পরোক্ষ কর সঠিকভাবে আদায় হলে প্রত্যক্ষ করের অবদান বাড়বে
Published: 31st, May 2025 GMT
স্বল্প উন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়ও বাড়ছে। তাই প্রত্যক্ষ করের অবদান পরোক্ষ কর থেকে বেশি হওয়া দরকার। পরোক্ষ করের অনুপাত বাড়লে করভার অতিদরিদ্র থেকে ধনী পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। তাই পরোক্ষ কর সহনশীল মাত্রায় থাকা উচিত। বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের অনুপাত ৩৫: ৬৫।
আসন্ন বাজেট ২০২৫-২৬ এ নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো প্রত্যাশা করছি।
১.
উপকরণের সংজ্ঞা
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ২(১৮ক) ধারায় উপকরণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বর্তমানে ২(১৮ক) অনুযায়ী, কিছু পণ্য ও সেবাকে উপকরণ হিসেবে গণ্য করা হয় না, যার ফলে মূসক রেয়াত দাবি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর ফলে মূসকের ওপর মূসক ধার্য করা হয়। অতএব যদি কোনো মূসক নিবন্ধিত ব্যক্তি মূসক ফরম ৬ দশমিক ৩ ব্যবহার করে অন্য কোনো সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করে, তবে এটিকে উপকরণ হিসেবে গণ্য করা উচিত।
২. করযোগ্য সেবা আমদানি
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ২০ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাইরে থেকে করযোগ্য সেবা আমদানি করলে সেবার মূল্যের ওপর মূসক প্রদেয় হবে। এ ছাড়া ৪৬(১)(খ) ধারার অধীনে উপকরণ কর রেয়াতের জন্য সেবা গ্রহণকারীকে ২০ ধারা অনুযায়ী ঘোষণাপত্রে আমদানি করা সেবার জন্য প্রদেয় উৎপাদন কর আলাদাভাবে প্রদর্শন করতে হবে। তবে মূসক রিটার্নে আমদানি করা সেবার ওপর পরিশোধিত মূসক কীভাবে প্রদর্শন করতে হবে, সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, যা অপ্রয়োজনীয় আইনি বিরোধ তৈরি করে।
৩. মূসক ব্যবস্থার সামগ্রিক অটোমেশন ও মূসক চালান প্রক্রিয়া
বর্তমানে মূসক অনলাইন প্রায় সময় সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেকগুলো মডিউল এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। মূসক ব্যবস্থার সামগ্রিক অটোমেশনের জন্য মূসক অনলাইনব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা দরকার। পাশাপাশি মূসক ৬ দশমিক ৩ কর চালান ইস্যু করার প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় করা উচিত এবং ইলেকট্রনিক চালান (ই-ইনভয়েস বা ইলেকট্রনিক মূসক চালান) চালু করা উচিত।
৪. আমদানির ওপর অগ্রিম কর
মূসক আইনের ৩১ ধারার অধীনে শিল্প উপকরণ এবং কাঁচামাল আমদানির ওপর ৩ শতাংশ অগ্রিম কর ধীরে ধীরে কমানো যেতে পারে। কারণ, এটি শিল্প উৎপাদকদের কার্যকর মূলধন আটকে রাখে এবং তাদের খরচ বৃদ্ধি করে।
৫. উৎস মূসক কর্তন
মূসক অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহের ওপর উৎসে মূসক কাটা উচিত নয়। যদি কোনো উৎসে কর্তনকারী সত্তা অন্য কোনো উৎসে কর্তনকারী সত্তার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক ধার্য করার পর রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যয়িত মূসক ৬ দশমিক ৩ ফরম সরবরাহ করে, তবে উৎসে মূসক কাটা উচিত নয়।
৬. উৎসে মূসক জমা দেওয়া
বর্তমানে উৎসে কর্তিত ভ্যাটের অর্থ আলাদাভাবে জমা দিতে হয়, যা মূসক আইনের মূলনীতির পরিপন্থী। আইনে বলা হয়েছে যে প্রদেয় করের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সমন্বয় যোগ করে এবং ‘ইনপুট ট্যাক্স’–এর সঙ্গে হ্রাসকারী সমন্বয় বিয়োগ করে নিট প্রদেয় পরিমাণ জমা দিতে হবে। এই আইনি বিধান (ধারা ৪৫) অনুসরণ করা উচিত এবং এসআরও ২৪০–কে আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে হবে।
৭. আপিল জামানতের পরিমাণ
কমিশনার (আপিল), ট্রাইব্যুনাল এবং হাইকোর্টে আপিল দাখিলের জন্য বিরোধপূর্ণ ভ্যাটের যে পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হয়, ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আপিলকে কম ব্যয়বহুল করতে তা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা উচিত।
৮. মূসক ফরম
জটিল এবং তথ্যবহুল ক্রয় হিসাব (মূসক ৬ দশমিক ১) এবং বিক্রয় হিসাব (মূসক ৬ দশমিক ২) ফরমের পরিবর্তে সহজ এবং ব্যবহারযোগ্য নতুন মূসক ৬ দশমিক ১ এবং ৬ দশমিক ২ ফরম চালু করা উচিত। তবে নিবন্ধিত ব্যক্তি, যাঁরা আইএএস বা আইএফআরএস অনুযায়ী লেনদেন রেকর্ড এবং হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করতে নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তাঁদের আলাদা ৬ দশমিক ১, ৬ দশমিক ২ এবং ৬ দশমিক ২ দশমিক ১ ফরম বজায় রাখার প্রয়োজন হবে না।
৯. শুল্ক আইনের আধুনিকীকরণ
উৎপাদন, আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে পণ্য খালাস ও সরবরাহের সব শুল্ক ও কর আইন, বিধি এবং প্রক্রিয়া হালনাগাদ ও আধুনিকীকরণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শুল্ক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখে এটি করা উচিত।
১০. শুল্ক মূল্যায়ন
বিদ্যমান শুল্কমূল্য ও সর্বনিম্ন মূল্যের নিয়ম, যা অর্থ পাচারকে সহজতর করতে পারে, তা বাতিল করা উচিত। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শুল্ক মূল্যায়ন চুক্তির ওপর ভিত্তি করে ২০০০ সালের শুল্ক মূল্যায়ন বিধি প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর শুল্ক আইন ২০২৩-এর ২৭ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করা উচিত।
১১. শুল্ক ব্যবস্থার অটোমেশন
আমদানির ওপর শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ওপর মনোযোগ না দিয়ে শুল্ক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও অটোমেশনের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব আমদানি করা পণ্যের ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণের ওপর আমাদের জোর দেওয়া উচিত। এটি অর্জনের জন্য, বর্তমান অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) কর্মসূচিকে ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিয়মিত কর্মশালা পরিচালনার মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) মডিউলগুলোর পুরো বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনপ্রিয় করতে হবে।
আমরা প্রত্যেকে পরোক্ষ কর প্রদান করি। কিন্তু এই কর সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। আমদানি বা উৎপাদন পর্যায়ে আহরণ সম্ভব হলেও পরিবেশন ও খুচরা পর্যায়ে কর আদায় করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। অতীতে ইএফডি, এসডিসি ও ইএফডিএমএস চালু করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি; বরং ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসকের হার সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে যাঁ×রা আইন পরিপালন করে ব্যবসা করেন, তাঁদের ওপর করভার বৃদ্ধি পায়। যেহেতু মাঠপর্যায়ে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই। উৎপাদন পর্যায়ে ই-ইনভয়েসিং এবং পরবর্তী পর্যায়গুলোতে ক্যাশলেস সিস্টেম চালু করতে না পারলে লেনদেন শনাক্ত করা যাবে না। লেনদেন শনাক্ত করতে না পারলে সঠিক পরিমাণে মূসক আহরণ করা যাবে না এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যাবে না। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সঠিক মূসক হিসাবায়নের মাধ্যমে আয় এবং ব্যয়ের ভিত্তি তৈরি হয়। যদি এটি সঠিক হয়, আয়কর নির্ণয় সঠিক এবং সহজ হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ব যবস থ র ৬ দশম ক ২ শ ল ক আইন ক ষ কর র দশম ক ১ ন র ওপর র ওপর ম সরবর হ পর ম ণ পর য য় র জন য আইন র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সন্দেহে তরুণ গ্রেপ্তার, বোমা তৈরির উপকরণ জব্দ
শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার বিশাকুড়ি এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে পুলিশ এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে ওই তরুণের বাসা থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় আফতাব উদ্দিন ওরফে আবির (১৯) নামের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার তিনি শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশ জানায়, আফতাব উদ্দিনের জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা রয়েছে ও নাশকতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে বাড়ির সামনের সড়ক থেকে আটক করা হয়। এরপর ঢাকা থেকে রাতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল ডামুড্যায় আসে। তারা আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ওই বাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
পরের দিন রোববার ডামুড্যা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন বাদী হয়ে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আফতাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। আদালতের বিচারকের কাছে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাঁকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওই তরুণ অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত থেকে জঙ্গিবাদে স্বেচ্ছায় উদ্বুদ্ধ (সেলফ মোটিভেটেড) হওয়ার কথা পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সে কিছু একটা করবে, এমন চেষ্টা করছিল। তার আগেই আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। তবে আইএসের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তার দিকে (আইএস) সে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, এমন বলেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
ডামুড্যা থানা সূত্র জানায়, ডামুড্যা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিশাকুড়ি এলাকার বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন। তিনি ডামুড্যা উপজেলা সদরের পূর্ব ডামুড্যা সরকারি কলেজ থেকে চলতি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তাঁর বাবা আবদুল মালেক হাওলাদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে আফতাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আফতাব উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তাঁর বাড়ি তল্লাশি করলে বোমা তৈরির উপকরণ পাওয়া যায়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি কী বলেছেন, তা তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে বলা যাবে না।