ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি শহরের একটি এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপ। শনিবার দিবাগত রাতে চালানো ইরানের হামলায় ইসরায়েলের বাত ইয়াম শহরের আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আবাসিক ব্লক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সেখানে শিশুসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় দুইশত মানুষ এবং নিখোঁজ রয়েছেন চারজন।  

দেশটির উদ্ধারকারী সংস্থা জানিয়েছে, বাত ইয়ামে ৮  বছর বয়সী এক মেয়ে, ১০ বছর বয়সী এক ছেলে এবং ১৮ বছরের তরুণসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া কমপক্ষে ২০০ জন আহত হয়েছেন। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের 

আইডিএফ জানিয়েছে, চারজন নিখোঁজ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এদিকে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ভোরে একগুচ্ছ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের স্থানীয় সময় রাত আড়াইটার দিকে এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাত ইয়াম শহর। মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এখানকার একটি আবাসিক ব্লক। বড় বড় দালান ভেঙে এখন সেখানে দেখা যাচ্ছে সব ইটের টুকরো। এক জায়গায় পড়ে আছে বাচ্চাদের খেলনা।

রিবাত ভাকনিন নামের বাসিন্দা জানান, তার বাবা নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি। 

তিনি বলেন, আমার ভাই বাবাকে নিতে ঘরের ভেতরে ঢুকেছিল। তারপরই হঠাৎ বিস্ফোরণ হলো। বড় একটা ধাক্কায় আমার ভাই ছিটকে পড়লো। কিন্তু আমার বাবাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

৫০ বছর বয়সী নারী গিমেল বলেন, তিনি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জয়া নামের পোষা কুকুরকে খুঁজছেন।  

‘আমি বাড়িতে একা ছিলাম। সাইরেনের শব্দ শুনে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ভাবলাম। কিন্তু আমি প্রথমে দৌড়ে বাথরুমে গেলাম। তখনই আমি দুইটি বোমার শব্দ শুনতে পেলাম। আমার কাছে মনে হলো সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বাইরে বেরিয়ে জানতে পারলাম চারজন নারী নিহত হয়েছেন। আর তখনই আমার মাথার ওপর পুরো সিলিং ভেঙে পড়ল’, বলেন ওয়াইনেটকে। 

তিনি বলেন,  আমার মনে হলো- আমি মারা যাচ্ছি। 

‘যখন বুঝতে পারলাম আমি জীবিত তখন আমার বাবা-মার কথা চিন্তা করলাম। তারাও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি। মনে হলো-আমরা সবাই জীবন্ত কবরের মধ্যে আছি’, বলেন ওয়াইনেটকে। 

বারুচ বলেন, ‘আমি আমার জীবনেও এমন ঘটনা দেখিনি।’

‘আমি যুদ্ধে ছিলাম। ছয় দিনের যুদ্ধের সময় আমি গোলান হাইটসে ছিলাম। তখন বিমানগুলো আমার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। আমি তখনকার বিমানের ক্ষমতা দেখেছি। কিন্তু এখনকার মতো পরিস্থিতি আমি কখনও দেখিনি। আমি বোমার ক্ষমতায় পুরোপুরি ভীত’, বলেন তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ