ঈদুল আজহা মুসলিম সমাজে একটি সর্বজনীন উৎসব, যা ধর্মীয় তাৎপর্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রকাশ ঘটায়। মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়ে এই উৎসব সাধারণভাবে পালিত হলেও মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল—আন্দালুস, মাগরিব, পারস্য, ভারত—নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথার মাধ্যমে ঈদুল আজহাকে সমৃদ্ধ করেছে। এ অঞ্চলগুলোয় কোরবানির অনুষ্ঠান, পোশাক, খাবার এবং সামাজিক রীতিনীতি স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে একটি অনন্য রূপ লাভ করেছে।

ফেজ ও মারাকেশের মসজিদের আঙিনায় কোরবানির মাংস দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। এই প্রক্রিয়ায় ফকিহগণ উপস্থিত থাকতেন এবং তাকবির ধ্বনির মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হতো।

আন্দালুসিয়ায় ঈদুল আজহা

আন্দালুসিয়া (৯২-৮৯৭ হি.

/৭১১-১৪৯২ খ্রি.), যা আজকের স্পেনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, একসময় মুসলিম বিশ্বের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। ঈদুল আজহা এখানে সৌন্দর্য, পরিচ্ছন্নতা এবং সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে পালিত হতো।

ইবনে আজারি আল-মারাকুশি (মৃ. ৭১২ হি.) তাঁর আল-বায়ান আল-মুগরিব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আন্দালুসিয়ার পুরুষেরা ঈদের জন্য চুল ও দাড়িতে মেহেদি ব্যবহার করতেন। এই প্রথা ছিল সৌন্দর্যের পাশাপাশি নবীজির (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণের প্রকাশ।

আন্দালুসিয়ায় কোরবানির আয়োজন হতো ব্যাপকভাবে। ইবনে আবদুন আল-ইশবিলি (মৃ. ৫৩০ হি.) তাঁর রিসালা ফি আল-কাদা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কর্দোভা ও সেভিয়ার বাজারে ঈদের আগে পশুর হাট বসত, যেখানে স্বাস্থ্যবান দুম্বা ও গরু বিক্রি হতো।

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হতো—এক ভাগ পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়দের জন্য এবং এক ভাগ দরিদ্রদের জন্য। এই বিতরণ প্রক্রিয়া মালিকি ফকিহদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হতো, যাঁরা কোরবানির শরিয়াহ বিধান কঠোরভাবে পালন করতেন।

গ্রানাদার আমিররা ঈদুল আজহার ভোজে হরেক রকম খাবার পরিবেশন করতেন। থাকত কুসকুস, মাংসের তরকারি এবং মিষ্টান্ন। এই ভোজে খ্রিষ্টান ও ইহুদি প্রতিবেশীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হতো।আরও পড়ুনদশ দিন চুল-নখ না কাটার তাৎপর্য২৬ মে ২০২৫

আন্দালুসিয়ায় ঈদের ভোজ ছিল বিখ্যাত। ইবনে সাঈদ আল-মাগরিবি (মৃ. ৬৮৫ হি.) বর্ণনা করেছেন, গ্রানাদার আমিররা ঈদুল আজহার ভোজে হরেক রকম খাবার পরিবেশন করতেন, যার মধ্যে কুসকুস, মাংসের তরকারি এবং মিষ্টান্ন হিসেবে আলফাজোর (মধু ও বাদামের মিষ্টি) ছিল। এই ভোজে খ্রিষ্টান ও ইহুদি প্রতিবেশীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হতো।

মাগরিবে ঈদ: মালিকি ফকিহদের প্রভাব

মাগরিব—অর্থাৎ বর্তমান মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া—মুসলিম বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যেখানে মালিকি ফিকহ ঈদুল আজহার উৎসবকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ইবনে আবি দিনার (মৃ. ১০৭০ হি.) তাঁর আল-মুয়ানিস ফি আখবার ইফরিকিয়া গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, মাগরিবের মানুষ ঈদের আগে পশু কেনায় বিশেষ গুরুত্ব দিত।

মালিকি ফকিহগণ কোরবানির পশুর স্বাস্থ্য, বয়স এবং জবাইয়ের পদ্ধতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট ফতোয়া জারি করতেন। ইমাম মালিক (মৃ. ১৭৯ হি.) তাঁর আল-মুওয়াত্তা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কোরবানির পশুকে জবাইয়ের সময় যত্ন নিতে হবে, যাতে তা অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না পায়।

কোরবানির পশুকে জবাইয়ের সময় যত্ন নিতে হবে, যাতে তা অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না পায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ ল আজহ র ক রব ন র কর ছ ন র জন য গ রন থ করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
  • কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
  • কারও কোনো অপরাধ নাই
  • বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব
  • আজ থেকে বুসান উৎসব, নানাভাবে রয়েছে বাংলাদেশ
  • ‎সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব : ডিসি
  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • ঘুম থেকে অনন্ত ঘুমে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড
  • ২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
  • শেষ হলো সপ্তম যোসেফাইট ম্যাথ ম্যানিয়া ২০২৫