সব ছেড়ে টেস্ট ফরম্যাট আকড়ে ধরেছেন মুশফিকুর রহিম। ফর্মহীন যাত্রায় শততম টেস্ট দুরের ভাবনা মনে হচ্ছিল। আগের ১৩ ইনিংসে ছিল না ফিফটি। ক্যারিয়ারের ৯৭তম টেস্টে এসে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে মুশফিক বুঝিয়ে দিলেন ফুরিয়ে যাননি তিনি। তার আগে ঠান্ডা মাথায় নির্ভার ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি করেছেন নাজমুল শান্তও। গলে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে দল। সেখান থেকে ৯০ ওভারে ২৯২ রান তুলে কর্তৃত্বময় প্রথমদিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।
গলে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে শান্ত ‘স্পিন বিভীষিকার’ গল্পের সঙ্গে প্রথম দুই-তিনদিন ভালো ব্যাটিং হওয়ার বার্তাও দিয়েছিলেন। টস জেতায় ফ্রন্টফুটে ছিল সফরকারীরা। তবে শূন্য রানে ওপেনার এনামুল হক বিজয় ফিরে দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। পরেই সাজঘরে ফিরে যান সাদমান ইসলাম। তিনি ১৪ রান করেন। মুমিনুল হক সেট হয়ে ৩৩ বলে চারটি চারের শটে ২৯ রান করে ফিরলে প্রথম সেশনে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
সেখান থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে দলের একশ’ রান পার করেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। এরপর জুটি নিয়ে যান শতরানে। শান্ত-মুশফিক ফিফটি তুলে নেন। সেখান থেকে ২০ ইনিংস পর টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠতম সেঞ্চুরির দেখা পান শান্ত। বাধ ভাঙা উদযাপনও করেন। তাদের জুটি ছাড়ায় দুইশ’ রান। পরে ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিকুর রহিম।
আরও স্বস্তি হচ্ছে শান্ত ও মুশফিক উইকেট না হারিয়ে গল টেস্টের প্রথমদিন শেষ করেছেন। তারা গড়েছেন অপরাজিত ২৪৭ রানের জুটি। টেস্টে চতুর্থ উইকেটে যা বাংলাদেশের সর্বাধিক রানের জুটি। এর আগে ২০১৮ সালে মুশফিক ও মুমিনুল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে ২৬৬ রান করেছিলেন। শান্ত-মুশফিকের সামনে আছে ওই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ।
শান্ত সেঞ্চুরি তুলে নিতে খেলেন ঠিক ২০৩ বল। দিন শেষ করেছেন ২৬০ বল খেলে ১৩৬ রান করে। তার ব্যাট থেকে ১৪টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা এসেছে। মুশফিকও সময় নিয়ে, দেখে-শুনে ১৭৬ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তিনি ১৮৬ বলে ১০৫ রান করে দিন শেষ করেছেন। পাঁচ বাউন্ডারিতে মাত্র ২০ রান তিনি বাউন্ডারি থেকে করেছেন।
গলে প্রথমদিন বাংলাদেশের তিন উইকেটের দুটি নিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী রহস্য স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েকে। সব্যসাচী বোলার তিনি। দুই হাতে বল করতে পারলেও মূলত বাঁ-হাতি স্পিনার। সাদমান ও মুমিনুলকে তুলে নেওয়া এই স্পিনার ৩২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১২৪ রান দিয়েছেন। শুরুতে বাংলাদেশ শিবিরে ধাক্কা দেওয়া আসিথা ফার্নান্দো ১৪ ওভারে ৫১ রান দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার স্পিন আক্রমণের নেতা প্রবাথ জয়সুরিয়া ২৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৮৬ রান দিয়ে প্রথমদিন উইকেট শূন্য থেকেছেন। মিরাজ একাদশে না থাকায় বাংলাদেশ দুই স্পিনার তাইজুল ও নাঈম এবং দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানাকে নিয়ে খেলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গল ট স ট দ ন শ ষ কর ছ র ন কর কর ছ ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।