স্বল্প উন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়ও বাড়ছে। তাই প্রত্যক্ষ করের অবদান পরোক্ষ কর থেকে বেশি হওয়া দরকার। পরোক্ষ করের অনুপাত বাড়লে করভার অতিদরিদ্র থেকে ধনী পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। তাই পরোক্ষ কর সহনশীল মাত্রায় থাকা উচিত। বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের অনুপাত ৩৫: ৬৫।

আসন্ন বাজেট ২০২৫-২৬ এ নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো প্রত্যাশা করছি।

১.

উপকরণের সংজ্ঞা

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ২(১৮ক) ধারায় উপকরণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বর্তমানে ২(১৮ক) অনুযায়ী, কিছু পণ্য ও সেবাকে উপকরণ হিসেবে গণ্য করা হয় না, যার ফলে মূসক রেয়াত দাবি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর ফলে মূসকের ওপর মূসক ধার্য করা হয়। অতএব যদি কোনো মূসক নিবন্ধিত ব্যক্তি মূসক ফরম ৬ দশমিক ৩ ব্যবহার করে অন্য কোনো সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করে, তবে এটিকে উপকরণ হিসেবে গণ্য করা উচিত।

২. করযোগ্য সেবা আমদানি

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ২০ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাইরে থেকে করযোগ্য সেবা আমদানি করলে সেবার মূল্যের ওপর মূসক প্রদেয় হবে। এ ছাড়া ৪৬(১)(খ) ধারার অধীনে উপকরণ কর রেয়াতের জন্য সেবা গ্রহণকারীকে ২০ ধারা অনুযায়ী ঘোষণাপত্রে আমদানি করা সেবার জন্য প্রদেয় উৎপাদন কর আলাদাভাবে প্রদর্শন করতে হবে। তবে মূসক রিটার্নে আমদানি করা সেবার ওপর পরিশোধিত মূসক কীভাবে প্রদর্শন করতে হবে, সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, যা অপ্রয়োজনীয় আইনি বিরোধ তৈরি করে।

৩. মূসক ব্যবস্থার সামগ্রিক অটোমেশন ও মূসক চালান প্রক্রিয়া

বর্তমানে মূসক অনলাইন প্রায় সময় সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেকগুলো মডিউল এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। মূসক ব্যবস্থার সামগ্রিক অটোমেশনের জন্য মূসক অনলাইনব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা দরকার। পাশাপাশি মূসক ৬ দশমিক ৩ কর চালান ইস্যু করার প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় করা উচিত এবং ইলেকট্রনিক চালান (ই-ইনভয়েস বা ইলেকট্রনিক মূসক চালান) চালু করা উচিত।

৪. আমদানির ওপর অগ্রিম কর

মূসক আইনের ৩১ ধারার অধীনে শিল্প উপকরণ এবং কাঁচামাল আমদানির ওপর ৩ শতাংশ অগ্রিম কর ধীরে ধীরে কমানো যেতে পারে। কারণ, এটি শিল্প উৎপাদকদের কার্যকর মূলধন আটকে রাখে এবং তাদের খরচ বৃদ্ধি করে।

৫. উৎস মূসক কর্তন

মূসক অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহের ওপর উৎসে মূসক কাটা উচিত নয়। যদি কোনো উৎসে কর্তনকারী সত্তা অন্য কোনো উৎসে কর্তনকারী সত্তার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক ধার্য করার পর রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যয়িত মূসক ৬ দশমিক ৩ ফরম সরবরাহ করে, তবে উৎসে মূসক কাটা উচিত নয়।

৬. উৎসে মূসক জমা দেওয়া

বর্তমানে উৎসে কর্তিত ভ্যাটের অর্থ আলাদাভাবে জমা দিতে হয়, যা মূসক আইনের মূলনীতির পরিপন্থী। আইনে বলা হয়েছে যে প্রদেয় করের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সমন্বয় যোগ করে এবং ‘ইনপুট ট্যাক্স’–এর সঙ্গে হ্রাসকারী সমন্বয় বিয়োগ করে নিট প্রদেয় পরিমাণ জমা দিতে হবে। এই আইনি বিধান (ধারা ৪৫) অনুসরণ করা উচিত এবং এসআরও ২৪০–কে আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে হবে।

৭. আপিল জামানতের পরিমাণ

কমিশনার (আপিল), ট্রাইব্যুনাল এবং হাইকোর্টে আপিল দাখিলের জন্য বিরোধপূর্ণ ভ্যাটের যে পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হয়, ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আপিলকে কম ব্যয়বহুল করতে তা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা উচিত।

৮. মূসক ফরম

জটিল এবং তথ্যবহুল ক্রয় হিসাব (মূসক ৬ দশমিক ১) এবং বিক্রয় হিসাব (মূসক ৬ দশমিক ২) ফরমের পরিবর্তে সহজ এবং ব্যবহারযোগ্য নতুন মূসক ৬ দশমিক ১ এবং ৬ দশমিক ২ ফরম চালু করা উচিত। তবে নিবন্ধিত ব্যক্তি, যাঁরা আইএএস বা আইএফআরএস অনুযায়ী লেনদেন রেকর্ড এবং হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করতে নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তাঁদের আলাদা ৬ দশমিক ১, ৬ দশমিক ২ এবং ৬ দশমিক ২ দশমিক ১ ফরম বজায় রাখার প্রয়োজন হবে না।

৯. শুল্ক আইনের আধুনিকীকরণ

উৎপাদন, আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে পণ্য খালাস ও সরবরাহের সব শুল্ক ও কর আইন, বিধি এবং প্রক্রিয়া হালনাগাদ ও আধুনিকীকরণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শুল্ক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখে এটি করা উচিত।

১০. শুল্ক মূল্যায়ন

বিদ্যমান শুল্কমূল্য ও সর্বনিম্ন মূল্যের নিয়ম, যা অর্থ পাচারকে সহজতর করতে পারে, তা বাতিল করা উচিত। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শুল্ক মূল্যায়ন চুক্তির ওপর ভিত্তি করে ২০০০ সালের শুল্ক মূল্যায়ন বিধি প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর শুল্ক আইন ২০২৩-এর ২৭ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করা উচিত।

১১. শুল্ক ব্যবস্থার অটোমেশন

আমদানির ওপর শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ওপর মনোযোগ না দিয়ে শুল্ক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও অটোমেশনের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব আমদানি করা পণ্যের ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণের ওপর আমাদের জোর দেওয়া উচিত। এটি অর্জনের জন্য, বর্তমান অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) কর্মসূচিকে ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিয়মিত কর্মশালা পরিচালনার মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) মডিউলগুলোর পুরো বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনপ্রিয় করতে হবে।

আমরা প্রত্যেকে পরোক্ষ কর প্রদান করি। কিন্তু এই কর সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। আমদানি বা উৎপাদন পর্যায়ে আহরণ সম্ভব হলেও পরিবেশন ও খুচরা পর্যায়ে কর আদায় করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। অতীতে ইএফডি, এসডিসি ও ইএফডিএমএস চালু করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি; বরং ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসকের হার সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে যাঁ×রা আইন পরিপালন করে ব্যবসা করেন, তাঁদের ওপর করভার বৃদ্ধি পায়। যেহেতু মাঠপর্যায়ে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই। উৎপাদন পর্যায়ে ই-ইনভয়েসিং এবং পরবর্তী পর্যায়গুলোতে ক্যাশলেস সিস্টেম চালু করতে না পারলে লেনদেন শনাক্ত করা যাবে না। লেনদেন শনাক্ত করতে না পারলে সঠিক পরিমাণে মূসক আহরণ করা যাবে না এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যাবে না। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সঠিক মূসক হিসাবায়নের মাধ্যমে আয় এবং ব্যয়ের ভিত্তি তৈরি হয়। যদি এটি সঠিক হয়, আয়কর নির্ণয় সঠিক এবং সহজ হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ব যবস থ র ৬ দশম ক ২ শ ল ক আইন ক ষ কর র দশম ক ১ ন র ওপর র ওপর ম সরবর হ পর ম ণ পর য য় র জন য আইন র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের গুদামে ইতোমধ্যেই এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো শুরু হয়েছে।

সোমবার বিকেলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্বাচন ভবনের বেসমেন্টে অবস্থিত ইসির গুদামে নির্বাচনী সরঞ্জাম দেখতে যান। এ সময় তারা সংগৃহীত ভোটগ্রহণের বিভিন্ন সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখেন।

এসব নির্বাচনী সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, লক, ঢাকনা, গানি ব্যাগ, সিল, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট ইত্যাদি।

ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী দ্রব্য, ফরম, প্যাকেট বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বাসসকে বলেন, ‘আজ বার্ষিক দ্রব্য সংগ্রহের পরিকল্পনা সংক্রান্ত মিটিং করেছি। ইতিমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম আসা শুরু হয়েছে।’

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বাসসকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা কোনো কোনো নির্বাচনী উপকরণ প্রায় অর্ধেক পেয়েছি। আবার কোনো কোনো উপকরণ এখনো আসেনি। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী দ্রব্য সামগ্রী পেয়ে যাব।’

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, বর্তমানে দেশের ১০টি অঞ্চলের আওতায় ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২০১ জন। এবার গড়ে প্রতি ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র করার ভিত্তিতে মোট ৪২ হাজার ৬১৮টি ভোটকেন্দ্র প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সব মিলিয়ে ভোটকক্ষ হবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। আগামী ২০ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের বিষয়ে সম্প্রতি ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ পর্যন্ত ব্রাস সিল ও সিলগালা বাদে অন্যান্য উপকরণগুলো আমরা পাচ্ছি। সময়সীমা দেওয়া আছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উপকরণগুলো পাচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সকল দ্রব্য পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি