সময়টা ২৪ মে।  শনিবার দিবাগত রাত। ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশের নেতৃত্বে গঠিত বিচারকমণ্ডলী যখনকান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরের পর্দা নামানোর আয়োজন করছিলেন তখন বিশ্বের নজর ছিল একটিমাত্র প্রশ্নেকে জিতবে স্বর্ণপামের রাজমুকুট?

সেই মর্যাদাপূর্ণ পাল্ম দ'অর গেল একজন নির্বাসিত নির্মাতার হাতে। যিনি দীর্ঘদিন ছিলেন নীরব প্রতিবাদের প্রতীক। তিনি জাফর পানাহি। ইরানের এক সাহসী চলচ্চিত্রকার। যিনি তাঁর নতুন চলচ্চিত্র ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’এ তুলে ধরেছেন অন্ধকারের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণার আর্তনাদ।

দীর্ঘ ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো কান শহরে পদার্পণ করেন ৬৪ বছর বয়সী জাফর পানাহি। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চারণ করেন হৃদয়বিদারক এক আহ্বান। পুরস্কার পেয়ে তিনি বললেন,
আজ আমি সকল ইরানবাসীর প্রতি আবেদন জানাই— মতের অমিল থাকুক, ভিন্ন পথ থাকুক, কিন্তু চলুন আমরা এক হই। কারণ আজ সবচেয়ে জরুরি হলো আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা।’

এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে গোপনে, সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে। ছবির গল্প বাহিদকে কেন্দ্র করে। সে একজন নকল পায়ের লোককে অপহরণ করে, যে দেখতে ঠিক সেই ব্যক্তির মতো যে তাকে কারাগারে নির্যাতন করেছিল ও তার জীবনের সর্বনাশ করেছে। বাহিদ অন্যান্য কারাবন্দির সঙ্গে যাচাই করতে বেরিয়ে পড়ে যে, এটি সত্যিই তাদের নির্যাতনকারী কিনা এবং তারপর তার সঙ্গে কী করা উচিত সেই 

শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে সমাপনী অনুষ্ঠানে জাফর পানাহির তার হাতে স্বর্ণপাম তুলে দেন অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। তখন মঞ্চে ছিলেন মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান বিচারক ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ।

দুই দশকেরও বেশি সময় পর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সশরীরে হাজির হলেন জাফর পানাহি।  জাফর পানাহির সঙ্গে এসেছেন তার স্ত্রী ও কন্যা। পাশাপাশি আছেন ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবিটির অভিনয়শিল্পী বাহিদ মোবাশ্বেরী, মরিয়ম আফসারী, ইব্রাহিম আজিজি, হাদিস পাকবাতেন, দেলনাজ নাজাফি। 

গত ২০ মে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছবিটির প্রদর্শনী শেষে আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শকরা টানা ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায়। তখনই অনুমান করা যায়, কানে কিছু একটা ঘটাবেন তিনি। ঘটালেনও।  

১৯৯৫ সালের কান উৎসবে জাফর পানাহির ‘হোয়াইট বেলুন’ ক্যামেরা দ’র পুরস্কার জিতেছে। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত ‘থ্রি ফেসেস’ সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছে। ২০১১ সালে এই নির্মাতার ‘দিস ইজ নট আ ফিল্ম’ জন্মদিনের কেকের ভেতর লুকানো একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে ইরান থেকে নিয়ে কান উৎসবে বিশেষ প্রদর্শনী করা হয়।

২০০৯ সালে প্রথবার গ্রেফতার হন জাফর পানাহি। ২০১০ সালে ইরানের একটি আদালতে দেশটির ‘নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে’র অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তিনি ২০ বছরের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিদেশ ভ্রমণে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। জানা গেছে, তাকে কয়েক বছর ধরে ইরান সরকার কোনও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনেনি। বর্তমানে দেশটির আদালতে তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা বিচারাধীন নেই। পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে বলেই এবার কানে আসতে পেরেছেন তিনি। আনন্দের বিষয় হলো, প্রথমবার স্বর্ণপাম নিয়ে দেশে ফিরছেন গুণী এই নির্মাতা।

এবারের আসরে গ্রাঁ প্রিঁ জিতেছে ডেনিশ-নরওয়েজিয়ান পরিচালক ইয়োওয়াকিম ত্রিয়েরের ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’। জুরি প্রাইজ পেয়েছে যৌথভাবে স্পেনের অলিভার লুক্সে পরিচালিত ‘সিরেট’ ও জার্মানির মাশা শিলিনস্কি পরিচালিত ‘সাউন্ড অব ফলিং’। স্পেশাল প্রাইজ পেয়েছে চীনের বাই গান পরিচালিত ‘রেজারেকশন’। ব্রাজিলিয়ান ছবি ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’-এর সুবাদে ওয়াগনার মোরা সেরা অভিনেতা ও ক্লেবার মেনদোঙ্কা ফিলো সেরা পরিচালক হয়েছেন। দু’বার স্বর্ণপামজয়ী বেলজিয়ামের ভ্রাতৃদ্বয় জ্যঁ-পিয়ের ও লুক দারদেন “ইয়াং মাদার’স” ছবির জন্য পেয়েছেন সেরা চিত্রনাট্যকার পুরস্কার। ‘দ্য লিটল সিস্টার’ ছবির সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন ফরাসি তরুণী নাদিয়া মেলিতি।

মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জুলিয়েট বিনোশের নেতৃত্বে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন ভারতীয় পরিচালক পায়েল কাপাডিয়া, অস্কারজয়ী আমেরিকান অভিনেত্রী হ্যালি বেরি, অভিনেতা জেরেমি স্ট্রং, ইতালিয়ান অভিনেত্রী আলবা ররওয়াকার, ফরাসি-মরোক্কান লেখক লেইলা স্লিমানি, কঙ্গোর পরিচালক দিয়ুদো আমাদি, কোরিয়ান পরিচালক হং স্যাং সু, মেক্সিকা পরিচালক কার্লোস রেগাদাস।

এদিকে নবাগত পরিচালক হিসেবে ক্যামেরা দ’র পুরস্কার জিতেছেন ইরাকের হাসান হাদি। তার পরিচালিত “দ্য প্রেসিডেন্ট’স কেক” ছবিটি এর আগে ৫৭তম ডিরেক্টরস’ ফোর্টনাইটে অডিয়েন্স চয়েস অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ৭ হাজার ৫০০ ইউরো জিতেছে। কানের সমান্তরাল বিভাগে এটাই ইরাকের প্রথম ছবি। ক্যামেরা দ’র বিভাগে প্রধান বিচারক ছিলেন ইতালিয়ান পরিচালক আলিস ররওয়াকার। তার নেতৃত্বে বিচারক প্যানেলে ছিলেন আলজেরিয়ান-ফরাসি নির্মাতা ও অভিনেতা রাশিদ হামি, ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক ফ্রেদেরিক মেরসিয়ের, ফরাসি নির্মাতা ও অভিনেত্রী জেরাল্ডিন নাকাশ, নয়্যার লুমিয়েরের সিইও তমাসো ভেরগাল্লো।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব র প রস ক র জ ফর প ন হ চলচ চ ত র পর চ ল ত ন পর চ ল ব চ রক

এছাড়াও পড়ুন:

কানে পুরস্কার জিতল বাংলাদেশের ‘আলী’

৭৮তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতল বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘আলী’। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র শাখার স্পেশাল মেনশন বিভাগে পুরস্কার জিতেছে আদনান আল রাজীব পরিচালিত সিনেমাটি। আজ উৎসবের সমাপনী দিনে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ফেসবুকে পুরস্কারের খবরটি নিশ্চিত করেছেন নির্মাতা আদনান আল রাজীবের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী।

প্রথমবারের মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য শাখায় প্রতিযোগিতা করছে বাংলাদেশের কোনো সিনেমা। কান উৎসবের অফিশিয়াল সাইটে সিনেমাটির গল্প নিয়ে বলা হয়েছে উপকূলীয় একটি শহরের গল্প, যেখানে নারীদের গান গাইতে দেওয়া হয় না। সেখানে এক কিশোর গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উপকূল ছেড়ে শহরে যেতে চায়। কিন্তু এই গান গাওয়া নিয়েই রয়েছে এক রহস্য। সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন আল আমিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষিদ্ধের শেকল ভেঙে কানে জাফর পানাহির স্বর্ণপাম জয়
  • মহাকালে রোমাঞ্চকর লড়াই
  • ২২ বছর পর ফিরেই স্বর্ণপাম জিতলেন নিষিদ্ধ সেই ইরানি পরিচালক
  • কানে পুরস্কার জিতল বাংলাদেশের ‘আলী’
  • ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্মরণীয় ২৫ মুহূর্ত
  • ১০ ব্যান্ড নিয়ে প্রথমবার নজরুল কনসার্ট-অ্যালবাম
  • ‘টানা দশ মিনিট করতালির দৃশ্য কোনোদিন ভুলব না’
  • সাদা বেনারসি আর সিঁথিতে সিঁদুর, লাল গালিচায় অন্য এক ঐশ্বরিয়া
  • কানের লাল গালিচায় অন্য ঐশ্বরিয়া