ইসরায়েল-ইরান সংঘাত দীর্ঘ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ইরানের ভয়ংকর পাল্টা জবাব সত্ত্বেও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে যাচ্ছেন, ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর প্রয়োজন ছিল। ইসরায়েলি জনসাধারণের কাছে বেশ কিছু যুক্তি প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি সরকার কেন বিনা প্ররোচনায় একতরফা আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার প্রকৃত কারণ কেউই ব্যাখ্যা করেনি।

ইসরায়েলি সরকার দাবি করে, এই হামলাটি ছিল একটি ‘প্রতিরোধমূলক’ অভিযান। এর উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পক্ষ থেকে পারমাণবিক বোমা তৈরির তাৎক্ষণিক অনিবার্য হুমকি মোকাবিলা করা। এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলের হামলা নিঃসন্দেহে দীর্ঘ সময় ধরে সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। একটি প্রতিরোধমূলক আক্রমণে আত্মরক্ষার একটি উপাদান থাকতে হবে, যা পরবর্তী সময়ে জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয়। এ ধরনের কোনো জরুরি অবস্থার উদ্ভব ঘটেছে বলে মনে হয় না। এ ছাড়াও ইসরায়েল ১২ জুন প্রকাশিত আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিবেদনে ২০০০ সালের গোড়ার দিকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের জন্য ইরানের প্রতি নিন্দা জানানো এ ধরনের জরুরি অবস্থা বলে মনে করছে বলে মনে হচ্ছে। আইএইএ মনে হচ্ছে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করছে। প্রতিবেদনে এমন কিছু ছিল না, যা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ইতোমধ্যে জানত না।

ইসরায়েলি সরকার ‘প্রতিরোধমূলক’ হামলার ধারণার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক সত্ত্বেও বলেছে, অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘শিরশ্ছেদ’ ঘটানো।

পণ্ডিত ও নীতিনির্ধারকরা সাধারণত একমত, ইসরায়েলের এই কর্মসূচি ধ্বংস করার ক্ষমতা নেই, বিশেষ করে যদি তারা নিজে থেকে এ ধরনের হামলা চালানোর চেষ্টা করে।
এ অভিযানের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, ইসরায়েল কখনোই ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড ধ্বংস করার ইচ্ছা পোষণ করেনি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি থেকে শুরু করে গ্যাসক্ষেত্র এবং তেল ডিপো পর্যন্ত বিভিন্ন সামরিক ও সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে। তারা ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের ওপরেও একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি, যদিও ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেনি। কয়েক মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় শামখানিকে একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদের মতো তাঁর হত্যাকাণ্ডও ইসরায়েলি কৌশলের প্রতিফলন। ইসরায়েল প্রায়ই নির্দিষ্ট কিছু লোককে ‘নির্মূল’ করার চেষ্টা করে এই আশায়, এসব ব্যক্তির মৃত্যু তাদের নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে ফেলবে। শামখানির মৃত্যুকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা নষ্ট করার চেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যাই হোক না কেন, হত্যাকাণ্ডগুলো ইরানের সরকারি কর্মকর্তাদের জীবনযাপনের সর্বস্তরে ইসরায়েলের শক্তি প্রদর্শনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিকল্পনার অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘শিরশ্ছেদ’ নয়।

তৃতীয় কারণ হলো, তেহরানে ‘শাসন পরিবর্তন’ শুরু করতে ইসরায়েল মন স্থির করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘ইরানের গর্বিত জনগণকে’ ‘একটি দুষ্ট ও দমনকারী শাসন থেকে মুক্তি’র জন্য দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে স্পষ্টভাবে এ কথাটি বলেছিলেন।

সব ইরানি ইসরায়েলি হামলার জন্য অপেক্ষা করছে– এই ধারণা ইরানের রাজনীতির চালিকাশক্তি সম্পর্কে গভীর অজ্ঞতা প্রদর্শন করে। যদিও অনেক ইরানি নিঃসন্দেহে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরোধিতা করে, তবুও রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন সব ইরানি সব দিক থেকে ‘দেশপ্রেমিক’। বাইরের উপাদানগুলো দ্বারা তাদের দেশের ওপর অন্যদের এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার যে কোনো চেষ্টা থেকে ইরানের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সমর্থন করার জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েলি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর নেতানিয়াহুর স্বঘোষিত আপসহীন সমালোচক হিসেবে অসংখ্য ইসরায়েলি যেমন নজরে পড়েন এবং এখন সরকারকে সোচ্চারভাবে সমর্থন করছেন, যেখানে সবচেয়ে জোরালোভাবে রয়েছেন সংসদীয় ‘বিরোধী দলের’ সদস্যরা। একইভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অসংখ্য বিরোধী এখন ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সরকারের সমর্থনে দেশটির পতাকার পেছনে সমাবেশ করছেন।

নিঃসন্দেহে নেতানিয়াহু বছরের পর বছর ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন; অপেক্ষায় ছিলেন সঠিক সময়ের। এবারের সময়টি এসেছে শুক্রবার। ইসরায়েলের পেছনে বিশ্বকে একত্র করার জন্য এটি একটি মরিয়া চেষ্টা, ঠিক যেমন ইসরায়েল সৃষ্টির পর থেকে এটি যে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি ভোগ করেছে– তা অস্বীকার করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ওরি গোল্ডবার্গ: বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জাতীয় নিরাপত্তা-বিষয়ক পরামর্শদাতা; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র জন য ইসর য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ