রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে সংস্কারের রোডম্যাপ (পথনকশা) চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেছেন, সংস্কারের নথনকশা ও কাজে কোনো ধরনের জটিলতা থাকলে সেগুলো সমাধানে করণীয় নিয়ে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার নিয়ে অস্পষ্টতা দূর করতে হবে।

আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন সৈয়দ রেজাউল করীম। তিনি বলেছেন, গণ–অভ্যুত্থানের প্রধান চাওয়া রাষ্ট্রসংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগামীকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বৈঠক আয়োজন করেছে। এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামী আন্দোলনের আমির আরও বলেন, এই সরকার শুধু নির্বাচন আয়োজনের জন্য অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো কোনো সরকার না, বরং হাজারো মানুষের রক্তের ওপরে গঠিত একটি সরকার। যাদের প্রধান কাজ রাষ্ট্রের আমূল সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে ভবিতব্য সব স্বৈরাচারের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়া।

চরমোনাই পীর বলেন, সরকার গঠনের প্রায় ১০ মাস হতে চলল। সংস্কার নিয়ে কাজ হয়েছে ঠিক কিন্তু দৃশ্যমান, সুসংহত ও জোরালো কোনো সংস্কার চোখে পড়ছে না। অথচ এই সংস্কারের ওপরেই আগামীর বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। দেশে নির্বাচন নিয়ে কথা উঠছে। অথচ নির্বাচনপদ্ধতি, সংসদীয় আসন সংখ্যা ও সংসদের কক্ষ সংখ্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, জুলাইতে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে ভিন্নমতও তৈরি হচ্ছে। সামনে আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক কাজে দেরি হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংস্কারকে দুরূহ করে তুলতে পারে। সে জন্য আগামীকালের বৈঠকে জাতিকে সংস্কার নিয়ে একটি পরিষ্কার ও দ্বিধামুক্ত দিশা দিতেই হবে।

উল্লেখ্য, আগামীকাল সোমবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেলে এ আলোচনার উদ্বোধন করবেন কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। কমিশনের প্রথম দফার আলোচনা শুরু হয় ২০ মার্চ; শেষ হয় ১৯ মে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ঐকমত য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’

‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে
  • ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
  • ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘোষণাপত্রে নিশ্চিত হবে জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি’