশেডিংয়েও রেফ্রিজারেটর ঠান্ডা রাখে এবং খাবার থাকে সতেজ। শুধু দেখতে হবে পছন্দের ফ্রিজটিতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগুলো রয়েছে কিনা। 
কুলপ্যাক 
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় কুলপ্যাক প্রযুক্তি ফ্রিজার সেকশন থেকে অনেক পরিমাণ তাপ শোষণ করে নেয়, যা নিম্ন তাপমাত্রা বজায় রেখে খাবারকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। সম্প্রতি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্রিজে এ প্রযুক্তি দেখা যাচ্ছে। কুল প্যাক প্রযুক্তি বিদ্যুৎ না থাকলেও এক ঘণ্টা পর্যন্ত খাবার ঠান্ডা রাখতে পারে। এমনকি এ প্রযুক্তি আট ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজার কম্পার্টমেন্ট ঠান্ডা রাখে। এতে করে আইসক্রিম যেমন গলে যাবে না, অন্যান্য খাবারও ঠিক থাকবে। 


মাল্টি-ফ্লো প্রযুক্তিতে বায়ুর সঞ্চালন 
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে খাবার সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে মাল্টি-ফ্লো প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তিতে রেফ্রিজারেটরের ভেতর বিভিন্ন দিক থেকে ঠান্ডা বায়ুর সঞ্চালন ঘটায়। এয়ার ডাক্টের মাধ্যমে রেফ্রিজারেটরের প্রতিটি শেলফে রেফ্রিজারেটরের পেছন দিক থেকে শেলফগুলোর জন্য আলাদা নির্দিষ্ট স্থান থেকে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করে। যে কারণে ঘণ্টাব্যাপী বিদ্যুৎ না থাকলেও সকল খাবার সমানভাবে ঠান্ডা থাকবে। 

অলরাউন্ড কুলিং
অলরাউন্ড কুলিং-এর মতো কিছু ফিচার নিশ্চিত করে, যেন রেফ্রিজারেটরের সব স্থান সমানভাবে ঠান্ডা হয়। প্রতিটি শেলফে একাধিক ভেন্টের মাধ্যমে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়; তাই রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে বজায় থাকে এবং খাবারও থাকে সতেজ। এ ফিচার ক্রমাগত তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে এবং ভেন্টের মাধ্যমে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত করে। ফলে, প্রতিটি খাবার বিদ্যুৎ চলে গেলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য সতেজ থাকে। এ প্রযুক্তির ফলে রেফ্রিজারেটরের একদম নিচের তাকে থাকা সবজিও সতেজ থাকবে, ওপরের দিকের তাকগুলোতে থাকা খাবারগুলোর মতোই। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার সময়ও রেফ্রিজারেটরের ভেতর পচনশীল খাবারও থাকবে সতেজ ও নিরাপদ।


 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পাটপণ্যের ব্যবহার বাড়াতে পণ্যবৈচিত্র্য আনার পরামর্শ

সুইজারল্যান্ডসহ উন্নত দেশের শপিং মলগুলোয় বাংলাদেশি পাটপণ্যের ব্যবহার হচ্ছে। অথচ দেশে এখনো পাটপণ্যের প্রচলন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তাই পলিথিন বর্জন করে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভোক্তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।

আজ সোমবার রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ‘দ্য সোল অব জুট: ক্র্যাফট, কালচার, ট্যুরিজম অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক পাটপণ্য প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আর বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

এ ছাড়া বস্ত্র ও পাটসচিব বিলকিস জাহান রিমি, জুট ডাইভার্সিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক ফ্রাঁসোয়া শমব্রো এবং বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদুল করিম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা, ২৬ মিরপুর রোড, ধানমন্ডিতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে কাল বুধবার পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য তা উন্মুক্ত থাকবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অতিথিরা পাটপণ্য প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।

বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সরকার জেডিপিসির সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। পাটপণ্য পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক। তাই পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে উদ্যোক্তাদের পাটপণ্য প্রসারে আরও উদ্যমী হতে হবে।

পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ এবং পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা ২০১৩ কাগজে আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী পরিবেশ দূষণ রোধ এবং দেশীয় পাটের ব্যবহার বাড়াতে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনে, আলু, আটা, ময়দা, তুষ, খুদ, পোলট্রি ফিড, ফিশ ফিড ইত্যাদি ১৯টি পণ্যে পাটের বস্তা বা মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

অনুষ্ঠানের পর বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ১৯ পণ্যে পাটের মোড়কের ব্যবহারের চিত্র জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘আইন ও বিধিমালা থাকলেও এর কার্যক্রম কম। পর্যায়ক্রমে আইন ও বিধিমালা প্রয়োগের ব্যাপারে উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। আজই এ ব্যাপারে পরিবেশ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছি।’

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ রক্ষায় দেশের পাটকেন্দ্রিক শিল্প, সংস্কৃতি, পর্যটন ও উদ্ভাবনকে আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য নতুন নতুন পাটপণ্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি আধুনিক গৃহ ও কর্মস্থলে পাটের নান্দনিক প্রয়োগ বাড়াতে হবে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি ও স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

সরকার কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করা এবং পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে বলেও জানান সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, পাটচাষিদের প্রণোদনা দিতে হবে এবং পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ