গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
Published: 14th, June 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন একটি কারখানার শ্রমিকেরা। এ সময় তাঁরা কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর করেন।
শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বেড়াইদেরচালা গ্রামে ডিজাইনটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪৩ জন শ্রমিককে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ জানিয়েছে, কারখানার মূল ফটকে তালা লাগিয়ে ভেতরে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে মারধর করেন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও শ্রীপুর থানা-পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত হন। আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ফটকের তালা ভেঙে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে কর্মকর্তাদের উদ্ধার করেন। এ সময় সেখান থেকে ৪৩ জন শ্রমিককে আটক করা হয়।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানিয়েছেন, কারখানার এক কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবি ছিল শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। সেই দাবি মেনে ওই কর্মকর্তাকে অপসারণ করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তখন কারখানার কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা যাবে না বলেও দাবি ছিল। কিন্তু ঈদের পর ছুটি কাটিয়ে শ্রমিকেরা কারখানায় কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন, অনেকের চাকরি নেই। কাউকে না জানিয়ে অনেক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এর প্রতিবাদে দুপুরে কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেন।
কারখানার আরেক শ্রমিক বলেন, শ্রমিকদের একটি অংশ উত্তেজিত হয়ে কারখানায় ভাঙচুর চালায়। কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে তাঁদের ওপর চড়াও হয়। অতি উৎসাহী কিছু শ্রমিক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
কারখানার তত্ত্বাবধায়ক হামজা মিয়া বলেন, সকাল আটটা থেকে কর্মকর্তা ও শ্রমিকেরা কারখানায় কাজে যোগদান করেন। আটটার পরপরই শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার মূল ফটক তালাবদ্ধ করে দেন এবং কর্মকর্তাদের মারধর শুরু করেন। এতে কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসাইন, হেলাল উদ্দিন, আরিফুর রহমান, জলিলসহ ১০ থেকে ১৫ জন আহত হন। সকাল ১০টার কিছুক্ষণ পর পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এলেও শ্রমিকেরা কারখানার ফটক খোলেননি। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন কারখানার ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে কর্মকর্তাদের উদ্ধার করেন।
কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মো.
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শ্রমিকেরা সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে মারধর করেন। তাঁরা তালা ভেঙে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধার করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় কারখানার পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র র কর মকর ত রক ষ ক র কর ত দ র র কর ন ম রধর এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা
ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”
এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি।
গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।
কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”
ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”
এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”
ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”
এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”
জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”
বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”
ঢাকা/কেয়া/রফিক